ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভেঙ্গেছে গাছপালা

কালবৈশাখীর ঝড়োবৃষ্টির পর স্বস্তিতে ঢাকাবাসী

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৩ মে ২০১৬

কালবৈশাখীর ঝড়োবৃষ্টির পর স্বস্তিতে ঢাকাবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলায় রবিবার ঝড়োহাওয়াসহ মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সারাদেশে বৃষ্টি হয়েছে ৪৬৩ মিলিমিটার। ঢাকায় রেকর্ড হয় ১০ মিলিমিটার। এক মাসের বেশি সময় ধরে বয়ে চলা তাপপ্রবাহ থেকে সাময়িক রেহাই পায় রাজধানীবাসী। নেমে আসে স্বস্তি। তবে প্রবল বাতাসে রাজধানীর বেশ কিছু সংখ্যক গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। ধুলোময় হয়ে ওঠে নগরী। ফুটপাথের দোকানগুলোর পলিথিনের ছাউনি উড়ে যায়। সোমবারও অধিকাংশ সময় রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তীব্র গরম অনুভূত হয়নি। সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হ্রাস পায়। রেকর্ড তাপপ্রবাহ বয়ে চলা সোমবার তীব্র থেকে মৃদুতে নেমে এসেছে। গত সাত বছরেও এমন দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহের অভিজ্ঞতা পায়নি দেশবাসী। প্রখর রোদ ও গরমে অতিষ্ঠ মানুষ রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বৃষ্টিতে স্বস্তি খুঁজে পায় দেশবাসী। রবিবারের বৃষ্টিতেই সোমবারও হ্রাস পায় তাপমাত্রা। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাতক্ষীরায় ৩৬.৮ ও সর্বনিম্ন শ্রীমঙ্গলে ১৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৩ ও ২১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় ১০ মিলিমিটার, ফরিদপুরে ১৩ মিমি, গোপালগঞ্জে ১২ মিমি, নেত্রকোনায় ২ মিমি, চট্টগ্রামে ২৬ মিমি, সন্দ্বীপে ১৯ মিমি, সীতাকু-ে ৩৩ মিমি, রাঙ্গামাটিতে ৩৯ মিমি, কুমিল্লায় ৪৯ মিমি, চাঁদপুরে ৭০ মিমি, মাইজদীকোর্টে ২৪ মিমি, ফেনীতে ৩৪ মিমি, হাতিয়ায় ৩ মিমি, কক্সবাজারে ২৩ মিমি, কুতুদিয়ায় ১১ মিমি, সিলেটে ১ মিমি, শ্রীমঙ্গলে ৩১ মিমি, রাজারহাটে ১৪ মিমি, খুলনায় ১২ মিমি, যশোরে ১২ মিমি, বরিশালে ৫ মিমি, পটুয়াখালীতে ৭ মিমি, খেপুপাড়ায় ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা, মংলা, সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সূত্র জানায়, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা অধিক বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২ থেকে ৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী এবং দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় হতে পারে। এ মাসেও থাকবে তাপপ্রবাহ। দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ২ থেকে তিনটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২ থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে অতি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা আছে। মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ২৯৭ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৩১০ মিমি, সিলেটে ৫১০ মিমি, রাজশাহীতে ১৮৮ মিমি, রংপুরে ২৫০ মিমি, খুলনায় ১৬৯ মিমি ও বরিশালে ২৬০ মিলিমিটার থাকতে পারে। রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীতে অনুভূত হয় তীব্র গরম। সূর্যের তীব্র রশ্মি ব্যাহত করে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিকেল চারটার পর পাল্টে যায় রাজধানীর আবহাওয়া। আকাশে মেঘের আনাগোনা বেড়ে যায়। বইতে শুরু করে হালকা শীতল বাতাস। সন্ধ্যা সাতটার পর হঠাৎ করে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। নেমে আসে অন্ধকার এবং শুরু হয় মেঘের গর্জন। কিছুক্ষণ পরই নেমে আসে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি। বৃষ্টি নয়, পথচারীদের দুর্ভোগে ফেলে আকস্মিক ঝড়। রাজধানীর আকাশে উড়তে থাকে ধুলো। প্রস্তুত ছিলেন না কেউ। শুরু হয়ে যায় পথচারীদের দৌড়াদৌড়ি। নিকটস্থ দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীবাহী বাহনের অপেক্ষা করতে থাকেন লোকজন। সকালের বৃষ্টিহীন পরিবেশ দেখে কেউ ছাতা নিয়ে বের হয়নি। সামনে পেয়েও বৃষ্টির কারণে তাঁদের কেউ কেউ বাসে উঠতে পারেননি। পৌনে একঘণ্টা ধরে দুর্ভোগে পড়লেও শীতল বাতাসে প্রশান্তি পায় নগরবাসী।
×