ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণসঙ্গীতে শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা

ও দুনিয়ার মজদুর... এক মিছিলে দাঁড়া/ এক সাথে দে সাড়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১ মে ২০১৬

ও দুনিয়ার মজদুর... এক মিছিলে দাঁড়া/ এক সাথে দে সাড়া

মোরসালিন মিজান ॥ লাঞ্ছিত নিপীড়িত জনতার জয়/শোষিত মানুষের একতার জয়...। লাঞ্ছিত নিপীড়িতদের, শোষিতদের জয় ঘোষণার বিশেষ দিবস আজ। আজ রবিবার ১ মে। মহান মে দিবস। সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। তবে বরাবরের মতোই একদিন আগে শনিবার অনুষ্ঠানমালার সূচনা করে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে আলোচনা গণসঙ্গীত কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন গণসঙ্গীতের শিল্পীরা। উন্মুক্ত স্থানে বিকেলে শুরু হয় অনুষ্ঠান। দলীয় সঙ্গীতে শিল্পীরা শ্রমিকের অধিকারের কথা বলেন। এর পর আলোচনা পর্ব। এ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। পরিষদের সভাপতি শিল্পী ফকির আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ। শ্রমিকের অধিকার নিয়ে সব সময় সরব কামাল লোহানী বলেন, শ্রমিকদের অবদান কখনও অস্বীকার করা যাবে না। এমনকি বাংলাদেশ সৃষ্টির আন্দোলনে জোরালোভাবে তারা ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার নিশ্চিত করা যায়নি। বর্তমান শ্রমিক নেতাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। বলেন, এখন কোন আন্দোলনেই শ্রমিক নেতার মৃত্যু হয় না। মৃত্যু হয় সাধারণ শ্রমিকের! সাধারণ শ্রমিকেরাও নানা ভাগে বিভক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সময় আমরা গাইতামÑ ও দুনিয়ার মজদুর ভাইসব/আয় এক মিছিলে দাঁড়া/এই নয়া জামানার ডাক এসেছে/ এক সাথে দে সাড়া...। আজ শ্রমিকরা এক মিছিলে নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে এক মিছিলে কেন আমরা থাকতে পারি না? শ্রমিকের আজ কেন এত হা হুতাশ? আদমজীসহ বিভিন্ন কারখানা বন্ধের সমালোচনা করেন কামাল লোহানী। শ্রমিকের বেতন অন্য পেশার মানুষের চেয়ে এখনও অনেক কম জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ তো এভাবে এগোতে পারে না। গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর বলেন, শোষণহীন সমাজ গড়তে হলে সমাজতন্ত্রের পতাকাকে উর্ধে তুলে ধরতে হবে। শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব ছাড়া জাতীয় মুক্তি সম্ভব নয়। ১ মে অধিকার আদায়ের দিন। গণসঙ্গীতে আমরা শ্রমিকের অধিকারের কথা বলি। এই সঙ্গীত শোষকের বিরুদ্ধে। গণসঙ্গীতের আলাদা বৈশিষ্ট্য। আলাদা অহঙ্কার। সেই বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত যত সংগ্রাম, গণসঙ্গীত শিল্পীরা সক্রিয় থেকেছেন। স্বাধীন দেশে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামেও গণসঙ্গীতের ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল। ঠিক এ মুহূর্তে তনু হত্যাসহ, নানা ইস্যুতে প্রতিবাদী গান নিয়ে মাঠে আছে গণসঙ্গীত। এভাবে সকল অন্যায় অসাম্যের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীতে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা কেবল পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্র গড়তে চাইনি। ‘চাঁদ তারা’ খচিত পতাকার পরিবর্তে লাল সবুজের পতাকা উড়াতে চাইনি। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা চেয়েছি, যেখানে সকল নাগরিক সমঅধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। শোষণমুক্ত সমাজ চেয়েছিলাম আমরা। সকলের অধিকার নিশ্চিত করতেই সংবিধানে সমাজতন্ত্র রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে সব টাকা ছিল ২২ পরিবারের হাতে। সে সময় মৌলিক মানবাধিকার ছিল না। অর্থনৈতিক মুক্তি ছিল না। এ কারণেই বাংলাদেশের প্রয়োজন হয়েছিল। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকও অধিকার পাচ্ছেন। তবে পূর্ণ অধিকার এখনও নিশ্চিত হয়নি। সাংস্কৃতিক পর্বে গানে কবিতায় শ্রমিকের কথা হয়। শিল্পীরা গেয়ে যানÑ বুক বেঁধে লড়তে হবে ভাঙতে হবে দুঃখ শিকল...। দিবসটির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তারা গানÑ আঠারোশ ছিয়াশির পহেলা মে/ শিকাগোর হে মার্কেটে...। এভাবে নানা গানে শ্রমিক শ্রেণীর জীবন ও অধিকারের কথা বলেন শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে ছিল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী। সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা, দৃষ্টি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, স্ব-ভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, আনন্দন, পঞ্চভাস্কর, ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সংগীত একাডেমির শিল্পীরা। ছিল সুর-তাল, ভিন্ন ধারা ও কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের পরিবেশনা। কবিতায় মে দিবসের কথা বলেন রফিকুল ইসলাম, নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও ঝর্ণা সরকার। গোটা আয়োজন থেকে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়। শোষনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নতুন শপথ নেন গণসঙ্গীত শিল্পীরা।
×