ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন কোন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস দিতে অপারগ পেট্রোবাংলা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৭ মে ২০১৬

নতুন কোন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস দিতে অপারগ পেট্রোবাংলা

রশিদ মামুন ॥ নতুন আর কোন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে পেট্রোবাংলা। এখনও চাহিদার তুলনায় অন্তত দৈনিক ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করলে জ্বালানি খাত বিশৃঙ্খল হয়ে উঠবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল নতুন করে আর কোন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হবে না। অদক্ষ বিদ্যুত কেন্দ্রের বদলে কোন কোম্পানি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করলে সেখানে গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এজন্য ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে নতুন করে আর কোন গ্যাস সংযোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েও তা রাখতে পারেনি সরকার। বছরের শুরুর দিকে ব্যবসায়ীদের চাপে নতুন করে ২৭টি ক্যাপটিভে বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাস সংযোগ দেয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে ওইসব গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের কিছু করার ছিল না। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, মেঘনাঘাটে সামিট পাওয়ার একটি দ্বৈত জ্বালানির কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেখানে গ্যাস দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। বিদ্যুত কেন্দ্রটি এখন ডিজেল দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। দেশের মোট গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের মাত্র ১৬ শতাংশ কম্বাইন্ড সাইকেলে উৎপাদন করে। বাকি সব গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রই অদক্ষ। এর বাইরে আরও অন্তত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে যারও উৎপাদন দক্ষতা নেই। সাধারণত সিম্পল সাইকেলে যে পরিমাণ গ্যাসে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা যায় তার দ্বিগুণ বিদ্যুত উৎপাদন হয় কম্বাইন্ড সাইকেলে একই জ্বালানি খরচে। এজন্য সরকার কোন কোন বিদ্যুত কেন্দ্রকে রিপাওয়ারিং করে সিম্পল সাইকেল থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি ঘোড়াশালের একটি কেন্দ্রকে রিপাওয়ারিং করার জন্য চুক্তি সই হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, স্বাভাবিক সময়ে গ্যাস চালিত অন্তত ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হয়। সারকারখানা বন্ধ রাখলে গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ৩০০ মেগাওয়াটের মতো বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সারকারখানা সারা বছর বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। এরপরও গ্রীষ্ম এবং রমজানে সারকারখানা বন্ধ রেখে বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। পেট্রোবাংলা বলছে এর আগে গ্যাস চাহিদার স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির বাইরে বিদ্যুত বিভাগের চাপে অতিরিক্ত ১৯টি বিদ্যুত কেন্দ্রে তারা গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে আরও অন্তত ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুত এসব কেন্দ্রেই গ্যাস দেয়া যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান। গত সপ্তাহে ৫০ মেগাওয়াটের একটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য বিদ্যুত বিভাগের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে তারা নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রে আর গ্যাস দিতে পারবে না। চলতি বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুত উৎপাদনে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা দিয়েছিল তা কোন সময়ই পূরণ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। পিডিবির চাহিদার অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস সরবরাহ নিয়েই বিদ্যুত সঙ্কট সামাল দিতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার তরফ থেকে এক চিঠিতে সরকারকে জানানো হয়েছে সুপারিশ করা নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয়। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মোঃ ইসতিয়াক আহম্মদ মন্ত্রণালয়কে জানান, বর্তমানে দেশে গ্রাহকের সর্বাধিক গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যার বিপরীতে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক গড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি রয়েছে। যদিও বেসরকারী হিসেবে এই সঙ্কট ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। গ্যাসের সঙ্কটের কারণে দেশে বিদ্যমান গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র এবং সার কারখানাগুলো একই সঙ্গে চালু রাখা যাচ্ছে না। এছাড়া গ্যাসের চলমান চাহিদা বিবেচনা করে অনুমান করা যায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয়কে আরও জানান এক সময় আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কিছু বেসরকারী ভাড়ায় চালিত এবং ক্ষুদ্র বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন বিদ্যুত পরিস্থিতি অনেকটা আশাব্যঞ্জক। পেট্রোবাংলা বলছে শীঘ্রই আরও কয়েকটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। আগামী পাঁচ বছরে স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রায় সব কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র। ফলে সীমিত গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতার মধ্যে অধিক জ্বালানি দক্ষতাসম্পন্ন বৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহে প্রাধান্য দেয়া উচিত। চিঠিতে বলা হয় জ্বালানি দক্ষতা কম থাকার কারণে এর মধ্যে ক্ষুদ্র বিদ্যুত উৎপাদনকারী ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
×