ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার চট্টগ্রাম ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাফুফে সভাপতি

ভোটের দৌড়ে এখনও এগিয়ে সালাউদ্দিনই

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

ভোটের দৌড়ে এখনও এগিয়ে সালাউদ্দিনই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘সরে যাওয়ার চিন্তা এখনও নেই। অনেকে কথা বলার চেষ্টা করছে। তবে শেষ পর্যন্ত সমর্থন দিতে হলে সালাউদ্দিন ভাইকেই দেব, কোনভাবেই কামরুল আশরাফ খান পোটনকে নয়।’ কথাগুলো গোলাম রাব্বানী হেলালের। বহুল আলোচিত বাফুফের নির্বাচনে তিনি হচ্ছেন সভাপতি পদে দাঁড়ানো তিন জনের একজন হেলাল সাবেক জাতীয় ফুটবলার। যেখানে কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বীই এমন কথা বলেন, সেখানে এটা পরিষ্কার অনুধাবন করা যায়Ñ আসন্ন নির্বাচনে বাফুফের বর্তমান সভাপতি সালাউদ্দিনের অবস্থানটা কোথায় বা কেমন পর্যায়ে। এছাড়া নির্বাচনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, ৬৭ ভোটের মালিক জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকদের প্রতিষ্ঠান ‘ফোরাম’ পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সংবাদ সন্মেলন করে খোদ বাফুফে ভবনে। ফোরাম সভাপতি, চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের প্রকাশ্য এই সমর্থন কয়েক ধাপ ওপরে তোলে দিয়েছে সালাউদ্দিন তথা তার প্যানেলকে। এক কথায়, নির্বাচনের দাঁড়িপাল্লা এখনও ঝুলে আছে সালাউদ্দিনের দিকেই। হাতে সময় আর কয়েকদিন। ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাফুফে নির্বাচনে সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী পোটন ও তার প্যানেল এই অল্প সময়ের মধ্যে কত দূর এগোতে পারে সেটাই এখন দেখার। সবচেয়ে বড় বিষয়, সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের যেখানে পূর্ণ প্যানেল, সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাঁচাও ফুটবল পরিষদের কিন্তু পূর্ণ প্যানেল নেই। সদস্যপদে দুজন প্রার্থীই কম আছে তাদের। তাছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে তারা নিজেদের তিন প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফাঁকা মাঠে গোল করে নির্বাচিত হয়েছে সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী। অনেকেই বলছেন, এতে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেছে সালাউদ্দিনের প্যানেল। আর বিপক্ষ প্যানেলের ক্ষেত্রে এটা একটা নৈতিক পরাজয়ও বটে। এ বিষয়টা অবশ্যই প্রভাব ফেলবে ১৩৪ ভোটার বা ডেলিগেটদের মনে। যুদ্ধ করতে এসে যদি যুদ্ধ শুরুর আগেই একপক্ষ হাল ছেড়ে ময়দান ছেড়ে চলে যায়, তাহলে অপর পক্ষ তো বিনা যুদ্ধেই জিতে গেল। সালাম মুর্শেদীর ক্ষেত্রে বিষয়টা তো অনেকটা এ রকমই। নির্বাচনী প্রচারে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন সালাউদ্দিন এবং তার প্যানেল। নির্বাচন উপলক্ষে ভোট পাওয়ার জন্য গত কয়েকদিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ক্লাব চষে বেড়িয়েছেন তিনি। অন্যদের চেয়ে প্রচার অভিযান অনেক আগেই শুরু করেছেন সালাউদ্দিন এবং ডেলিগেটদের সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্কটাও অন্যদের চেয়ে তারই বেশি। সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে ফোরাম। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটি প্রবাদ খুবই চালু, ‘ফোরাম যেদিকে, পাল্লা ভারি সেদিকে।’ বিগত নির্বাচনগুলোতেও সেটাই দেখা গেছে। বাফুফের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটের সংখ্যা ১৩৪। এর মধ্যে ফোরামের ভোটই ৬৭। তার মানে মোট ভোটারের অর্ধেকই ফোরামের। আগেই অনুমেয় ছিল, বাফুফের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই ডালপালা গজাবে গুজবের। এই নির্বাচনেও তার কোন ব্যত্যয় হয়নি। সালাউদ্দিনকে নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক নেতিবাচক গুজবই রটানো হয়েছে। কিন্তু সব গুজব বা প্রগাপাল্ডাই মিথ্যে বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। আর এটা মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করেছেন ফোরাম প্রধান আ জ ম নাছির। তিনি বলেছেন, ‘আমার সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু জরুরী সভায় আমাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন কাজী সালাউদ্দিনের প্যানেলকে সমর্থন দেয়ার জন্য। আমরা জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ থেকে ৭ প্রার্থী দিয়েছি সালাউদ্দিনের প্যানেলে। তাই এখনও এ প্যানেলকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। অন্য কোন প্যানেলের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন আলোচনাই হয়নি প্রতিপক্ষদের সঙ্গে। কানাঘুষা যা শোনা যাচ্ছে তা সত্য নয়।।’ উল্লেখ্য, এর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সভাপতি ও চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান তরফদার মোঃ রুহুল আমিনকে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গঠিত হয় বাফুফে নির্বাচনে কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি। নির্বাচনী প্রচার অভিযানে সালাউদ্দিন সোমবার অবস্থান করেন চট্টগ্রামে। সেখানে তিনি ফোরামের সঙ্গে সভা, তথা জনসংযোগ করেন। আগামী বুধবার ঢাকায় সব ক্লাবগুলোকে (যেসব ক্লাবে ভোটার আছে) নিয়ে বসার কথা রয়েছে সালাউদ্দিনের। দেশের ফুটবলের উন্নয়নে তিনি কতটা সফল বা ব্যর্থÑ তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে একটা বিষয়ে সবাইকে একমত হতেই হবে, সেটা হলো গত আট বছরে তিনি ফুটবল মাঠে রেখেছেন। আগামী ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে সভাপতি পদে ৩, ৪ সহ-সভাপতি পদের জন্য ১০ ও ১৫ সদস্য পদের বিপরীতে মোট ৩৩ জন নির্বাচন করবেন। ফুটবলমোদিরা মনে করছেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সালাউদ্দিনের বিজয় কেউই ঠেকাতে পারবে না। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কি হয়।
×