ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী, নেই মাথাগোঁজার ঠাঁই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৪ মে ২০১৬

উপকূলের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী, নেই মাথাগোঁজার ঠাঁই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় লাখ লাখ লোক পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে হাজার হাজার পরিবার। দুর্গত এলাকায় সংকট দেখা দিয়েছে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর। বিশুদ্ধ পানির সংকটে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। বাঁধ ভেঙ্গে সর্বক্ষণিক জোয়ারের পানিতে ভাসছে মানুষ। নোনা পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, পর্যাপ্ত ত্রাণ পর্যন্ত পৌঁছানো যাচ্ছে না। সববচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধের। এছাড়া রোয়ানু প্রভাবে কোটি কোটি টাকার উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সংযোগ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। পর্যটন এলাকা বলে খ্যাত কুয়াকাটার সৈকত পয়েন্টে ৩০ ফুট বিলীন হয়ে গেছে সাগরবক্ষে। ঝাউবাগান ইকো পার্কসহ বনাঞ্চলের শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে। জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতারা জানান, রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলীয রক্ষাবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ভোলা সদরের রাজাপুর ইলিশাসহ ৪ উপজেলায় পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। দুই বেলা প্রায় ১২ ঘণ্টায় জোয়ারের পানিতে ভাসছে মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণসামগী না পেয়ে এলাকার লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ জেলার সবচেয়ে বেশির ক্ষতি হয়েছে তজুমদ্দিনে। এখানে বহু পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত নেই। নোয়াখালীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দ্বীপ এলাকা হাতিয়ায়। এখানে নিম্নাঞ্চলের ২০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। রোয়ানুর আঘাতে সহায় সম্বল হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব। নতুনভাবে নির্মিত বেরিবাঁধের সম্পূর্ণ সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বরগুনায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪০ গ্রামের লাখ লাখ মানুষ। জোয়ারের পানিতে বিধ্বস্ত এ জেলায় এখন বেরিবাঁধ দিয়ে পানি ঢকছে। ক্ষেতের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কৃষকরা। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। এলাকায় রোয়ানুর প্রভাবে ক্ষতিক্ষতি হয়েছে ৫০ লাখ টাকার বেশি। মহেশখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে দ্বীপের নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হাজার পরিবার। পানিবন্দী হাজার হাজার পরিবারে এখন হাহাকার অবস্থা। দুর্গত এলাকায় সংকট দেখা দিয়েছে এলাকার শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী। লক্ষ্মীপুরের চারটি উপজেলার ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফসলী জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৩শ’ একর আউশ ধান এবং ২শ’ একর জামির গ্রীষ্মকালীন শাকসবজিরসহ প্রায় আড়াই কোটি টাকার ফলষ নষ্ট হয়েছে। ভেসে গেছে অর্ধাশতাধিক মাছের ঘের। পটুয়াখালীর বাউফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এলাকায় প্রায় দুই তৃতীংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে মরিচ, তিল বাদাম, শাকসবজি। ফসলেরএ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কক্সবাজারের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুতুবদিয়ায়। এলাকায় প্রায় শতকরা আশিভাগ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রোয়ানুন আঘাতে ২০ হাজার পরিবার গৃহীন হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূল জুড়ে চলছে হাহাকার। পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে অর্ধলাখ মানুষ। ঘরবাড়ি ও আশ্রয় হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। গত শনিবার দুপুরে দেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে বায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। এর তোড়ে ঝরে যায় ২৪ প্রাণ। শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলে আঘাত হানে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাব মতে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দেশের উপকূলের বিভিন্ন স্থানে ৬০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ নিয়ে বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ সবচেয়ে বেশি ছিল পতেঙ্গায় ১২৮ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাস ছিল ২০০ কিলোমিটার। তবে এর বাতাসের প্রান্তসীমা প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। ফলে দেশের প্রায় সব জেলাতেই ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি বয়ে গেছে। আর এ ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় সবচাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে বেড়িবাঁধের। বেড়িবাঁধে ভেঙ্গেই মূলত লাখ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এছাড়া বাতাসের প্রচ- গতিবেগে ঝড় বয়ে যাওয়ার কারণে বাড়িঘর বিধ্বস্ত, গাছপালা উপড়ে পড়া, ফসলে ক্ষতি হওয়াসহ মাছের ঘের ভেসে যায়। ফলে এলাকায় লাখ লাখ লোক এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দুষছেন বেড়িবাঁধগুলো দুর্বল হওয়াকেই। তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ দুর্বল হওয়ার কারণে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ ঠিক থাকলে ফসল, গবাদি পশু, খামার ঘরবাড়ি ও মানুষের জীবনের অপচয় হতো না। রবিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভায় উল্লেখ করেন আমাদের বেড়িবাঁধগুলো ছিল ৬ দশমিক ৫ মিটার। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসের সময় সাগরের পৃষ্ঠদেশের উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৫ মিটার। ফলে বাঁধগুলো জলোচ্ছ্বাসের ধকল সামলে উঠতে পারেনি। ভোলা ॥ রোয়ানুর আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে জেলার ইলিশার রাজাপুরের কয়েক শত কাঁচা পাকা ঘরবাড়ি। মেঘনার ফুঁসে ওঠা জোয়ারের পানির চাপে ইলিশা কালুপুর রাজাপুর সড়কের এক কিলোমিটার সড়ক বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওই জনপদের। এক দিকে পানি অন্য দিকে বিধ্বস্ত সড়ক, জনগণের যোগাযোগ একেবারে বন্ধ। ঘরে নেই দাঁড়ানোর জায়গা। সকাল-বিকেল ২ বেলা জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকা প্রায় ২০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। জোয়ার এলেই তারা নৌকা কিংবা উঁচু স্থানে মাচা করে অথবা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। পানির কারণে তারাও রান্না করতে পারছে না। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের জীবন। পুকুর খাল বিল টিউবওয়েল ডুবে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন ও মনপুরা উপজেলার বাঁধভাঙ্গা মানুষের একই অবস্থা বিরাজ করছে। ভোলা জেলা প্রশাসক মোহা. সেলিম উদ্দিন জানান, রোয়ানুর আঘাতে জেলা প্রায় ৪ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫শ’ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চাল, শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। বরগুনা ॥ রোয়ানুর আঘাতে দুটি নদীপাড়ের তিনটি স্থানে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় সাত কিলোমিটার। জোয়ারের পানিতে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ৪০ গ্রাম। নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন ফসল। জোয়ারের পানি প্রচ- আঘাতে বিষখালী নদীপাড়ে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া এলাকার কালিবাড়ি বেড়িবাঁধ, বামনা উপজেলার রামনা এলাকা ও পায়রা নদী পারের তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। বাঁধ সংলগ্ন এলাকাবাসী প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে দুর্যোগ আতঙ্কে। পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ। রবি শস্যের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে কৃষকরা। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বেড়িবাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চলে বসবাসরত পরিবারগুলোর রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করায় তাদের উনুনে হাঁড়ি বসেনি। এতে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বরগুনার বিভিন্ন পয়েন্টের ৬.৭৮ কি.মি বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লক্ষ্মীপুর ॥ রামগতি উপজেলার চর আলগী, চর গজারিয়া, মৌলভীর চর, কমলনগরের চর কালকিনি, চর ফলকন ও সদরের চর রমণী মোহন ও রায়পুরে ৫টিসহ মোট ১০টি গ্রামে এখন পানিবন্দী হয়ে আছে ৫ শতাধিক পরিবার। উড়তি চীনা বাদাম, আউশ বীজতলা, মরিচ এবং শাক সবজিসহ শত শত একর ফসলী জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় গরু ও মুরগির খামারসহ ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক শ’ গাছ পালা উপড়ে গেছে। ভেসে গেছে অর্ধ শতাধিক মাছের ঘের। এ সব এলাকার মানুষ বর্তমানে গবাদি পশু, হাঁস, মুরগি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে এখনও কোন ত্রাণ পৌঁছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৩শ’ একর জমির আউশ ধান ও ২শ’ একর জমির গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি নষ্ট হয়ে গেছে সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং ত্রিশ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার ॥ ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কুতুবদিয়ায়। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে এ দ্বীপের প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ঝড় জলোচ্ছ্বাসের পানিতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। পানিতে বিলীন হয়ে গেছে চিংড়িঘের, ফসল ও লবণ মাঠ। ঘূর্ণিঝড়পরবর্তী সময়ে খাবার ও পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রায় শতকরা আশি ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা। ভেঙ্গে গেছে কুতুবদিয়া রক্ষা বেড়িবাঁধ। কুতুবদিয়ায় হাজার হাজার মানুষের বসতগৃহ এখনও পানির নিচে। বাড়ি-ঘরের নারী-শিশু উঁচু এলাকায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেও তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্থানীয় প্রশাসন আশ্রয় নেয়া মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। শনিবার ঝড়ো হাওয়া ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে উত্তর ধুরং, আলী আকবর ডেইল, কৈয়ারবিল ও দক্ষিণ ধুরংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকার বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। উত্তর ধুরংয়ের ৮০ ভাগ ও আলী আকবর ডেইল এলাকায় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ মানুষের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার মোট ৪১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে মাত্র যে ৫-৬ কিলোমিটার বাঁধে সিসি ব্লক ছিল, তাও ল-ভ- হয়ে গেছে। ফলে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি ও জনগণের সহায় সম্পদ বিনষ্ট হয়ে গেছে। ২৫হাজার মে. টন খাদ্যশস্য ও দেড় লাখ নগদ টাকা এবং শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কাঁচা বাড়ি, চিংড়ি ঘের, পানের বরজসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কুতুবজোম, কালারমারছড়া, শাপলাপুরের জেমঘাট, বারিয়াপাড়া, ছোট মহেশখালীর উম্বনিয়া পাড়া, জালিয়াপাড়া, আহমদিয়া কাঁটা, ঠাকুরতলা, তেলীপাড়া, পৌরসভার চরপাড়া, নিচের রাখাইন পাড়া। ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি এলাকার বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে এখনও। সদরের উপকূলীয় পোকখালীর গোমাতলীতে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১ হাজার বাড়িঘর। ভেঙ্গে গেছে উপকূলের ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। চকরিয়ায়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এলাকায় চিংড়ি জোনের প্রায় ১ লাখ একর চিংড়ি জমি পানির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। বাঁশখালী ॥ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তা-বে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা ল-ভ- হয়ে গেছে। পুরো উপকূল জুড়ে চলছে হাহাকার। এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে ঘরবাড়ি ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ। ১০ হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত, ১২ হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিঃস্ব হয়েছে ৪১ হাজার পরিবার। চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠ ও দেশীয় মাছের প্রজেক্ট বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকার। হাতিয়া ॥ রোয়ানুর আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়। উপজেলার নলচিরা, চরঈশ্বর, সুখচর ও তমরুদ্দিন ইউনিয়নে প্রবল জোয়ারের স্রোতে প্রায় ৭ কিলোমিটার বেডিবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ১০টি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়। এতে নিম্নাঞ্চলের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। পাশাপাশি ঝড়ো বাতাস ও প্রবল জোয়ারে ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এতে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র চরাঞ্চলবাসী। বাউফল ॥ প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী ও মধ্যবর্তী তার ইউনিয়নের চর ওয়াডেল, চর ব্যারেট, চর মিয়াজান, চর রায় সাহেব, চর কিসমত, চর নিমদী, চর ডিয়ারা, কচুয়া এলাকার প্রায় তিন শ‘’ বাড়ি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও আড়াই শতাধিক বাড়ি-ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।
×