ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আব্বু, তুমি কি জানো

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৬ মে ২০১৬

আব্বু, তুমি কি জানো

আব্বু, তুমি কি জানো, এখন আমাকে দেখলে অনেকেই ভয় পায়। আমাদের পরিবারের কাউকে দেখলেই অনেকে ভয় পেয়ে যায়। দোয়া মাহফিলের দাওয়াত দিতে গিয়ে দেখলাম অনেকে দরজাটাও খুলতে ভয় পাচ্ছে। তোমার সযতনে সাজানো ঐ মসজিদে এখন আগের থেকে অনেক কম লোক নামাজ পড়তে আসে। কিন্তু তুমি কি জানো এর বাইরেও আরও কত কি ঘটে যাচ্ছে? তুমি মরো নাই, তুমি মরতে পারো না। তোমার জন্য আজ রোদ, তাপ, ক্ষুধা ভুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, সাধারণ মানুষ পথে নেমেছে। তোমাকে যে বিকারগ্রস্ত উন্মাদগুলো নির্মমভাবে মেরেছে, তাদের কঠোর শাস্তি শুধু তোমার পরিবার নয়, সবাই মনে প্রাণে চায়। মাঝে কিছু বিচ্ছিন্ন ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা তো থাকবেই। তাতে কি হয়েছে, কিছুই থেমে নেই, থেমে থাকবে না, তোমার আদর্শের দ্যুতিকে থামিয়ে রাখা যাবে না। তুমি সবাইকে ফেলে চলে গেলে। তারপর কত প্রশ্ন, কিছু সুন্দর কিছু অবান্তর, কত ঘটনা আর তার আবার কতশত মোড়, কত লেখালেখি, তার আবার কত মূল্যায়ন কত অবমূল্যায়ন। কিন্তু তোমার সততার সৌন্দর্য ফিরে ফিরে আসবেই। কোন অন্যায় আখ্যা স্থান পাবে না। তুমি কথা বলতে না পারলেও তোমার ছবি কথা বলবেই। যে কোন বিবেকবান মানুষই তোমার ছবি দেখে, ওই সুন্দর হাসি দেখে তোমাকে চিনতে একটুও ভুল করবে না। যে ঘুড়ির লাটাই আজ সঙ্গোপনে পড়ে আছে, সে ঘুড়ির প্রতিযোগিতা হবেই, যেটা তুমি করতে চেয়েছিলে। মানুষ লেখালেখি করবেই, তোমার সেতারের সুরের মূর্ছনায় সবাই বিমোহিত হবে। আজ তুমি নেই, তবু তুমি আছো। তোমার দেয়া ক্রিকেটের সরঞ্জামগুলো নিয়ে ছোট শিশুরা খলখল হাসিতে মাঠময় দৌড়াবে, অনেকেই হয়ত তোমার আদর্শ নিজ নিজ পেশাজীবনে কাজে লাগাবে। এটাই বা কম কিসে? গ্রামের বাড়ির তোমার প্রিয় টুপিগুলো পরে গরিব মুসল্লিরা দৌড়াবে প্রার্থনায়, জ্ঞানচর্চায় কতটা নিজেকে নিমজ্জিত করা যায় সবাই দেখবে, এভাবেই বেঁচে থাকবে তুমি। মানুষ জানবে, বিশ্বাসী হয়েও সংস্কৃতিমনা হওয়া যায়। আমাদের বিবর্ণ জীবনে রং আর ফিরবে কিনা জানিনা। হত্যাকারীদের সঠিক বিচার হলে তবেই হয়ত কিছুটা ফিরবে। কোন অভাব কখনও রাখোনি। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো একটা দিনের জন্যও পড়াওনি বটে, তবে আমাদের দিন এর মধ্যেই অনেক ভালো কেটে গেছে। তবু তোমার অভাব আজীবন আমাদের তাড়া করে ফিরবে। ধুলায় লুটানো রক্তে ভেজা তোমার ঐ করুণ দৃশ্য মনে হয় শুধু আমরা না, শত শত মানুষ কোনও দিনও ভুলতে পারবে না। আমি চাই না, তোমার মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা হোক, রাজনীতি হোক, কাদা ছোড়াছুড়ি হোক। চাই না কোন ভুল তথ্য তোমার নামের পাশে লাগুক। কোন বিশেষণ লাগিয়ে নয়, চাই একজন মানুষের বিনা অপরাধে খুন হওয়ার বিচার হোক। তুমি বেঁচে আছো, বেঁচে থাকবে- সে প্রমাণ তুমি দিয়ে গেলে বাবা। জীবিত অবস্থায় হয়ত আমরা তোমার মূল্যায়ন করতে পারিনি, এখন আমরা সবাই করব। রেজাউল করিম সিদ্দিকী-কে মেরে ফেলা যায় না, মেরে ফেলা যায় শুধু তাঁর শরীরটাকে। মরে গিয়ে আরও বুঝি বেশি করে বাঁচা হলো তোমার। “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।” রিজওয়ানা হাসিন শতভী রেজাউল করিম সিদ্দিকীর কন্যা
×