ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুচুক অন্ধকার

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৭ এপ্রিল ২০১৬

ঘুচুক অন্ধকার

সেলিনা জাহান এই পৃথিবীর আকাশ-বাতাস, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, গাছপালা, পশুপাখি সবকিছুই স্বাধীন। পরাধীন কথাটা হয়ত শুধুমাত্র মানুষের বেলাতেই প্রযোজ্য। কারণ মানুষই মানুষকে যুগে যুগে পরাধীন করার প্রয়াস পেয়েছে। আর এই একজন আরেকজনকে পরাধীন করার মানসিকতা এসেছে মানুষের মনের সবচেয়ে জঘন্য প্রবৃত্তি লোভ থেকে। মানুষের জাগতিক, পারলৌকিক লোভই মানুষকে যুগে যুগে হিংস্র হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। লোভেরই এক জঘন্য বহির্প্রকাশ ঘটেছিল বাংলাদেশে, একাত্তরে। পৃথিবীর মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখেছিল একটা শিক্ষিত, ভদ্র জাতির ওপর একটা অসভ্য বর্বর জাত কিভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিভাবে মুহূর্তে তছনছ করে দিয়েছিল একটা গোটা জনপদ। তবে বাঙালী হেরে যায়নি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছিনিয়ে নিয়েছিল শত্রুর হাত থেকে স্বাধীনতা। তিল তিল করে গড়ে ওঠা সেই অমিত সম্ভাবনার স্বাধীন দেশে দ্বিতীয় আঘাত এসেছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাধ্যমে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী না বলে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষও যদি বলা যায় তাহলে হয়ত অত্যুক্তি হয় না, সেই বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল কিছু দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীর হাতে। কিন্তু শত্রুরা তখন জানত না, যে দেশে বঙ্গবন্ধুর মতো মহামানব জন্মগ্রহণ করে সেই দেশকে কখনও দাবিয়ে রাখা যায় না। পৃথিবীর ইতিহাস সভ্যতার ইতিহাস। কিন্তু যুগে যুগে কিছু কুশিক্ষিত, লোভী মানুষ পদানত করেছে এই সভ্যতা। পরিসংখ্যানে হয়ত দেখা যাবে, যে অর্থে আমরা মানুষকে শিক্ষিত বলি সেই অর্থে শিক্ষিতের হার পুরো পৃথিবীতে খুবই নগণ্য। কিন্তু এরাই কোনরকম হানাহানি, মারামারিতে অংশগ্রহণ না করে যুগের পর যুগ মানব সভ্যতা এগিয়ে নেয়ার জন্য নীরবে কাজ করে গেছে। এই যে পৃথিবীরজুড়ে কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতী এবং এমনই অনেক সাধারণ পেশায় নিয়োজিত লোকজন, এরাই সব সময় পৃথিবীর সৌন্দর্য বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। আর উল্টোদিকে দেখা গেছে সার্টিফিকেটসর্বস্ব অথবা তকমাধারী কিছু তথাকথিত শিক্ষিত লোক অন্যান্য পেশার সাধারণ লোককে পদানত করার এক অশুভ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। আর কিছু দেশের স্বঘোষিত মোড়ল তাদের বিত্ত-বৈভব বাড়ানোর জন্য তাদের লোলুপ দৃষ্টি ফেলেছে প্রাকৃতিক সম্পদে বলীয়ান অন্যান্য দেশের ওপর। তাদের কুকর্ম হাসিল করার জন্য তারা নানা রকম ফন্দি-ফিকিরের আশ্রয় নেয়। যে দেশের সম্পদ লুট করার খায়েশ হয় সে দেশের স্থানীয় কিছু লোকজনকে তারা বাছাই করে। যারা লোভী, হিংস্র এবং সম্পদের লোভে এহেন কুকর্ম নেই যা তারা করতে পারে না। দেশ, দেশের মাটি, দেশের মানুষ তাদের লোভের কাছে কোন অর্থই বহন করে না। এদের টার্গেট করে প্রথমে ধর্মের লেবাস পরানো হয়। মানুষের মনের পবিত্রতম স্থান যেখানে যার যার ধর্মের বাস, সেখানে এই সমস্ত লোকজন আঘাত হানে। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। সৃষ্টি হয় অরাজকতা। আর এরই সুযোগ নেয় দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা। এরাই দেশে দেশে হিংসা-দ্বেষ, ধর্মান্ধতা, যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে চায় নিজেদের স্বার্থে। তবে এসব ষড়যন্ত্র বেশিদিন টিকে থাকে না। এসব ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি পেতেই হয়। যেমন শাস্তি পেয়েছে তারা একাত্তরে এবং এখনও পাচ্ছে। আর সারা পৃথিবীতে যারা অশান্তি সৃষ্টি করেছে তারা এখন ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের হাতে মার খাচ্ছে। মানুষ যখন সঠিক নেতৃত্ব পায়, হতাশা কাটিয়ে উঠে আত্মনির্ভরশীল হয়, নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরে পায় তখন এই সমস্ত চক্রান্তকারী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এখন দেশে-বিদেশে সেই প্রক্রিয়াই চলছে। অচিরেই সভ্য মানুষের চারণভূমিতে পরিণত হবে এই পৃথিবী। এগিয়ে যাবে মানব সভ্যতা। পরাধীনতা বা স্বাধীনতার বিপক্ষ বলে কিছু থাকবে না। মহাখালী, ঢাকা থেকে
×