ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশখালীতে লঙ্কাকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৭ এপ্রিল ২০১৬

বাঁশখালীতে লঙ্কাকাণ্ড

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গ-ামারা ইউনিয়নে কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে দুই ভাইসহ চারজনের নিহত হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো ইলেকট্রিক কোম্পানি ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করে বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারিতে। এর জন্য স্থানীয়ভাবে ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণের কথাও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষের বসতভিটা ও কৃষি জমি ইত্যাদি। মূলত বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন নিয়েই দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে গ্রামবাসী। একদল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে। অন্যদল পরিবেশ সুরক্ষাসহ কৃষি জমি-বসতভিটা রক্ষার নিমিত্ত এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বিবদমান দু’পক্ষই সোমবার বিকেলে ইউনিয়নের হাদিপাড়া মাঠে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে। উত্তেজনা প্রশমনে স্থানীয় থানা পুলিশ জারি করে ১৪৪ ধারা। তা উপেক্ষা করে দুই পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছোড়ে কমবেশি ৫০০ রাউন্ড। আর এতেই ঘটে হতাহতের ঘটনা। ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের অপরিহার্যতা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এতে যেন সাধারণ মানুষ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং পরিবেশ বিপর্যয় না ঘটে। দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে একটি মহলের আপত্তি আছে। তবে এও সত্যি যে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত তুলনামূলকভাবে ব্যয়সাশ্রয়ী ও সুলভ। কেননা, দেশেই প্রচুর অব্যবহৃত কয়লার মজুদ আছে। তুলনামূলকভাবে আমদানিকৃত তেল যেমন ফার্নেস অয়েলে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। এতেও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে। তবে আজকাল উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত তৈরি সম্ভব। বাংলাদেশের বড়পুকুরিয়ায় তা হচ্ছেও। তবে এর জন্য স্থানীয় অধিবাসীদের উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করার আবশ্যকতা রয়েছে। অন্যদিকে বাস্তুভিটা ও কৃষি জমি অধিগ্রহণ একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষ সহজে তার বাস্তুভিটা পরিত্যাগ করতে চায় না, এমনকি ক্ষতি পূরণের বিনিময়েও। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে হবে যে বাঁশখালী ও সংলগ্ন এলাকায় অব্যবহৃত সরকারী খাস জমি আছে কিনা! জোরপূর্বক কোথাও কিছু করতে যাওয়া ঠিক নয়। তাতে প্রায়ই ঝগড়া-ফ্যাসাদ অনিবার্য হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত, প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুরের কথা স্মরণ করা যায়। সেখানে তথাকথিত রাজনীতির কূটচালে পড়ে শেষ পর্যন্ত না হলো শিল্পায়ন, না হলো জমির প্রত্যর্পণ। বাঁশখালীতে অনুরূপ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। আমরা চাই সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় পক্ষ-বিপক্ষের সুষ্ঠু মীমাংসা। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুত যেমন অপরিহার্য, তেমনি সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষাও জরুরী। যা কিছু দরকার সব কূল রক্ষা করেই করতে হবে। বাঁশখালীর অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলব, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। অজ্ঞাত তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে পুলিশের মামলাও প্রত্যাশিত নয়।
×