ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১২ এপ্রিল ২০১৬

ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপে রয়েছে সরকার। সেখানকার অবৈধ বাংলাদেশীদের ধাপে ধাপে ফেরত পাঠাতে চাইছে এসব দেশের কর্তৃপক্ষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ২৭ জন বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেখানের বাংলাদেশীদের ফেরাতে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চাইছে। তাদের ফিরিয়ে দেয়ার খবরে সেখানকার অভিবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ধীরে ধীরে অস্বস্তি বাড়ছে। সূত্র জানায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছেন। এই সফরের সময় অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) উত্থানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্যান্য মুসলিম দেশের অভিবাসীদের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশী অভিবাসীরাও এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। গত ২৯ মার্চ ঢাকা সফরে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিরিউরিটির একটি প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে তারা জানিয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশীরাও রয়েছেন। প্রথম ধাপে ২৭ জন বাংলাদেশী অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অভিবাসীদের মার্কিন সরকার তাদের সব ধরনের আইনী সহায়তা দিয়েছে। আদালতে তারা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছে। তাদের বৈধতার দাবির পক্ষে যুক্তি দেখাতে না পারায় সব প্রক্রিয়া শেষে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে ফিরে যাওয়ার পরেই গত ৭ এপ্রিল ওই ২৭ জন বাংলাদেশীকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব বাংলাদেশী একেবারে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসেন। এসব বাংলাদেশীদের অনেকেই ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, পেরু, মেক্সিকো হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ও চেয়েছিলেন। আদালতে এই নিয়ে মামলাও চলে। তবে শেষ পর্যন্ত এসব বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানো হয়। এছাড়া আরও ১২৯ জন বাংলাদেশী নাগরিককে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২৭ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানোর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে। কেননা এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আরও বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের নীতি অব্যাহত রাখায় ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে সেখানে। সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গত সপ্তাহে ২৭ বাংলাদেশীসহ ৮৬ জনকে ফেরত পাঠানো নিয়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমেও। ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে এখন মাঠে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। বর্তমানে প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশীসহ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেফতারকৃত ৩৪ হাজার অভিবাসীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের সহায়তার কাজে নিয়োজিত সংগঠন দেশিজ রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং (ড্রাম) এর সংগঠক কাজী ফৌজিয়া রবিবার টেলিফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৭ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানোর পর এখানকার প্রবাসীরা চরম ক্ষুব্ধ। এভাবে কোন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো অত্যন্ত অমানবিকও। কেননা একজন লোক জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে ও তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে এখানে এসেছিলেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদনও করেছিলেন। তবে তাদের সেই আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়। তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে এখনও দেড় হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী কারাগারে রয়েছেন। এসব নাগরিকরা বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। এদের অনেককেই দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান। এদিকে গত ৩ এপ্রিল ঢাকা সফরে আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থাটির ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান লেফলার। প্রতিনিধি দলটিও সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিবাসন সংলাপও হয়। অভিবাসন সংলাপে ইউরোপে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
×