ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

আমাদের আস্থার বাতিঘর

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৯ এপ্রিল ২০১৬

আমাদের আস্থার বাতিঘর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যারা অপছন্দ করেন তাদের সবার একটা কমন মনস্তত্ত্ব¡ আছে। সেটা পিএইচডি ডিগ্রীধারী বা সার্টিফিকেটহীন বাঙালী যেই হোক না কেন, এক জায়গায় গিয়ে তারা সবাই এক ভাষায় কথা বলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই সরকারের অন্ধ সমর্থক নই। তারা অনেক সুযোগের সঠিক ব্যবহার দূরে থাকুক অপব্যবহার করছে। আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা ও জীবনের প্রশ্নে এমন উদাসীনতা আর যথেচ্ছাচার আগে দেখা যায়নি। বিশেষত মন্ত্রী বিচারপতি এমনকি আমলা বা বাহিনীর মানুষরাও এখন মুখর। একটা বিষয় নিশ্চিত নিয়ন্ত্রণজনিত সমস্যার আবর্তে আছে সরকারী দল। মাননীয় প্রথানমন্ত্রীকে যারা অপছন্দ করেন তারাও মানেন তিনি স্পষ্টভাষী। ঠোঁটকাটা মানুষ সমসাময়িক মানুষদের কাছে আতঙ্কের। বিশেষত যারা সুবিধাবাদী আর বর্ণচোরা তারা এসব মানুষের কথার আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে পান। নিজের বিকৃত চেহারা আর বদলে যাওয়া সুরতে ভয় পেয়ে বিরোধিতা শুরু করেন। অথচ যিনি বলেন সময় তাঁকে সময়ের উর্ধে রাখে। শেখ হাসিনা অতদূর যেতে পারবেন কিনা জানি না তবে তাঁর ভেতর সত্য বলার প্রবণতা আছে যা রাজনৈতিক নেতাদের জীবন থেকে প্রায় উধাও। এই ক’দিন আগে মার্চের শেষ দিকে তিনি স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে অতিউৎসাহী দলীয় নামে পরিচিত কিছু মানুষের সেøাগান শুনে অবাক হয়ে জানতে চেয়েছেন : এরা কারা? এমন কথা তো আগে শুনিনি। রাখ ঢাক থাকলে তিনি কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন। শুধু তাই নয় তিনি চাইলে যেকোন কাউকে দিয়ে খবর নেয়া বা এ্যাকশনে যাওয়া এক মুহূর্তের ব্যাপার। সেটা না করে তিনি যে সরাসরি সবার সামনে তাঁর বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন এটাই তাঁর সততা। এই যে প্রজন্ম লীগের নামে সেøাগান এটা তাঁর কানে না গেলে তিনি জানতেনই না এমন একটা দল গড়ে উঠেছে দলের অজান্তে। এখানেই মূল প্রশ্নটা। দলের অজান্তে নাকি দলের মাফিয়া চক্র ও গড ফাদারদের প্রশ্রয়ে? এখানে আরও একটি বিষয় পরিষ্কার প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু জানতে দেয়া হয় না। এটা স্বাভাবিক দেশ ও সরকারের শীর্ষ নির্বাাহী ঢালাওভাবে মিশতে পারবেন না। নিরাপত্তার কারণে সেটা অবাস্তব বা অসম্ভব। তাঁকে নিরাপদ বেষ্টনীতে রাখাই রেওয়াজ। কিন্তু উন্নত বা আধুনিক দেশের সঙ্গে আমাদের তফাৎ এসব দেশের সরকারপ্রধানরা অনেক বেশি পাবলিক ঘনিষ্ঠ আর তাঁরা যাদের ওপর নির্ভর করেন তারা নীরব থাকলেও মিথ্যা বলেন না বা ভুল ইনফরমেশন দেন না। আরও একটা ব্যাপার আছে কোন না কোনভাবে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান বা দলীয় প্রধানকে খুশী রাখার জন্য স্তাবকরা সঠিক পরিস্থিতি বা নেগেটিভ ব্যাপারগুলো দৃষ্টিগোচর করাতে চান না। এতে দল সরকার এমনকি দেশের লোকসান হলেও তাদের কিছু যায় আসে না, কারণ এরা আসলে দলের তৃণমূলের কেউ না। এরা দল থেকে উঠে আসাও নয়। এদের কমিটমেন্ট মূলত নিজেদের স্বার্থ আর পদবীর কাছে। যে যখন পাওয়ারে নিজেকে নিরাপদ রাখাই তাদের কাজ। মনে পড়ে তিয়াত্তরের নির্বাচনের পর ঢাকার সূত্রাপুর-কোতোয়ালি আসনে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী মেজর জলিলের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দেখে বঙ্গবন্ধু নিজেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। স্তাবকরা তাঁকে প্রচার পর্যন্ত করতে দেয়নি। মূল কথাটা হলো আজও যেন সেই ঘটনার ধারাবাহিকতা চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়ত জানেন না ওলামা লীগ শিশু লীগ হকার্স লীগ দখলদার লীগ এসব নামেও সংগঠন আছে। মানলাম তাঁর জানার কথা নয়। আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা দাবি করেন তারা রাজপথ ছাড়েননিই বা যারা এখনও লড়াই করে জিতবেন বলে মনে করেন তারা জানেন না? জানলে তাদের একশন কোথায়? ওলামা লীগের নামে যেসব প্রচার প্রপাগা-া তাতে দলটির মূল প্রাণ বা শক্তি বলয়ে এখন সংশয় বিরাজমান। এদেশের প্রগতিশীল রাজনীতির চালিকাশক্তি যেসব মানুষ ও আদর্শ তাদের ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে কঠিন সব কথা বলছে ওলামা লীগ। শুধু বলা নয়, মাঠে ময়দানে হাজিরও হয় তারা। তারপরও এ ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে না জানানোর কারণ কি? তিনি যে অনেক কিছুই জানেন না সে ধারণা থেকেই আমরা এ প্রশ্ন রাখতে পারি। বলছিলাম বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে যারা অপছন্দ করেন সে সব রসুনের শেষ কোষ কিন্তু একসূত্রে গাঁথা। এরা সব কথার পর যে কথাটা বলেন তার সারমর্ম একটাই। কেন তিনি এত বছর পর রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেন। কেন তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাপারে এতটা কঠোর। যে কারণে মুসলিম লীগাররা ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে মানলেও রাজনৈতিকভাবে কখনও বঙ্গবন্ধুকে মানতে পারেনি সে একই কারণে পাকপ্রীতি পাকিস্তান প্রেম মুক্তিযুদ্ধে দেশ ভাঙ্গার চক্রান্ত মনে করা প্রতিক্রিয়াশীলরা তাঁকে মানে না। তাঁর যে কোন অর্জন ও কাজকেই ঘৃণা করে এরা। তাঁর বিপরীতে এমন এক নেতাকে সামনে আনতে চায় যার জীবনে আদর্শ বলে কিছু নেই। যার পুত্র একজন দাগী দুর্নীতিবাজ আর যাদের মূল কাজ হলো ভারত বিরোধিতার নামে ভারতের পা চাটা আর পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশ চালানো। বঙ্গবন্ধু কন্যার সমস্যা একটাই তাঁকে ঘিরে থাকে স্তাবক ও সুবিধাবাদীর দল। কারণ তারা জানে সত্য জানলে তিনি কথা বলবেন আর তাতে দেশ জনগণ ও রাজনীতির মঙ্গল হবে। প্রধানমন্ত্রী সেদিন একটা কথা বলে আমার মতো অজস্র মানুষের বুক ভরিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন এদেশে যত অটিস্টিক শিশু সবার দায়িত্ব নেবে সরকার। এত বড় কথা এত বিশাল একটা কর্তব্যের অঙ্গীকার আগে কেউ করেনি বলেওনি। এগুলো এদের কাছে বিষয় না। বিষয় একটাই যে কোনভাবে তাঁকে ঠেকাতে হবে। কিন্তু কেন? সেটার একটা বড় ব্যাখ্যা একদলীয় শাসনের ঝোঁক। যদি সেটাই হয় তার প্রতিকার কোথায়? কোথায় আপনাদের নিয়মতান্ত্রিক বিরোধী দল? এগুলোর উত্তর না দিয়ে তারা বলে সবকিছুর জন্য দায়ী এ সরকার। দায়ী হলেও প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করা যাবে না। এখন অবদি ইনি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার প্রতীক। আহমদ ছফা একবার লিখেছিলেন আওয়ামী লীগ যখন জেতে তখন শুধু তারাই জেতে আর যখন হেরে যায় তখন পুরো দেশ হেরে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যা জানেন না বা জানতে দেয়া হয় না তার প্রতি যদি একটু সদয় দৃষ্টি দেন আর খবর রাখতে শুরু করেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারবে না। দেশ ও জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে হতাশার অন্ধকারে ঠেলে দিতে দেবেন না।
×