ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথম ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

বৈদেশিক মুদ্রার  রিজার্ভ প্রথম  ২৯ বিলিয়ন  ডলার  ছাড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হ্যাকিংয়ে অর্থ খোয়া যাওয়ার ঘটনার ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৯ বিলিয়ন ডলার (দুই হাজার ৯০০ কোটি) অতিক্রম করেছে। এ রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমান জনকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রফতানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বাংলাদেশের রিজার্ভ। সোমবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ বিলিয়ন ডলার (দুই হাজার ৯০০ কোটি), যা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই রিজার্ভ বাড়ছে। রিজার্ভ থেকে অর্থ খোয়া যাওয়ার ঘটনা এক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়েনি। রিজার্ভ জালিয়াতির ঘটনায় যে অর্থ খোয়া গিয়েছিল, তা কি রিজার্ভের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, না কি অন্তর্ভুক্ত আছেÑ এ প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে শুভঙ্কর সাহা বলেন, পৃথিবীর সব দেশই ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) অনুসরণ করে রিজার্ভের হিসাব করা হয়ে থাকে। আমরাও সেটাই অনুসরণ করছি। ফিলিপিন্সে যাওয়া অর্থের প্রায় ১ কোটি ডলার ফিলিপিন্স মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষের (এএমএলসি) কাছে জমা আছে। বাকি অর্থও ফেরত পাওয়ার আশা করছেন শুভঙ্কর সাহা। অর্থ খোয়া যাওয়ার ঘটনার পরও রিজার্ভ সমৃদ্ধ হওয়ায় স্পষ্ট, তার কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। কাজী সাইদুর রহমান জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রফতানি আয়ে ভাল প্রবৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, এ ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে ঠিক। কিন্তু রিজার্ভে কোন প্রভাব পড়েনি। আর যে টাকা চলে গেছে, তার পরিমাণও খুব বেশি নয়। রফতানি আয় বাড়ছে। রেমিটেন্স আসছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল এবং খাদ্যপণ্যের দাম কমায় আমদানিতে খরচ কমছে। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে যায়। পরে তা আবার ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আকুর বিল মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। তার আগেই রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেল। আকুর সদস্যভুক্ত দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের বিল এক সঙ্গে দুই মাস পর পরিশোধ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মার্চে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১২৮ কোটি ১১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ১১৩ কোটি ১৪ লাখ ডলার। আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় বেড়েছে ১৪ কোটি ৯৭ ডলার। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) দুই হাজার ৪৯৫ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি আয় হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের দুই হাজার ২৯০ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রফতানির চেয়ে আট দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। একক মাস হিসেবে গত মার্চ মাসে ২৮৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে।
×