ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাতীয় নাট্যশালায় নৃত্যের ছন্দে শুরু হলো নৃত্যাঞ্চল উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

জাতীয় নাট্যশালায় নৃত্যের ছন্দে শুরু হলো নৃত্যাঞ্চল উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। উপচেপড়া দর্শনার্থীর ভিড়ে তিলধারণের জায়গা ছিল না বুধবার সন্ধ্যায়। তার মধ্যে সামান্য জায়গা করে শিশুশিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তাতা থৈ থৈ’ গানের সঙ্গে পরিবেশন করছে দলীয় নৃত্য। এরপর রবীন্দ্রনাথের ‘আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে’ গানের সঙ্গে অপূর্ব নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্চলের শিশুশিল্পীরা। নৃত্যাঞ্চল উৎসবের শুরুটা ছিল এমন। এরপর একাডেমির প্রধান মিলনায়তনে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। শুরুতে প্রায় আড়াই শ’ শিশু, কিশোর-কিশোরীরা মঞ্চজুড়ে নৃত্যের ছন্দে করে গুরু বন্দনা। ‘গুরু ব্রহ্মা, গুরু বিষ্ণু, গুরুদেব মহেশ্বর’ গানের সঙ্গে তারা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে। কত্থক নাচের তালে, লয়ে, মুদ্রার সমন্বিত শৈল্পিক সৌন্দর্যে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ইন্দ্রজাল ছড়ান শিল্পীরা। নৃত্য পটিয়সীদের নান্দনিকতার আলো মঞ্চ থেকে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র মিলনায়তনে। ধ্রুপদী নাচের শুদ্ধতায় অবগাহন করে নৃত্যানুরাগী দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তন্ময় হয়ে উপভোগ করেন পুরো আয়োজন। শাস্ত্রীয় নাচের শুদ্ধতায় নিজেদের শুদ্ধ করার প্রতিযোগিতা নাচের অনুরাগীদের মাঝে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিল। নন্দন তত্ত্বের জটিল ও কঠিন এই শৈল্পিকতা অনুষ্ঠানস্থলে আগত শিল্পরসিক দর্শকদের শিল্পের তৃষ্ণা যেন পূর্ণ করেছিল কানায় কানায়। নৃত্যাঞ্চল আয়োজিত এ উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু লীলা স্যামসন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। মঞ্চে স্থাপিত দুটি ভাস্কর্যের দুই পায়ে দুটি ঘুঙুর পরিয়ে যৌথভাবে তিন দিনের এ উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু ও ভরতনাট্যমের শিল্পী লীলা স্যামসন ও বিশেষ অতিথি চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। উৎসবের উদ্বোধকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লীলা স্যামসন বলেন, শিবলী ও নীপার নৃত্যাঞ্চলের এমন শৈল্পিক নৃত্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। এমন একটি আয়োজনে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অসাধারণ একটি নৃত্যসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হলো। নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীদের এমন শৈল্পিক পরিবেশনায় আমি অনেক বেশি আনন্দিত। উদ্বোধনী সন্ধ্যা সাজানো হয় কত্থক নাচ দিয়ে। এতে নৃত্যাঞ্চলের প্রায় দুই শতাধিক শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে নৃত্যাঞ্চল সম্মাননা জানানো হয় নৃত্যগুরু রাহিজা খানম ঝুনুকে। আজ বৃহস্পতিবার উৎসবের দ্বিতীয় আসরে নৃত্যাঞ্চল পরিবেশন করবে ‘আলী বাবা ও চল্লিশ চোর’ এবং কাল শেষ দিন আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করবে নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীরা। তনয় হত্যার প্রতিবাদে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিবাদ সমাবেশ ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা চত্বরে বুধবার বিকেলে নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেনÑ নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, ড. ইনামুল হক, মান্নান হীরা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ প্রমুখ। এছাড়াও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নিহত তনয়ের মামা আতিকুর রহমান। তিনি তার বক্তৃতায় কান্না প্লাবিত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাগ্নে আমার কলিজার টুকরা। সে আমার কোলে-কাঁধে চড়ে বড় হয়েছে। আমাদের পরিবারের মতোই তার মধ্যে ধর্মীয় চর্চা ছিল। তবু তাকে খুন হতে হলো। আমি এ হত্যার বিচার দাবি করি। তিনি বলেন, যার কাঁধে চড়ে আমার একদিন কবরে যাওয়ার কথা ছিল সেই তাকে আমি কাঁধে করে কবর দিয়ে এসেছি। এটা অস্বাভাবিক। এটা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। মেনে নিতে পারছি না আমার ভাগ্নে খুন হয়েছে। তিনি বলেন, আমার ফ্যামিলিতে সকলেই ধর্মপ্রাণ। আমিও নামাজ পড়ি। আমার কলিজার টুকরা তনয়ও ধর্মপ্রাণ ছিল। সে রোজার মাসে রোজা করত; নামাজ পড়ত। সেই তাকেই আজ খুন হতে হলো! খুন করল ধর্মের নামে স্লোগান দিয়ে! Ñএটা কিসের ধর্ম? কিসের কর্ম? আমরা কিসের মুসলমান? আমার জানা নেই। এ সময় ‘যারা আজ তনয়কে হত্যা করেছে তারা মুসলমান না-তারা খুনী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আমার ভাগ্নেকে ধর্মের নামে খুন করেছেন তারা আমার বাড়িতে এসে দেখে যান, আমরা মুসলমান। আর ইসলাম কখনও কোন কিছুকে হত্যা করতে বলে না। প্রতিবাদ সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, তনু হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার আমাদের দাঁড়াতে হলো তনয় হত্যার প্রতিবাদে। এভাবে আমরা আর কত প্রতিবাদ জানাব? আমরা আর কিভাবে প্রতিবাদ জানালে সরকারের টনক নড়বে, এ অমানবিক হত্যাকা- বন্ধ হবে?Ñআমরা জানি না। এ হত্যা মূলত সংস্কৃতির প্রতি আক্রমণ উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, আমরা মুসলমান হই আর যাই হই, আমরা সংস্কৃতি চর্চা করি বলেই আমাদের ওপর এ ধরনের হামলা-আক্রমণ হচ্ছে। বিষয়টা এমন হয়ে গেছে যে, এখন যেন হত্যা করতে নাস্তিক ব্যাখ্যা দেয়া লাগে না। সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে জড়িত থাকলেই যেন খুন হতে হবে। আর আমরা সংস্কৃতিকর্মী-সেবীরা সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে প্রতিবাদের চর্চা করতে করতে ভুলে গেছি প্রতিরোধের ভাষা। এখন সময় এসেছেÑ সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধেরও চর্চা করতে হবে। চাপাতির হাত থেকে বাঁচার কৌশল শিখতে হবে। আমাদের সকল সংস্কৃতিকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এ আক্রমণ মোকাবেলা করতে হবে। প্রতিবাদ করে কোন কাজ হবে না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র প্রতিবাদ করে এখন আর কোন কাজ হবে না। আসুন, আমরা যারা সংস্কৃতি চর্চা করি, যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করি, যারা মানবতার কথা বলিÑ তারা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ থাকি সবখানে। ঐক্যবদ্ধ থাকি নিজের গৃহে-রাজপথে। প্রসঙ্গত, মাহবুব রাব্বী তনয় ছিলেন লোক নাট্যদলের কর্মী ও সঙ্গীতশিল্পী। ছোটবেলায় তিনি পিপলস থিয়েটারে যুক্ত ছিলেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছেÑ ‘কঞ্জুস’, ‘লীলাবতী আখ্যান’, ‘মুজিব মানে মুক্তি’, ‘মাঝ রাতের মানুষেরা’, ‘সোনাই মাধব’ ইত্যাদি। জাতীয় যুবনাট্যোৎসবে মহাকালের ‘প্রমিথিউস’ মঞ্চস্থ ॥ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার এবং সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে একযোগে চলছে পঞ্চম জাতীয় যুবনাট্যোৎসব। বুধবার ছিল এ উৎসবের পঞ্চম দিন। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে এদিন সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ৩০তম প্রযোজনা ‘প্রমিথিউস’ নাটকের ১৪তম প্রদর্শনী। স্কাইলাসের ‘প্রমিথিউস বাউন্ড’ আশ্রয়ে নাটকটি রূপান্তর করেছেন আনন জামান এবং নির্দেশনা দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান নূর। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, সাম্প্রতিক অস্থির বিশ্বের সকল অনাচার আর ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশের প্রতিযোগিতার বিপরীতে এ সবুজাভে-একজন প্রমিথিউস প্রয়োজন। যে শূন্য থেকে অমৃত চৈতন্য এনে ফু দিয়ে ভরে দেবে চিত্ত-চৈতন্যের নিরুদ্ধ ঘরে। নির্দেশনা দেবে নতুন নেতৃত্ব। জিউস এ নাট্যে যতটা না বেশি ঈশ্বর তার চেয়ে বেশি ফেরাউন, হিটলার, লর্ড ক্লাইভের দাতাল প্রতিচ্ছবির রক্তচক্ষুর স্বৈরশাসক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। নাটকের অভিনয় শিল্পীরা হলেনÑ পলি বিশ্বাস, উৎপল চক্রবর্তী, মঞ্জুরুল করিম মিশু, সামিউল জীবন, এনামুল হোসেন, তৌহিদুর রহমান শিশির, প্রবীর মিত্র, রাজীব হোসেন, কোনাল আলী সাথী, শিবলী সরকার, মোঃ আহাদ, সৈয়দা কানিজ ফাতেমা, মরিয়ম আক্তার সাথী, জিয়াউর রহমান জিও, মিজানুর রহমান, মাজিদুর রহমান, আলাউদ্দিন, লাভলী আকতার লিপি, ইমরান খান, শ্রাবণী অরিন, রাকিবুল হাসান, জহিরুল ইসলাম, তারকেশ্বর তারেক, মোঃ মিজানুর রহমান মিজু ও আমিনুল আশরাফ।
×