ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে এসে জানালো

১৬ দিন চোখ হাত বেঁধে আটকে রাখা হয় সোহাগকে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

১৬ দিন চোখ হাত বেঁধে আটকে রাখা হয় সোহাগকে

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার হওয়ার ৭ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেলের বন্ধু মিজানুর রহমান সোহাগ। পরিবারের দাবি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মিজানুর বাড়ি ফিরে আসে। দীর্ঘ ১৬ দিন হলো চোখ-হাত বেঁধে তাকে অজ্ঞাত স্থানে রেখে দেয়া হয়েছিল বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে মিজানুর। এদিকে লাশ উদ্ধার হওয়ার ২ দিন আগে তনু যেসব বন্ধুদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল গিয়েছিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি মঙ্গলবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জানা যায়, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে একটি কালভার্ট সংলগ্ন জঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ২৭ মার্চ গভীর রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেলের বন্ধু মিজানুর রহমান সোহাগ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে লোকজন তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়া হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এ বিষয়ে মিজানুরের পিতা বুড়িচং থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে মিজানুর বাড়ি ফিরে আসেন। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা তার বাড়িতে ভিড় জমায়। এ সময় তাকে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল। মিজানুর জানায়, বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাইক্রোবাসের মধ্যে চোখ ও হাত বেঁধে ফেলা হয়। এরপর থেকে সব সময় তার চোখ ও হাত বাঁধা ছিল। খাওয়ার সময় তার এক হাত খুলে খাবার দেয়া হতো। এমতাবস্থায় অজ্ঞাত স্থানে একটি বদ্ধঘরে তাকে এতদিন আটকে রাখা হয়েছিল। ওই ঘরে আরও কয়েকজন ছিল। কে বা কারা তাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, সে স্থান কিংবা ব্যক্তিদের মিজানুর চিনতে পারেনি। দুই সপ্তাহের বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার সকালের দিকে মিজানুরের চাচা তাজুল ইসলাম নাজিরাবাজারে সাকুরা পেট্রোলপাম্পের কাছে মিজানুরকে দেখতে পান। তিনি সেখান থেকে মিজানুরকে বাসায় নিয়ে যান। মিজানুরের চাচা তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তাকে যখন পাওয়া যায়, তখন সে অনেকটা অস্বাভাবিক ছিল, মনে হচ্ছিল সে কাউকেই চিনতে পারছে না। এ ছাড়া মিজানুর শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয়। মিজানুর সাংবাদিকদের জানায়, আমি কারও ক্ষতি করিনি তাই আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। সে আরও জানায়, মঙ্গলবার ভোরের দিকে তার চোখ ও হাতের বাঁধন খুলে তার বাড়ি সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের পাশে সাকুরা পেট্রোলপাম্পের কাছে নাজিরা বাজার এলাকায় নামিয়ে দেয়া হয়। মিজানুরের মা সাহিদা আক্তার ও বাবা নুরুল ইসলাম তাদের ছেলেকে জীবিত ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার বোন খালেদা আক্তার জানান, আমার ভাই যে কাপড় পরে বাড়ি থেকে গিয়েছিল, সেই কাপড় পরেই ফিরে এসেছে। বুড়িচং থানার ওসি উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, মিজানুর ফিরে আসার খবর জেনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার জন্য পুলিশ তাদের বাড়িতে যাবে। এদিকে তনু যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। জানা যায়, গত ১৮ মার্চ এ থিয়েটারের বন্ধুদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল চা বাগানে সফরে যান তনু। ওখান থেকে ফেরার পর ২০ মার্চ রাতে সেনানিবাস এলাকার জঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তনুর সঙ্গে থিয়েটারের যে সকল বন্ধু শ্রীমঙ্গলে পিকনিকে গিয়েছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিআইডির একটি সূত্র জানায়, ওই বন্ধুদের কাছ থেকে তনু সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তনু হত্যার তদন্তের স্বার্থেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিআইডি-কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের জানান, তনুর কতজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বা কোন তথ্য পাওয়া গেছে কি-না এসব বিষয় তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না। তিনি আরও বলেন, এ মামলা নিয়ে আমরা অবিরাম কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তনু হত্যার তদন্তে সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী মহলসহ সিআইডির উর্ধতন কর্মকর্তারা এ মামলার তদন্তে সহায়তা করছেন। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।
×