ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেফারিকে দুষলেন ঢাকা আবাহনী অধিনায়ক আরিফুল, আক্ষেপে পুড়লেন সত্যজিত দাস রূপু

আবাহনীর হাসি, আবাহনীর কান্না

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৮ মে ২০১৬

আবাহনীর হাসি, আবাহনীর কান্না

জাহিদুল আলম জয় ॥ অদ্ভুত দৃশ্য। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে হাসি-কান্নার স্রোত! উল্লাসে ফেটে পড়ে আবাহনী, কান্নার সাগরে আবাহনী। এ যেন আকাশী-হলুদের সংমিশ্রণে সুখ-দুঃখের মহামিলন। অল-আবাহনী ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিল, চূড়ান্ত মহারণ শেষে হাসি-কান্নার মিশ্রণ ঘটবে। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ’বড়ভাই’ ঢাকা আবাহনীকে ২-০ গোলে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। এই জয়ে ঢাকার ক্লাবটির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সাফল্য অব্যাহত রাখলো বন্দর নগরীর দল। দীর্ঘদিনের হাহাকার ঘোচানোর স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছিল অমলেশ সেনের দল। সেই সঙ্গে লক্ষ্য ছিল প্রতিশোধেরও। গত বছর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে বন্দর নগরীর দলটির কাছে গ্রুপ পর্বে হেরেছিল ঢাকার পরাশক্তিরা। এবার আরও একবার ছোট ভাইদের কাছে হারতে হলো ঢাকা আবাহনীকে। এবার স্বপ্ন আর ঐতিহ্যের লড়াইয়ে জয় হয়েছে স্বপ্নের। এই জয়ে গত দুই বছরের তাক লাগানো সাফল্য ধরে রাখলো জাহিদ হোসেন, সোহেল রানারা। ২০১৫ সালে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা কাটানোর কাছাকাছি এসেও ব্যর্থ হয়েছেন আরিফুল, ওয়ালি, হেমন্তরা। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও হাসি-কান্নার আবহ। চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনীর লিওনেল ম্যাচ শেষে বলেন, আমরা যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছি। সবাই অনেক পরিশ্রম করেছে। টুর্নামেন্টের সেরা হাইতির এ ফুটবলার আরও বলেন, শেখ রাসেলকে সেমিতে হারানোর পর দলের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। যার ফসল এ শিরোপা। ঢাকা আবাহনীর অধিনায়ক আরিফুল ইসলাম ম্যাচ হারের জন্য ভাগ্য আর রেফারিকে দুষেছেন। তিনি বলেন, প্রথম গোলটি পরিষ্কার অফসাইড ছিল। ওই গোলটিই আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আমাদের মিডফিল্ড কিছুই করতে পারেনি। মিডফিল্ড থেকে সাপোর্ট না পেলে কিছুই করা যায় না। ঘরোয়া ফুটবলে প্রথম শিরোপা জিতে রূপকথার জন্ম দিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। অনেকটা ইংলিশ ক্লাব লিচেস্টার সিটির মতো। ইংলিশ ক্লাবটি তাদের ১৩২ বছরের ইতিহাসে সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জিতেছে। চিটাগাং আবাহনীও অনেকটা এমন কীর্তি গড়েছে। কাল বিরল এক কীর্তির সাক্ষী হওয়ার সুযোগ ছিল ঢাকা আবাহনী ম্যানেজার সত্যজিত দাস রূপুর। খেলোয়াড় ও ম্যানেজার হিসেবে স্বাধীনতা কাপে শিরোপা জয়ের অংশীদার হওয়ার হাতছানি ছিল তার সামনে। কিন্তু দল ফাইনালে হারায় এ গৌরবে ভাসতে পারেননি তিনি। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ঢাকা মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা আবাহনী। ১৬ বছর আগে ওই ম্যাচে আকাশী-হলুদ জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলেছিলেন রূপু। এবার ম্যানেজার হিসেবে শোকেসে শিরোপা তোলার সুযোগ থাকলেও তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে তার দল। ঢাকার আকাশ কাল দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। দুপুরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হয়। দুই আবাহনীর সুখ-দুঃখ মিলেমিশে একাকার করার জন্যই হয়তো মেঘ-বৃষ্টির এই লুকোচুরি খেলা। এসব ছাপিয়ে জয় হয়েছে ফুটবলেরই। ঢাকা আর বন্দর নগরীর আবাহনীর ফুটবলাররা নিজেদের সামর্থ্যরে সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন। এক পক্ষে জয়ের হাসি, আরেক পক্ষে হারের বেদনা থাকলেও মাঠে উপস্থিত দর্শকরা জমজমাট দ্বৈরথ উপভোগ করেছেন। মৌসুমের প্রথম শিরোপা জিতে আগামীতে আরও ভাল করার মন্ত্র পেয়েছে বন্দর নগরীর আবাহনী। রাজধানীর আবাহনী তীরে এসে তরী ডোবালেও হতাশ নয়। ভবিষ্যতে আরও ভাল করার মন্ত্র পেয়ে গেছে তারা। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মামুনুল ইসলামসহ নির্ভরযোগ্য পাঁচ ফুটবলারকে ছাড়া শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে হয় অতিথি আবাহনীকে। এরপরও নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘরোয়া ট্রফি জিতে ইতিহাস গড়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। মোহামেডানের অন্ধ ভক্ত হলেও অল-আবাহনী ফাইনাল দেখতে গ্যালারিতে দেখা যায় সাদা-কালো শিবিরের সমর্থকদের। দুই আবাহনীর সমর্থকদের ভিড়ে তাদের উল্লাসও দৃষ্টি কেড়েছে সবার। এটিকে ফুটবলের জন্য শুভলক্ষণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মহাপাগলের ব্যানারে মোহামেডানের একঝাঁক সমর্থক দুই আবাহনীর দ্বৈরথের পুরোটা সময়ই ফুটবলারদের উৎসাহিত করেন।
×