ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা

গুল আসক্ত ৩০ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৮ মে ২০১৬

গুল আসক্ত ৩০ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু

এ রহমান মুকুল, পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়সহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলায় প্রায় ৩০ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু গুল নামক এক তামাকজাত পণ্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে। নতুন করে আসক্তের সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। গুল সেবনের পর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা না জানার কারণে অন্যের দেখাদেখি নারী এবং শিশুরাও গুলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য গুল নামক বিষ সেবন করে অজান্তেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে এসব মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, বিড়ি ও সিগারেটের চেয়ে গুল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। কারণ বিড়ি ও সিগারেটের ধোয়ার মাধ্যমে নিকোটিনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে থাকে। আর গুল সেবনের কারণে এসব ক্ষতিকর পদার্থ সরাসরি রক্তে গিয়ে মিশে যায়। এতে নার্ভের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যারা নিয়মিত গুল ব্যবহার করে তারা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মুখে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ২০০৫ সালের (সংশোধিত ২০০৯) ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনের ১০ ধারায় সকল প্রকার তামাকজাত পণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কতাবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ সিগারেট কোম্পানি সিগারেটের প্যাকেটের দু’পাশে অর্ধেক জায়গাজুড়ে বীভৎস ছবি দিলেও বিড়ি এবং গুলের কৌটার লেবেলে এখনও বীভৎস ছবি সংবলিত সতর্কবাণী দেয়া হয়নি। সিগারেটের প্যাকেটে বীভৎস ক্যান্সারের ছবি দেয়ার পর ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হয়ে উঠছে। আর গুলসহ ধোঁয়াবিহীন অন্যান্য তামাক জাত পণ্যে এখনও এই ছবি সংযোজন না করায় মানুষজন এর কুফল না ভেবে যথেচ্ছভাবে এগুলো সেবন করে আসছে। দেশের মধ্যে বেশি তামাক উৎপাদন হয় রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলাসহ কয়েকটি জেলায়। বিভিন্ন নামীদামী সিগারেট কোম্পানিগুলো সেখানে তামাক পাতা কিনে গুদামজাত করছে। এসব তামাক পাতা দিয়ে জর্দা এবং তামাকের ডাটাসহ উচ্ছৃষ্ট অংশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুল। ফেলে দেয়া ডাটার সঙ্গে নিম্নমানের কিছু তামাক মিশ্রণ করে তৈরি করা হয় গুল। এসব কারণে অধিকাংশ বিড়ি কোম্পানিই গুল তৈরি করে থাকে। আবার নীলফামারীর সৈয়দপুরে রয়েছে অনেক গুল তৈরির কারখানা। তারা বিভিন্ন বিড়ি কোম্পানির কাছ থেকে তামাকের ডাটা কিনে কম দামের তামাক মিশিয়ে তা গুঁড়া করে গুল তৈরি করছে। গুল তৈরি করে তারা বিভিন্ন নামে তা বাজারে ছাড়ছে। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সৈয়দপুরের তৈরি গুলের চাহিদাও বেশি। চাহিদা বেশি থাকায় গুলের দামও বাড়ে। দুই টাকা দামের গুল একটু বড় কৌটায় ভরে এখন বিক্রয় হচ্ছে ৫ টাকায়। গুল ব্যবহারকারীরা জানিয়েছে, শুরুতে গুল দিয়ে দাঁত মাজা শুরু হয়। ধীরে ধীরে গুল আসক্তি শুরু হয়। শেষমেশ এমন পর্যায়ে পৌঁছে যা নেশা হিসেবে নেয়া হয়। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়টি হলো, পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখা দেখি ওই পরিবারের নারী ও শিশুরাও ক্রমে গুলাসক্ত হয়ে পড়ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা কেউ না জানার কারণে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন গুলাসক্ত। মাদকের মতোই খুবই দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে গুলাসক্তের সংখ্যা। এ ব্যাপারে কথা বললে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ এসআই এম রাজিউল করিম বলেন, তামাকের মধ্যে যত ক্ষতিকর পদার্থ এর সব আছে গুলের মধ্যে। বিড়ি ও সিগারেটের ধোঁয়ার মাধ্যমে নিকোটিনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে প্রবেশ করায় এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। গুল সরাসরি মুখে সেবন করায় সকল প্রকার ক্ষতিকর পদার্থ শরীরের ভেতরে গিয়ে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। যা খুব দ্রুত নার্ভের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। গুল সেবনের কারণে মুখে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। অনেকে আছেন যারা সারাক্ষণ মুখে গুল রেখে দেন। যে স্থানে নিয়মিত গুল লাগানো থাকে ধীরে ধীরে সেই স্থানটিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এই ক্ষত স্থানটি ক্যান্সারে রূপ নেয় বলে তিনি জানান।
×