ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাল চতুর্থ দফায় ৭২৫ ইউপি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ মে ২০১৬

কাল চতুর্থ দফায় ৭২৫ ইউপি নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে আগামীকাল শনিবার। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে এ দফায় ৭২৫ ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল শুরু করেছে। এছাড়া বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের যান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের প্রচার। সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। কমিশন জানিয়েছে, ভোট শুরুর অন্তত আধাঘণ্টা আগে প্রিসাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের খালি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেখিয়ে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করবেন। একই সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে যত ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয়েছে তা সবার উপস্থিতিতে প্রদর্শন করে যথানিয়মে ভোট গ্রহণ শুরু করতে হবে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু করার কথা বলা হলেও এ দফায় আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ দুই গ্রুপের মধ্যেই মূলত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রায় অর্ধেকের বেশি ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মী তাদের মদদ দিচ্ছেন। আগের তিন দফায় নির্বাচনের যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগই হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তিন দফায় ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ঘটেছে মূলত সরকারী দলের মধ্যে। বৃহস্পতিবার সুজনের এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান গ্রুপের মধ্যে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৭১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২৯ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার মধ্যে ২১টিই আওয়ামী লীগ ও দলটির বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ঘটেছে। এ অবস্থায় অনেক প্রার্থী ইতোমধ্যে চতুর্থ দফায় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ইসিতে প্রার্থীদের একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। সেখানে তারা কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, সহিংসতা ও ভোটকারচুপি ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, বিএনপির ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন সরকারদলীয় প্রার্থী পুলিশ ব্যবহার করে তাদের সমর্থিত নেতাকর্মীদের হয়রানি করছেন। বহিরাগতদের এলাকায় প্রবেশ করিয়ে সাধারণ ভোটারদের মনে ভীতির সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকি পুলিশও তাদের বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। কোন কারণ ছাড়াই থানায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। মাদক মামলায় আসামি করার ভয় পর্যন্ত দেখানো হচ্ছে বিরোধী প্রার্থীদের। এসব অভিযোগে নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। তবে কমিশন বলছে, চতুর্থ দফায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আগের তিন দফার চেয়ে আলাদা কোন ব্যবস্থা এ দফায় নেয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, ভোটার সিলমোহরসহ সব নির্বাচনী সরঞ্জাম আজ রাতের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট সব ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সব ধরনের প্রচার, মিছিল মিটিং, পথসভায়। এছাড়া ইসির অনুমোদিত যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানচলাচলের ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচনে দায়িত্বে নিয়োজিত কোন কর্মকর্তার বিরুদ্বে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আশা করছে আগের তিন দফা ইউপি নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও চতুর্থ দফায় তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। নির্বাচনে সংঘাত সংঘর্ষ হলেই ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-কেও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কারও বিরুদ্ধে ছাড় দেয়ার বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×