ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১০ এপ্রিল ২০১৬

হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

নিখিল মানখিন ॥ মগবাজার আবাসিক এলাকার গলি। ওই গলি দিয়ে একই সময়ে বিপরীতমুখী দু’টি প্রাইভেট কার চলাচলের জায়গা নেই। তার পাশেই গড়ে উঠেছে আদ দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। হাসপাতালের এক টুকরো খোলা জায়গাটাই ‘কার পার্কিং’ হিসেবে চালানো হচ্ছে। যানজট লেগেই থাকে ওই গলিতে। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। এভাবে রাজধানীর আবাসিক এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ওই সব অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও নেই। ফলে একদিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অন্যদিকে আবাসিক এলাকাসমূহের অলিগলিতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। অনেক প্রতিষ্ঠানের নেই অনুমোদন, পরিবেশ ছাড়পত্র। অনুমোদন নিয়েও পরবর্তীতে পূরণ করা হয় না অধিকাংশ শর্ত। মেডিক্যাল বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে কঠোর ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইতোমধ্যে আবাসিক এলাকা থেকে হাসপাতালসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরানোর জন্য ছয় মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বড় মগবাজার মোড় থেকে কয়েক গজ দক্ষিণে এগোলেই বাম দিকে একটি ছোট্ট গলি, যা আদ দ্বীন হাসপাতালের গলি নামেই বেশি পরিচিত। মগবাজার মোড় থেকে দক্ষিণ বরাবর রিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ওই আদ দ্বীন হাসপাতালের গলি দিয়েই সব রিক্সা চলাচল করে। গলি দিয়ে কিছুদূর এগোলেই আদ দ্বীন হাসপাতাল। একের পর এক রোগীর প্রাইভেট কার, এ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালের অন্যান্য গাড়ি হাসপাতালে ঢুকছে এবং বের হচ্ছে। এমন অবস্থায় ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন চলাচল হয়ে পড়ে স্থবির। হাসপাতালে যাতায়াতকারী যানবাহনগুলোর প্রবেশ ও বের হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়। হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের বাঁশির শব্দে অন্যসব যানবাহন থামতে বাধ্য হয়। আর হাসপাতালের সামনে যাত্রী নামানো ও ওঠানোর অজুহাতে জমে থাকে রিক্সা ও অটো রিক্সা। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। আগত রোগী ও তাদের অভিভাবকদের জুতা বাইরে রেখে ঢুকতে হয় ওই হাসপাতালে। এভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পরিচয় দিলেও মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পৃথক কোন ব্যবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষ সাবধানে নিরাপদ জায়গায় ফেলার কথা জানালেও ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ কিংবা রক্তমাখা তুলা সবই একই ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে বলে হাসপাতালের কর্মচারীরা জানিয়েছেন। আলাদা করার ব্যবস্থা নেই গজ, ব্যান্ডেজ, ওষুধের শিশি, ব্যবহৃত স্যালাইন কিংবা রক্তের ব্যাগও। এই সব বর্জ্য ফেলে দেয়া হয় সিটি কর্পোরেশনের রাস্তার ধারে রাখা ডাস্টবিনে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় রয়েছে ৮টি বড় সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। ওই সব সরকারী প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাস্তার অপর পাশে গড়ে উঠেছে অনেক বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কলেজগেট এলাকায় হুমায়ুন রোডের একটা গলিতে ৩টি ক্লিনিক, ৫টি ডায়াগনস্টিক ও ১টি হাসপাতাল রয়েছে। গলিতে ঢুকতে প্রথমে চোখে পড়ে নেবস ডেন্টাল ক্লিনিক, তারপর টেকনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তার সামনে ইউনিক মেডিক্যাল সেন্টার, সিপিএল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ভাইটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জেনিথ মেডিক্যাল সার্ভিস, নিউ মেডিকম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ ক্যাপিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে আবেদ্বীন হাসপাতাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে মতে, এর সংখ্যা হবে ৩৫ থেকে ৪০টি। মোহাম্মদপুর আসাদগেট থেকে শ্যামলী পর্যন্ত যানজট হলে অনেক প্রাইভেট কার ও অটো রিক্সা চালক কলেজ গেটের হুমায়ুন রোড হয়ে অন্য সব অলিগলি দিয়ে চলাচল করে থাকে। কিন্তু আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ওই সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে সৃষ্টি হয় অনাকাক্সিক্ষত যানজট। আর ওই সব প্রতিষ্ঠান অনেকটা আবাসিক বাসাবাড়ি ও ফ্ল্যাটের সঙ্গে মিশে গেছে। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তো দূরের কথা, অভিযানের আতঙ্কে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডটাই খোলামেলা জায়গায় টাঙানো হয় না। চলে ভাড়াটে ফ্ল্যাটে। ওই সব প্রতিষ্ঠানে প্রায় সময় র‌্যাবের অভিযান চালানোর ঘটনা ঘটে। সিলগালা করে দেয়া হয় প্রতিষ্ঠান। কিছুদিন না যেতেই আবার চালু হয় ওই সব প্রতিষ্ঠান। এভাবে রাজধানীর যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা গেছে, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ৫০ গজের মধ্যে তিনটি বেসরকারী হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র। সামনেই একটি ডাস্টবিন। মহল্লার গৃহস্থালির বর্জ্যরে সঙ্গে এখানে হাসপাতালের বর্জ্যও ফেলা হয়। ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, স্যালাইনের ব্যাগ এখানে চোখে পড়ে। মিটফোর্ড হাসপাতালের চারতলায় শল্য চিকিৎসা বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, বর্জ্য ফেলার জন্য আলাদা পাত্র আছে। কোথায় কী বর্জ্য ফেলতে হবে, ব্যবহৃত সুচ কীভাবে ফেলতে হবে তা জানানো হয়েছে বলে জানান নার্সরা। কিন্তু বর্জ্যরে পাত্রে দেখা গেল, সুচগুলোকে সিরিঞ্জ থেকে আলাদা করা হয়নি, পাত্রগুলোর মুখ খোলা। কর্মরত নার্সরা জানান, তাড়াহুড়োয় নিয়মকানুন মানা সম্ভব হয় না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কোন পদ্ধতি মানা হয়। বিভিন্ন পাত্রে ময়লা রাখা হয়। প্রিজমের সঙ্গে চুক্তির পর সুইপার থেকে শুরু করে চিকিৎসক পর্যন্ত সবাইকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার মুখে যে ডাস্টবিন আছে, তাতেই রক্তমাখা গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ফেলতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এ বিষয়ে নার্স ও কর্মচারীরা জানান, হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকায় সব সময় মেডিক্যাল বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাছাড়া অনেক রোগী ও তাদের লোকজন সব ধরনের বর্জ্য বালতিতে মিশিয়ে ফেলেন। এতে অনেক সময় হাত দিয়ে বর্জ্যগুলো আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডে জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল। ৬০ শয্যার এই হাসপাতালের নিচতলায় রাখা আছে ইস্পাতের ঝুড়ি। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঝুড়ির বর্জ্য প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে সুইপাররা নিয়ে আশপাশের ডাস্টবিনে ফেলেন। রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকার সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালের মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ভেতরে ক্যাম্পাস অনেকটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলার জন্য পাত্র রয়েছে। কিন্তু ওই সব বর্জ্য ফেলা হয় ডিসিসি’র ডাস্টবিনে। জরুরী বিভাগের সামনে ড্রেনেজগুলোর মধ্যেও মেডিক্যাল বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ মেডিক্যাল বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি রয়েছে। যেসব বর্জ্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সেগুলো ডিসিসি’র সাধারণ ডাস্টবিনে ফেলা হয় বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাস্তার ধারে রাখা ডিসিসি’র ডাস্টবিনে ঝুঁকিপূর্ণ মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলতে দেখা গেছে। ওই হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণীর এক কর্মচারী জানান, হাসপাতালের ভেতরে মেডিক্যাল বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট পাত্রে রাখা হয়। কিন্তু ওই সব বর্জ্য ফেলে দেয়া হয় রাস্তার ধারে রাখা ডিসিসি’র ডাস্টবিনে। এভাবে রাজধানীর অধিকাংশ সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলে দেয়া হয় রাস্তায় উন্মুক্ত সাধারণ ডাস্টবিন, নালা, নর্দমা ও নদীতে। শর্ত পালন করে না অধিকাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিক ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিকের অনুমোদন পেতে আবেদনপত্রে যেসব তথ্য জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো, হাসপাতাল, ক্লিনিকের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর, মোট শয্যা সংখ্যা, হাসপাতাল, ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার তারিখ, প্রতিষ্ঠানের ধরন, মালিক/মালিকদের ছবি-নাম ও পূর্ণ ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর, মালিক/ মালিকরা সরকারী চাকরি করলে তার বিবরণ এবং না করলে অঙ্গীকারনামা, যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, আমমোক্তারনামার সত্যায়িত কপি, বাড়িভাড়া চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি এবং নিজ বাড়ি হলে দলিলের সত্যায়িত কপি, ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত কপি, রোগীদের জন্য বিভাগভিত্তিক সেবা প্রদানের তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে), প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত অস্ত্রোপচার করা হবে তার তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে), প্রতিষ্ঠানে মোট মেঝের (ফ্লোর) পরিমাণ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একক কেবিন সংখ্যা, শীতাতপবিহীন একক কেবিন সংখ্যা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডবল কেবিন সংখ্যা, শীতাতপবিহীন ডবল কেবিন সংখ্যা, সাধারণ ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা, রোগীদের জন্য প্রদত্ত মেঝের পরিমাণ, কেবিন ও ওয়ার্ডের প্রকৃত মেঝের পরিমাণ, অস্ত্রোপচার কক্ষ-অস্ত্রোপচার কক্ষের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে) ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কী না, প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে), প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তালিকা (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে), বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি ও সম্মতিপত্র, সর্বক্ষণিক চিকিৎসকদের ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র ও সরকারী চাকরি না করার অঙ্গীকারনামা, সর্বক্ষণিক নার্সদের ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র ও সরকারী চাকরি না করার অঙ্গীকারনামা, সর্বক্ষণিক ঝাড়ুদার, ওয়ার্ড বয়, আয়ার ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্রের কপি, সর্বক্ষণিক অন্য কর্মচারীদের ছবি, নাম, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত কপি এবং নিয়োগপত্র, যোগদানপত্রের কপি, প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত অন্যান্য সুবিধাদি (বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে), পানি সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী, জরুরী বিদ্যুত ব্যবস্থা (জেনারেটর), আলো-বাতাস ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় আছে কী না? প্যাথলজি পরীক্ষার সুযোগ আছে কী না? কিন্তু সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রদত্ত আবেদনপত্রের ৩১টি তথ্য কাগজে-কলমে ঠিক থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় না। চলছে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই ॥ রাজধানীর অলিগলিতে গজিয়ে ওঠা ক্লিনিকের মতো নামকরা হাসপাতালগুলোও চলছে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া। পরিবেশ আইন অনুযায়ী যে কোন ধরনের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। তবে এ আইন কেবল কাগজেই বন্দি, হাসপাতালগুলো মোটেই তোয়াক্কা করছে না আইনের। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ঢাকা মেট্রো অফিসের এক তদন্ত কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, সম্প্রতি শতাধিক হাসপাতালকে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কারণে নোটিস দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এ তালিকায় রয়েছে শহরের অলিগলিতে গড়ে ওঠা ক্লিনিকও। পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও তারা সেটা নেয়নি। ঢাকার এমন কোন হাসপাতাল-ক্লিনিক নেই যেটা পুরোপুরি আইন মেনে চলছে। পরিবেশ অধিদফতর প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ক্লিনিক-হাসপাতালে নোটিস পাঠায়। সত্যিকার অর্থে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মেনে চলে এমন কোন হাসপাতাল নেই। কোন না কোন ত্রুটি থাকবেই। আমরা তাদের চাপে রাখছি যেন একসময় পুরোপুরি নিয়ম মেনে চলে। আশা করি আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে সবাই নিয়ম মানবে বলে মনে করছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ঢাকা মেট্রো অফিসের ওই কর্মকর্তা। আবাসিক এলাকা থেকে হাসপাতালসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরানোর নির্দেশ ॥ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ অননুমোদিত এবং অনুমোদিত সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছয় মাসের মধ্যে আবাসিক এলাকা থেকে সরাতে হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক নিয়মিত বৈঠকে একথা বলা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম সাংবাদিকদের একথা জানান। বিশেষজ্ঞরা যা বলেন ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম দাবি করেছেন, বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর কার্যক্রম তদারকিতে পরিদর্শন টিম আছে। ত্রুটি ধরা পড়লে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করা হয় না বলে জানান পরিচালক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, হাসপাতাল-বর্জ্য সাধারণ গৃহস্থালি বর্জ্যরে চেয়েও ক্ষতিকর। সিরিঞ্জ ও স্যালাইনের ব্যাগ হেপাটাইটিস বি ও সিসহ কিছু রোগের জীবাণু ছড়ায়। রক্ত, মূত্রসহ বিভিন্ন তরল বর্জ্য নর্দমায় ফেলে দিলেই তা দূষণমুক্ত হয়ে যায় না। নর্দমার ভেজা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে টাইফয়েড ও আমাশয়ের মতো পানিবাহিত রোগের জীবাণু বহুদিন বেঁচে থাকে। রক্ত, পুঁজ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইনের ব্যাগের মতো জীবাণুবাহী বর্জ্য পৃথক পাত্রে রাখা দরকার। আবার সুচ, সিরিঞ্জ জীবাণুবাহী বর্জ্য হলেও এতে আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলোর জন্য পাত্র হবে আলাদা। আর জীবাণু বহন করে না এমন বর্জ্য রাখার জন্য পৃথক পাত্র থাকা দরকার। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষক মুশতাক হোসেন বলেন, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থেকে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, চর্মরোগ এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার উচ্ছেদ করতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শত শত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেশের স্বাস্থ্যসেবার জন্য চরম হুমকি।
×