ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটেই বিচারক অপসারণ ॥ খায়রুল হক

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটেই বিচারক অপসারণ ॥ খায়রুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন বিচারক তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলেও তাকে অপসারণ করতে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের ভোট লাগবে বলে জানিয়েছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইনের খসড়ায় মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদনের একদিন পর মঙ্গলবার আইন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ খসড়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বিচারপতি খায়রুল হক তদন্ত কমিটির পরিসর নিয়ে বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে রাখা হয়েছে নিরপেক্ষতার জন্য। এ্যাটর্নি জেনারেল বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান থাকেন এবং বিচারপতিদের সঙ্গে তার ওঠা-বসা আছে। তাদের (বিচারক) সম্পর্কে বুঝবেন। আর জনগণই সব। তাই সমাজের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তদন্ত কমিটিতে রাখার কথা বলা হয়েছে। আর এখানে দুই-তৃতীয়াংশের মতামতের ভিত্তিতে সব কিছু হবে। তদন্তে কিছু না পাওয়া গেলে বাদ যাবে। আর পাওয়া গেলে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। আবার সংসদ যদি মনে করে, দোষ করলেও শাস্তি দেব না, সেটাও পারে। এ খসড়ায় প্রধান বিচারপতি মতামত দেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবাদপত্র মারফত জেনেছি। খসড়াটি সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের দেয়া হয়েছে। তারা মতামত দিয়েছেন কি দেননি সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করব না। তিনি বলেন, সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলে তো ক্ষতি নেই। আর আলাপ করতেই হবে- এটাও ঠিক নয়। তবে আলাপ করলে ক্ষতি কী। যত বেশি আলাপ হবে, তত নতুন কিছু বের হয়ে আসবে। এ আইন হলে বিচার বিভাগ সংসদের মুখোমুখি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ বিচার-বিভাগ মুখোমুখি হওয়ার কারণ নেই। পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বের সব দেশে বিচারকদের অপসারণ আইন আছে। তাই আমরা মনে করেছি, আমাদের দেশেও থাকা দরকার। দেশের মালিক জনগণ। তাদের কথা চিন্তা করতে গেলে মনে হয় একটা জবাবদিহিতা থাকা উচিত। জনগণের কাছে সকলের দায়বদ্ধতা আছে। এ চিন্তায় ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের পক্ষে মতামত দিয়েছি। এখন এটা যদি জনগণ, বিচারক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সেটা হবে আমাদের সাকসেস। আর যদি না হয় তাহলে দোষটা আমাদেরই। বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি ছাড়া কেউ আইনের উর্ধে নন। অপসারণ আইনটা করা খুবই দরকার। তাহলে সবার জন্য ভাল। যদি কোন বিচারক অপরাধ করেন, তখন একজন পুলিশের পক্ষে বিচারকের বিরুদ্ধে কিছু করা সাহসের ব্যাপার। সাহস না পেলে অবিচার হয়ে যাবে। যার বিরুদ্ধে বিচারক অপরাধ করেছেন, তিনি বিচার পেলেন না। আমি এখনও বিশ্বাস করি, আমাদের বিচারকদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠবে না। সংসদে এ আইন পাস হলে বিচারকদের ওপর কোন মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়বে কিনা এর জবাবে তিনি বলেন, এডমান্ড বার্কের ভাষায়, বিচারকদের মন পাথরের মতো। সুতরাং কোন প্রভাব পড়বে না। একজন বিচারকের জন্য এসব বিষয় কিছু আসে যায় না। আগামী ৫ মে এ সংক্রান্ত রিটের রায় ঘোষণা করা হবে। এ সময় এটা নিয়ে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিষয়ে সাবেক এ প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা মাত্র নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আর আমি যতটুকু শুনেছি, কোর্টও শুনানিতে আইন করার কথা বলেছে। এ সময় এটা মন্ত্রিসভায় কেন উঠেছে সেটা আইন মন্ত্রণালয় জানে। এটা আগে নিতে পারত আবার পরেও নিতে পারত। তিনি বলেন, আমরা সব সময় মাথার মধ্যে রেখেছি, অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিচারকরা যেন হেরাজমেন্টের শিকার না হন। এবং কোন ধরনের মানসিক চাপে যেন না পড়েন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, অভিযোগগুলো পাবলিকলি হবে না। আর তদন্ত হবে কিনা- সেটা ঠিক করবেন সংসদের মেজরিটি সদস্য। এগুলো হবে রুদ্ধদ্বার মিটিংয়ে। আর তদন্ত তো ছেলে মানুষরা করছেন না। বিদগ্ধ মানুষরা করছেন। কার ব্যাপারে তদন্ত করছেন সেটাও দেখতে হবে। আর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও সংসদ না চাইলে অপসারণ হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও শাস্তি পাবেন না এটা কিভাবে সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না হলে অপসারণ হবেন না। তবে অভিযোগকারী চাইলে পুনরায় সাধারণ আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। যদি সাহস থাকে। বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, বিচারককে অপসারণ উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য তদন্ত। আশা করি, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে না। এটা আমার বিশ্বাস। সম্প্রতি দুই সংসদ সদস্যকে শাস্তি দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। তারা তো ওয়েট করছেন, কখন কোন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে। আর অভিযোগ এলেই তো ব্যবস্থা নেবেন। এ অবস্থায় সংসদের ওপর আস্থা কী থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দু’একজন সংসদ সদস্য নন। সিদ্ধান্ত নেবেন মেজরিটি। সবাই তো পাগল হয়ে যাবেন না। যদি সবাই পাগল হয়ে যান, তাহলে আমরাও সবাই পাগল হয়ে যাব। সংসদ সদস্যরা এতটা ইরেসপনসিবল, ভাবার কোন কারণ নেই। যদি সংসদ সদস্যদের ওপর আস্থা না থাকে তাহলে কি বিদেশ থেকে ভাড়া করে সংসদ সদস্য নিয়ে আসবেন?। আমরা আমাদের সংসদ সদস্যদের ওপর আস্থা রাখছি। তদন্ত কমিটিতে কর্মরত বিচারকদের রাখা হয়নি কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, সিটিং জাজ ইচ্ছে করে রাখিনি। বিচারকদের বিব্রত করতে চাইনি। কারণ, একজন কলিগ জাজের বিরুদ্ধে এমব্রেসিং পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইনি। আপনারা বিভিন্ন সময় বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করে কি করবে। তাই বিতর্ক এড়াতে এত চেষ্টা। বিচারক নিয়োগে নীতিমালা নেই। অথচ অপসারণ নিয়ে আইন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়োগেও নীতিমালা হওয়া উচিত। চাইলে আমরা অবশ্যই তৈরি করে দেব। সংসদে দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর অপসারিত হলে বিচারক আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, সবাই তো মামলা করতে চান। করতে পারবেন না কেন? সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি খায়রুল হকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এম শাহ আলম।
×