ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবে নারীর অংশগ্রহণ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২১ এপ্রিল ২০১৬

উৎসবে নারীর অংশগ্রহণ

সুব্রতা রায় সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ এই জীব আগুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে সমাজ বিনির্মাণের কাজটির সূচনা করে, গড়ে আজকের এই আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা। মানুষ অর্জন করে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি বেঁচে থাকা ও বিকাশের জন্য মৌলিক বিষয়গুলো ছাড়াও নিরাপত্তা, প্রেম ও বিনোদনের ক্ষেত্রসমূহকে। বাংলা আমাদের ভাষা, যে ভাষার জন্য আন্দোলন করেছেন- রক্ত দিয়েছেন পূর্বসূরিগণ। বাংলা সনের ১ বৈশাখ- বর্ষবরণ উৎসব তাই সর্বজনীন ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিনে অনাবিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস, হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা আর হাসি-খুশিতে মেতে উঠবে ১৬ কোটি প্রাণ। ৩৬৪ দিনের অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে একটি দেশে, একটি দিন, এক- একটি পরিবার- বৃহৎ পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে জাতিকে জানাবে আগমনী বার্তা, দেবে নতুন প্রেরণা। ছোট্ট শিশু, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী আর বৃদ্ধ খুঁজে নেবে যে যার মতো করে আদিম ঐতিহ্যের সঙ্গে বিকশিত নিত্যনতুনের মেলবন্ধন। প্রতিদিনের হাজারো ব্যস্ততার ভিড়ে ক্ষীণ বা ম্লান হয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্যকে আনন্দ ও আবেগের সঙ্গে স্মরণ করার সংস্কৃতি একটি দেশের জন্য, জাতির জন্য খুবই ইতিবাচক ও গৌরবের, বিশেষ করে আমাদের দেশের জন্য বিশেষভাবে অত্যন্ত প্রয়োজনের। কিন্তু সময়সীমা ও বিধিনিষেধ কেন? ২০১৫ সালের ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের নববর্ষ পালনে বিধিনিষেধ আরোপ- সত্যিই কি আপনার মনে কোন প্রশ্ন জন্ম দেয় না? এবার যদি কিছু ঘটত তাহলে কি ২০১৭ তে নববর্ষ পালনে আরও বড় বিধিনিষেধ আসত? কেন ১ বছরেও ২০১৫ সালের নারী নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় আনা গেল না? বিচারহীনতার সংস্কৃতি কি খারাপ কাজকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে না? পাপাচার করে স্বল্প কিছু মানুষের প্রাপ্য সাজা বড়, নাকি কোটি কোটি আনন্দপ্রেমী সাধারণ মানুষের আনন্দটাকে সীমিত করে ফেলা কি ভালো? নারী নির্যাতনের ঘটনা কি শুধু নববর্ষে- ১ বৈশাখে ঘটে? বাড়িতে, বিদ্যালয়ে, রাস্তায় বা বাসে কি নারী নিরাপদ? এসব থেকে উত্তরণের জন্য আরও বড় পরিসরে বাধাহীনভাবে, নির্ভয় চিত্তে, মহানন্দে এই সমস্ত সর্বজনীন উৎসব পালন করা জরুরী। একে তো কিছুদিন ধরে ঘটে যাওয়া কিছু মৃত্যু মানুষকে ভীত করে রেখেছে, এরপর যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিধিনিষেধ আরোপিত হয় তখন মানুষের মাঝে ভয় আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। কারো অজানা নয়, একটা গোষ্ঠী সুকৌশলে নারীকে গৃহবন্দী করার পাঁয়তারা করছে এবং পরিকল্পিতভাবে মৌলবাদ চর্চার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই গোষ্ঠী ভয় পায় ১ বৈশাখের মতো ইতিবাচক অসাম্প্রদায়িক কর্মযজ্ঞকে, তাই এসবকে সঙ্কুচিত তথা বিলীন করার প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু আমরা জানি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ করতে গেলে নিশ্চয়ই সরকারকে দূরদর্শী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। প্রয়োজন মাথা ব্যথায় মাথা কাটা নয়, ব্যথার চিকিৎসা করা। সম্মিলিত শক্তি ভয়কে জয় করে সমাজের গুণগত মান উন্নত করবে এটাই সত্যি। খলিলগঞ্জ, কুড়িগ্রাম থেকে
×