ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাটকীয় জয়ে ফাইনালে ঊষা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ মে ২০১৬

নাটকীয় জয়ে ফাইনালে ঊষা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ৭০ মিনিটের ম্যাচে ৬৯ মিনিটই তিনি টার্ফে ছিলেন পুরোপুরি নিষ্প্রভ। দলও পিছিয়ে। ম্যাচ শেষ হতে আর মাত্র বাকি ১০ সেকেন্ড। ঠিক সেই মুহূর্তেই যে কাজটি করা উচিত, সেটিই করে ফেললেন পুস্কর ক্ষিসা মিমো। চোখ ধাঁধানো গোল করে সমতায় ফেরালেন দলকে। হলেন সমতা ফেরানোর নায়ক। পরের কাহিনীতেও তিনি নায়ক। তবে এবার জয়ের নায়ক। পেনাল্টি শূট আউটে দলের হয়ে জয়সূচক গোলটিই এােল তার স্টিক থেকে। শুক্রবার মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘মার্সেল ক্লাব কাপ হকি’ প্রথম সেমিফাইনালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডকে ৭-৫ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ঊষা ক্রীড়া চক্র। নাটকীয় এই ম্যাচে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে উভয় দল ৩-৩ গোলে ড্র করে। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী কোন অতিরিক্ত সময়ের খেলা না হয়ে সরাসরি টাইব্রেকার (হকির ভাষায় শূট আউট) অনুষ্ঠিত হয়। আর তাতে মোহামেডানকে ৪-২ গোলে হারায় ঊষা ক্রীড়া চক্র। সর্বোপরি ৭-৫ গোলে তারা ম্যাচ জেতে (নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের গোল এবং টাইব্রেকারের গোল একসঙ্গে যোগ করা হয়)। শূট আউটের নিয়ম আগের চেয়ে ভিন্ন। আগের মতো এক স্ট্রোকে গোল নয়, আগের চেয়ে আরও পিছিয়ে থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বল নিয়ে আগুয়ান গোলরক্ষককে কাটিয়ে গোল করতে হবে ৮ সেকেন্ডের মধ্যে। সময় পার হয়ে গেলে সেটি বাতিল শূট আউট বলে গণ্য হবে। ঊষার হয়ে গোল করেন অধিনায়ক কৃষ্ণ কুমার দাস, ফাইজাল বিন শারি, নাইম উদ্দিন এবং পুস্কর ক্ষিসা মিমো। গোল করতে ব্যর্থ হন মাহবুব হোসেন। তার হিট মোহামেডান গোলরক্ষক জাহিদ হোসেনের পায়ে লেগে প্রতিহত হয় এবং সময়ও শেষ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে মোহামেডানের গোলদাতা হলেন তাসাওয়ার আব্বাস এবং রিজওয়ান জুনিয়র। গোল করতে ব্যর্থ হন কামরুজ্জামান রানা এবং ওমর ভুট্টো। আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড মুখোমুখি হবে ঢাকা মেরিনার ইয়াংসের। আকাশে ছিল প্রচুর চিলের আনাগোনা, তেমনি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও ছিল প্রচুর দর্শকের আনাগোনা। পুরো ম্যাচেই লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। উভয় দলের খেলোয়াড়রাই শক্তি প্রয়োগ করে খেলতে গিয়ে ম্যাচে যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়ান। এতে খেলা কয়েক মিনিট যেমন বন্ধ ছিল, তেমনি তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে হাতাহাতিতেও লিপ্ত হয়েছেন। ওমানের আম্পায়ার ম্যাচের শৃঙ্খলা ফেরাতে দুই দলের একাধিক খেলোয়াড়কে দেখিয়েছেন কার্ড। মোহামেডানের নিয়মিত অধিনায়ক ও তারকা ফরোয়ার্ড রাসেল মাহমুদ জিমি ইনজুরির কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারেননি। তবে ম্যাচে তাকে ডাগ আউটের পাশে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের বিভিন্ন পরামর্শ ও উৎসাহিত করতে দেখা গেছে। ম্যাচের আগেরদিন বৃহস্পতিবার তার জন্মদিন ছিল। আশা করেছিলেন এ ম্যাচে মোহামেডান জিতলে এটাই হবে তার জন্মদিনের পুরস্কার। কিন্তু তার সতীর্থরা সেই উপহারটা দিতে পারলেন না তাকে! ফলে আক্ষেপে পুড়তে হয় জিমিকে। ধীরলয়ে একে অপরের কৌশলকে যাচাই বাছাইয়ের মানসিকতা নিয়ে খেলা শুরু করে দু’দল। বিশেষ করে মোহামেডানের চার বিদেশী আসার পর তাদের মাঝমাঠ ও ডিফেন্সে যে ঘাটতি ছিল সেটা নিয়েই তাদের ভুগতে হয় বেশি। তাছাড়া ছিল জিমির হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতি তো ছিলই। ৯ মিনিটে ঊষা প্রথম পেনাল্টি কর্নার (পিসি) পায়। তা থেকে গোল করেন অধিনায়ক কৃষ্ণ কুমার। পুশটি করেন তিনিই। সারোয়ারের স্টপের পর মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড জুলহাইরি বিন হাশিম স্কুপ না করে কব্জির মোচড়ে বল পাস করে দেন কৃষ্ণকে। আলতো ছোঁয়ায় বল পোস্টে পাঠান কৃষ্ণা (১-০)। ৩১ মিনিটে একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে কামরুজ্জামান রানার বক্সের ওপর থেকে দেয়া পাসে রিভার্স সুইপে সমতা আনেন মোহামেডানের তাসাওয়ার আব্বাস (১-১)। বিরতির পাঁচ মিনিট পর (৪০ মিনিট) সালমান হোসেনের চমৎকার স্টিক ওয়ার্কে মোহামেডানকে এগিয়ে দেন আবারও সেই তাসাওয়ার আব্বাস। ডানপ্রান্ত দিয়ে দ্রুতগতিতে এক হাতে স্টিক নিয়ে বল কৌনিকভাবে পাস দেন বক্সের মাঝামাঝি দাঁড়ানো আব্বাসকে। ফাঁকা পোস্টে অনায়াসে বল ঢুকাতে কোন সমস্যা হয়নি এই পাকিস্তানী ফরোয়ার্ডের (২-১)। ৪৫ মিনিটে আবার খেলায় ফিরে আসে ঊষা। পর পর তিনটি পিসির শেষটিতে কৃষ্ণ কুমারের পুশ সারোয়ারের স্টপের পর কোনাকুনি হিটে গোল করেন মালয়েশিয়ান ডিফেন্ডার শফিক জোলান (২-২)। ৬৮ মিনিটে তাসাওয়ার আব্বাসের পাসে বক্সের বাঁ প্রান্তে জায়গা করে নেন পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড ভুট্টো। প্রায় অরক্ষিতই ছিলেন তিনি। ফলে জোরের ওপর নেয়া তার রিভার্স হিটটি গোলেই পরিণত হয় (৩-২)। দল যখন হারের দ্বারপ্রান্তে, তখনই ঝলসে ওঠেন মিমো। ইসমাইল বিন আবুর ডানপ্রান্ত থেকে নেয়া পাওয়ার হিটে ফ্লিক করে নাটকীয়ভাবে ম্যাচে সমতা আনেন মিমো (৩-৩)। এর ১০ সেকে- পরেই খেলা শেষ হয়ে যায়। তারপরের ঘটনা তো শুরুতেই বলা হয়েছে।
×