ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ খরার কবলে উত্তরাঞ্চল ॥ বিবর্ণ লিচু, ঝরে পড়ছে আমের গুটি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২২ এপ্রিল ২০১৬

দীর্ঘ খরার কবলে উত্তরাঞ্চল ॥ বিবর্ণ লিচু, ঝরে পড়ছে আমের গুটি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ দীর্ঘ খরার কবলে পড়েছে রাজশাহীসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিহীন এ অঞ্চলে আম ও লিচুসহ বিভিন্ন ফসলেও প্রভাব পড়েছে। গাছের আমগুটি ঝরে পড়ছে। বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে লিচুর গুটি। দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ খরায় এখন আম ও লিচুর বাগান নিয়ে দিশেহারা এ অঞ্চলের লাখো কৃষক। এরই মধ্যে লিচুর গাছে গাছে অজ্ঞাত রোগ দেখা দিয়েছে। এতে গাছের পাতা প্রথমে তামাটে বর্ণ ধারণ করছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। আর গাছে থাকা লিচুগুটি কালচে রং ধারণ করছে। ধীরে ধীরে রসে টইটুম্বুর হওয়ার বদলে চুপসে যাচ্ছে লিচু। তারপর ঝরে পড়ছে মাটিতে। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার লিচু বাগানে দেখা দিয়েছে এমন সমস্যা। এ অবস্থায় হতাশা ঘিরে ধরেছে লিচু চাষীদের। প্রতিশেধক হিসেবে নানা ওষুধ স্প্রে করেও সুফল পাচ্ছেন না তারা। চাষীরা জানান, স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও লিচু গাছের এই রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না। ফলে দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে গাছ থেকে খসে পড়ছে আমের গুটিও। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। এই বাগান থেকে দুই হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে লিচু চাষীরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরা আর অজানা রোগে লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। নগরীর রায়পাড়া এলাকার লিচু চাষী আবু হানিফ জানান, অতিরিক্ত খরায় লিচুগুটিতে কালো কালো দাগ দেখা দিচ্ছে। অনেক লিচু চুপসে ঝরে পড়ছে। বশিরাবাদ এলাকার লিচু চাষী জানে আলম জানান, সারা বছর লিচু বাগানের পরিচর্যা বাবদ অনেক টাকা খরচ করেছেন। এখন বাগানের অবস্থা দেখে উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা হচ্ছে। নারিকেলবাড়িয়া এলাকার চাষী আবদুর রউফ বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তার বাগানেও একই রোগ দেখা দেয়। ওই সময় থেকেই তিনি নিয়মিত তার লিচু গাছে নানা ধরনের ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, রাজশাহীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আবদুল আউয়াল বলেন, লিচু গাছের এ ধরনের রোগের বিষয়ে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই। তবে তিনি বলেন, বসতবাড়ির আশপাশে সোডিয়াম ক্লোরাইডের প্রভাবে লিচু গাছে এ ধরনের রোগ হওয়ার শঙ্কা থাকে। তিনি জানান, লিচু গাছের পাতা পোড়া এবং লিচুতে দাগ হওয়া ও লিচু চুপসে যাওয়ার জন্য কার্বডাজিন এবং ম্যানকোজেট নামক দুটি কেমিক্যাল এক সঙ্গে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে। এদিকে প্রচ- খরায় গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ ও প্রাণিকুল। খরার কারণে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এতে আমের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। বাগান মালিকরা জানান, তীব্র খরার কারণে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। জেলার বাঘা সদরের আম ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর গাছে প্রচুর পরিমাণ মুকুল এসেছিল এবং ব্যাপক গুটি ছিল। এ কারণে লাভের আশায় উচ্চ মূল্যে আম বাগান কিনেছিলাম। তবে চলমান খরার কারণে গাছ থেকে সমানে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এ নিয়ে রীতিমতো তারা শঙ্কায় রয়েছেন। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, এ অঞ্চলে সর্বশেষ ৮ এপ্রিল মাত্র দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে ৬ এপ্রিল থেকে মুলত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
×