ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গতিরোধকারীর গতি রুদ্ধ হোক

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ নির্বাধ সর্বজনীন উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২১ এপ্রিল ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ নির্বাধ সর্বজনীন উৎসব

সাগর কোড়াইয়া সংস্কৃতিবান কোন ব্যক্তিই গঠনমূলক আনন্দের উপর নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসুক তা চায় না। বাংলা সংস্কৃতি বা সর্বজনীন উৎসব যেহেতু আনন্দ তথা ঐতিহ্যকেই প্রকাশ করে তাই তাকে নিজস্ব গতিপথেই চলতে দেয়া উচিত। আনন্দ, উৎসবকে যখনই কোন নিয়ম-কানুন, আইন, আজ্ঞা, দেয়াল ও প্রাচীর দিয়ে রক্ষিত করা হয় তখনই তা হয়ে উঠে শুষ্ক, রিক্ত ও শূন্য। যদি উৎসবকে নিজের পথে চলতে দেয়া হয় তাহলেই সে উৎসব হয়ে উঠে সত্য ও সুন্দর। বাঙালী যুগ যুগ ধরে আনন্দকে নিয়ে বাঁচতে শিখেছে। হাজারো দৈন্য, দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থাকলেও বাঙালী কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেমন আছেন? স্বাভাবিকভাবেই ভাল আছি, উত্তর আসে। তাই যেখানে উৎসব থেকে বাঙালী সুখ ও আনন্দ আহরণ করে সেখানে নিয়মের বেড়াজাল গড়ে তোলা কোন মতেই প্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশ যেহেতু অসাম্প্রদায়িকতার দেশ তাই সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার রীতি রয়েছে। আবার পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন কোন ধর্মের গ-ির মধ্যে আবদ্ধ নয় বরং তা জাতি, ধর্ম, বর্ণের উর্ধে অবস্থান করে। তাই সবারই অধিকার রয়েছে নানাভাবে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবার। কিন্তু সীমিত বুদ্ধি অনেক সময় সেখানে হামলা করতে তৎপর থাকে। সীমাবদ্ধ করে দেয় আনন্দের গতিপথ। ভাগাভাগি করে দেয় আনন্দধারা। অদৃশ্য শক্তির হুংকারের কাছে মাথানত করে অদৃশ্য শক্তিকে প্রসারতায় সহায়তা ছাড়া এটা কিছুই নয়। সীমাবদ্ধতা কখনও আনন্দকে উঁচুতে তুলে ধরতে পারে না। বরং আনন্দকে টেনে নিচে নামিয়ে আনতে চায়। তখন এত আনন্দের আয়োজন বৃথা হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। বাংলা মা আর্য, দ্রাবিড়, মুঘল, ব্রিটিশকে নিজ কোলে আশ্রয় দিয়েছে। কখনও তাদের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করেনি। বরং সমৃদ্ধ করেছে আমাদের ঐতিহ্য ও রীতিকে কিন্তু আমাদের মূলকে অস্বীকার করে নয়। বাংলা মা কখনও নিজেকে হারাবার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল না। বাংলা মায়ের ঐতিহ্য ধারাকে যে বা যারাই বন্ধ করতে তৎপর থাকুক না কেন তা কখনও সম্ভবপর হবে না। কারণ বাংলার মাটিতে মিশে আছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত। বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মতো বীর পুরুষ। যদি জনগণের নিরাপত্তার জন্য নিয়ম প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে তবে তা পালনযোগ্য। কিন্তু যদি নিরাপদে উৎসব পালনে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে নিয়ম পালন করার চাপ প্রয়োগ করা হয় তাহলে তা কতটুকু পালনযোগ্য তা প্রশ্নবোধক। ভয়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা কখনও ভাল কিছু আনতে পারে না। বরং ভয় ধীরে ধীরে মূলকে হারাতে সহায়তা করে। তাই যতই নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসুক না কেন বাংলার তরুণ সমাজ ঠিকই তাদের আনন্দের পথ বের করে নেবে। কারণ তারুণ্য ভাঙ্গতে পারে যেমন, তেমনি গড়তেও জানে। তাই নিয়ম প্রণেতাদের ভাবার সময় এসেছে পহেলা বৈশাখের আনন্দের স্রোতকে গতিরোধ না করে বরং গতিরোধকারীর গতিকে রোধ করার। ডিঙ্গাডুবা, রাজশাহী থেকে
×