ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সমঝোতা হয়নি পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘট চলবে

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সমঝোতা হয়নি পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘট চলবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে মালিক-শ্রমিক সমঝোতা না হওয়ায় পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘট অব্যাহত থাকছে। তবে আজ বিকেলে সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নৌযান শ্রমিক নেতারা পরবর্তী ঘোষণা দেবেন বলে শনিবার রাতের বৈঠকে শ্রম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে নেতৃবৃন্দ। এদিকে টানা তিন দিনের নৌযান ধর্মঘটে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরের পণ্য খালাস বন্ধ ছিল শনিবারও। এতে আমদানি-রফতানিকারকরা ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মালিক-শ্রমিক-সরকার ত্রী-পক্ষীয় বৈঠক শনিবার বিকেলে শ্রম পরিদফতরে অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৫টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকটি রাত সাড়ে ১০টায় শেষ হয়। বৈঠকের পর নৌযান শ্রমিক নেতা আশিকুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এর আগে নৌপরিহন মন্ত্রীর অনুরোধে সমস্যা সমাধানে ১৫ দিন সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু ৮৫ দিন পার হয়ে গেলে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যায়। আবার নতুন করে আমাদের কাছে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ১০ দিনের সময় চাইছেন। বিষয়টিকে শ্রমিকরা যৌক্তিক হিসেবে দেখছে না। তিনি বলেন, আমরা শ্রমপ্রতিমন্ত্রীকে বলেছি সরকারের অনুরোধে আমরা যাত্রী পরিবহনের কর্মবিরতি থেকে সরে এসেছি। এখন সেই সুযোগ নিয়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণ না করেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করাটি অনুচিত। বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, মালিক এবং শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওই বৈঠক শুরু হয়ে চলে রাত পর্যন্ত। বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু শ্রমিকদের অনুরোধ করেন ১০ মে পর্যন্ত সময় দিতে। এই সময়ের মধ্যে একটি কমিটি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ওই কমিটি নতুন বেতন নির্ধারণ করবে। কিন্তু শ্রমিক পক্ষ প্রতিমন্ত্রীর এমন অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে বৈঠকে মালিকপক্ষ বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হলেও সামান্য পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চাওয়ায় শ্রমিকরা তা মেনে নেয়নি। বৈঠক সূত্র বলছে, মালিকপক্ষ ন্যূনতম মজুরি (মূল বেতন) চার হাজার ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বৃদ্ধি করে চার হাজার ৫০০ করার পক্ষে। তবে শ্রমিক পক্ষ মাত্র ৩০০ টাকা বেতন বৃদ্ধিতে সম্মত হয়নি। রাতে এ বিষয়ে একাধিকবার বক্তব্য জানার জন্য শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বৈঠক সূত্র জানায়, উভয়পক্ষের অনড় অবস্থানের মধ্যে প্রতিমন্ত্রী শ্রমিকদের ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেন। পরে শ্রমিকনেতারা আজ রবিবার বিকেলে সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে বৈঠক ত্যাগ করেন। বৈঠকে শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার (লঞ্চ মালিক সমিতি) প্রধান উপদেষ্টা মোঃ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাঃপা) সংস্থার সিনিয়র ভাইন চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান বাদল, বাংলাদেশ ওয়েল ট্যাঙ্কার ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাবিবুল আলম, কোস্টাল শিপ ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লক্ষণ চন্দ্র ধর, খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মোঃ সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন নৌযান মালিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের জের হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অর্ধশত মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ১৬টি ঘাটে কোন ধরনের পণ্য খালাস ও পরিবহন চলছে না। উল্লেখ্য, নৌযান ধর্মঘটের কারণে শতাধিক লাইটার জাহাজ অলস অবস্থায় রয়েছে। এদিকে, ধর্মঘটের ফলে মাদার ভেসেলগুলো প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার ডলার হারে ডেমারেজ গুনছে। এ ঘটনায় বিদেশী জাহাজের প্রিন্সিপালদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অপরদিকে, পণ্যের আমদানিকারকরা ক্ষতির আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় রয়েছে। নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে আমদানি-রফতানির সাধারণ পণ্য খালাস বন্ধ থাকার পাশাপাশি সাগরে মাছ শিকার কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। বর্ধিত বেতন বা গেজেট বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘট দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলার ঘোষণা রয়েছে। এদিকে, যাত্রী দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে শুক্রবার রাত থেকে শুধুমাত্র যাত্রীবাহী লঞ্চের ধর্মঘট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। খুলনা অফিস জানায়, পণ্য পরিবহন ধর্মঘট থেকেও সরে আসতে শনিবার খুলনাতে সংবাদ সম্মেলন করেছে খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপ ও মংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মংলা বন্দরে কয়লাবাহী ২টি জাহাজ, ক্লিঙ্কারবাহী ২টি জাহাজ, বোল্ডার স্টোনবাহী ১টি জাহাজ, ইউরিয়া সারবাহী ১টি জাহাজ ও এলপিজি গ্যাসবাহী ১টি জাহাজ অবস্থান করছে। এসব মাদার ভেসেলের (জাহাজের) মাল খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিদিন বৈদেশিক মুদ্রায় লাখ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিন এক একটি জাহাজের জন্য ড্যামারেজ দিতে হবে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলার। বর্তমানে মংলা বন্দর ও বন্দরের হারবারিয়া এলাকায় মাদার ভেসেলের গায়ে মাল খালাসের জন্য ১৩৩টি জাহাজ অবস্থান করছে। এছাড়া খুলনা-বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬০০ পণ্য বোঝাই জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। কাঁচামালের অভাবে মংলায় একাধিক সিমেন্ট কারখানা উৎপাদন সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। জ্বালানি তেলবাহী অধিকাংশ জাহাজ ভাড়া করা, ধর্মঘটের কারণে সেগুলো খুলনায় আসতে পারছে না। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে সংবাদ সম্মেলনে অশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়। স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, ধর্মঘটের তৃতীয় দিনেও মংলা বন্দর স্থবির রয়েছে। শনিবার এ বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহন এবং নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে আমাদানি-রফতনিসহ বন্দরের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বরিশাল থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাভুক্ত সাতটি সংগঠনের ডাকে ১৫ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের ন্যায় নৌ-যান ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। তবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর নির্দেশে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় এ সিদ্ধান্তের পর শনিবার সকাল থেকে বরিশালের সকল রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী সকল প্রকার জাহাজ চলাচল।
×