অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট উন্নয়নসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৫৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুদ্দীন আজাদ চৌধুরী এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী একনেক বৈঠকে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে বলেছেন, নতুন বিষয়ে ছাত্রীদের পড়ালেখা করাতে হবে। যেমন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, হসপিটালিটি, ক্যাটারিং, সেফ, সোলার এনার্জি ইত্যাদি নতুন নতুন বিষয় আনতে হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন-১ম পর্যায় প্রকল্পের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। উন্নয়ন ও সুশাসন বিষয়ে বিআইডিএস-এর সেমিনারে সুলতানা কামালের মন্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যারা কিছু করতে পারে না তারাই এসব কথা বলেন। নিরাপত্তার বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ কথা সত্য। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ব্রাসেলস, প্যারিস সব জায়গা তো মানুষ মারা যাচ্ছে। আমাদের সবচাইতে বড় জাতীয় শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য। প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র্য কমানো হচ্ছে। মানুষ যদি না খেয়ে থাকে তাহলে নিরাপত্তার জন্য হুমকি আরও বেড়ে যাবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৭২ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ২৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পানি ভবন নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২১০ কোটি ৯৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা। কিশোরগঞ্জ জেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ৩৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ঢাকার শেরে-ই-বাংলা নগরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দিনাজপুর-চিরিরবন্দর-পার্বতীপুর সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আমিন বাজার-মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প, এর ব্যয় ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। নদীতীর সংরক্ষণের মাধ্যমে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলা সদর সংরক্ষণ প্রকল্প, এর ব্যয় ৪৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ অর্থনেতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প-১ম পর্যায় প্রকল্প, এর ব্যয় ৯০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের বস্তারিত হচ্ছে, সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক নীতিমালার উদারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে উচ্চ সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলের প্রায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন জনগোষ্ঠী তাদের আর্থসামাজিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্নয়নের প্রবৃদ্ধির এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আন্তঃঅঞ্চলীয় বাণিজ্যের পরিমাণ এখনও আগের মতোই কম। এই কারণে আন্তঃঅঞ্চলীয় যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখতে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং যথাযথ তত্ত্বাবধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত।