ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুলাইয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন

একদিকে পদ হারানোর ভীতি, অন্যদিকে পদোন্নতির তদ্বির

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৬ এপ্রিল ২০১৬

একদিকে পদ হারানোর ভীতি, অন্যদিকে পদোন্নতির তদ্বির

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জুলাইয়ে আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। আর সেই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাদের মধ্যে একদিকে যেমন পদ-পদবী হারানোর ভীতি কাজ করছে, অন্যদিকে চলছে পদোন্নতির জোর তদবিরও। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে থাকা নেতারা স্ব স্ব পদ টিকিয়ে রাখতে কিংবা পদোন্নতি পেতে দলটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে এখন সরব । দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃপাদৃষ্টি লাভেও চেষ্টা-তদ্বিরের কমতি নেই। এক ঝাঁক নারী নেত্রী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে শুরু করেছেন জোর তৎপরতা। আগামী ১০ ও ১১ জুলাই দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। জাঁকজমকপূর্ণ ও আড়ম্বরভাবে সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চললেও স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সম্মেলন হতে পারে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রকেও হাতে রাখা হয়েছে। আগামী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেই স্থান চূড়ান্ত করা হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের জাতীয় কাউন্সিল অন্য সময়ের তুলনায় উৎসবমুখর, আধুনিকতা ও ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি এবং প্রযুক্তি নির্ভর করতে চায় আওয়ামী লীগ। এবারের কাউন্সিলে দল গঠনের ইতিহাস থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের গৌরবময় ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশী-বিদেশী অতিথিও থাকবেন অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। জানা গেছে, জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় দু’দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আগত জেলার নেতাদের মনের কথা শুনবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছরে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রাণখুলে কথা বলতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। তাই এবারের কাউন্সিলে তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ, সুপারিশ ও সাংগঠনিক বাস্তব অবস্থা জানতে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার একজন করে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদককে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হবে। এর আগে ২০০৯ ও ২০১২ সালের জাতীয় কাউন্সিলে তৃণমূলের মধ্যে প্রতি বিভাগের একজন করে নেতাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পান। কিন্তু এবারই প্রথম সব জেলার নেতার কথা শুনেই আগামী তিন বছরের জন্য শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন করতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এদিকে সম্মেলনের দিন-ক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে আগ্রহী নেতারা দলটির সাংগঠনিক কর্মকা-ে ততই সক্রিয় হয়ে উঠছেন। দীর্ঘদিন যেসব নেতাদের আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচীতে দেখা পাওয়া যেত না, সম্মেলনকে সামনে রেখে তাদের সরব উপস্থিতি থাকছে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই। দলটির বাঘা বাঘা নেতাদের বাসাতেও ধর্ণা দিচ্ছেন পদ প্রত্যাশীরা। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যপদ পেতে এক ঝাঁক নারী নেত্রী এবং ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতাদের তৎপরতাও এখন উল্লেখ করার মতো। জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে সভাপতিম-লীর সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকম-লীর প্রায় এক ডজন নেতা পদ হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন। পদোন্নতি পাবেন এ আত্মবিশ্বাসও রয়েছে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার। আবার পদোন্নতি না পেলেও বর্তমান পদ যেন বহাল থাকে তা নিয়েও চলছে তদবির। এরই অংশ হিসেবে দলীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ, ধানম-ির কার্যালয়ে আনাগোনা ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে যাতায়াত বেড়েছে পদ প্রত্যাশী নেতাদের। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কাজেও ব্যস্ত তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে অনুষ্ঠানগুলো হয় সেগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি এখন আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম এ রাজনৈতিক দলে নেতা হওয়ার লড়াই যেমন থাকে, তেমনি সম্মেলন ঘনিয়ে এলে পদ হারানোর আতঙ্কও থাকে। তবে আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে ঐতিহ্যই হচ্ছে এ দলটিতে নেতা নির্বাচিত হয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। এখানে সাংগঠনিক পারফরমেন্সই বিবেচনা নেয়া হয়। দলের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল আসতেই পারে। কেউ আসবেন, কেউ বিদায় নেবেন এটাই নিয়ম। তিনি বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আওয়ামী লীগের এবারের ২০তম কাউন্সিল হবে উৎসবমুখর ও প্রযুক্তি নির্ভর। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ জনকণ্ঠকে বলেন, দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জেলার নেতাদের বক্তব্য শোনা এবং সারাদেশের সাংগঠনিক চিত্র জানতেই দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি সংক্ষিপ্ত সম্মেলন হলে নেত্রীর বক্তব্য বা সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ ছাড়া অন্য বক্তব্যের জন্য সময় কম থাকায় সুযোগ হয় না। জেলা পর্যায়ের যেসব নেতা আসেন তারাও কথা বলার সুযোগ পান না। কিন্তু এবার প্রত্যেক জেলার সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিক রিপোর্টে পেশসহ তাঁদের মনের কথা দলীয় সভাপতিকে জানাতে পারবেন। সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলটির সব পর্যায়ের নেতাদের দৃষ্টি হচ্ছেÑ কে হচ্ছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক? এ পদে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এবারও তিনি নির্বাচিত হলে সৈয়দ আশরাফ সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করবেন। এ পদে আসতে চান এমন কয়েকজন নেতাও জোর তদবিরে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা কোন নেতাই আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। সবার মুখেই এক কথা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁকে চান তিনিই হবেন সাধারণ সম্পাদক। ফলে এবারও এ পদে কোন ভোটাভুটি কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা যে নেই তা বেশ জোরের সঙ্গেই বলছেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। দলটির নানা পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা তিন যুগ্ম সম্পাদক, দু’জন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দু’জন সম্পাদকম-লীর সদস্য এবারের সম্মেলনে পদোন্নতির পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। গত প্রায় ৮ বছরে এসব নেতারা সাংগঠনিক কর্মকা-ে তাঁদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। তবে দু’জন সভাপতিম-লীর সদস্য, তিন সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকম-লীর কয়েকজন সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় হাফ ডজন সদস্য পদ হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন। সাংগঠনিক কাজে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। অবশ্য গঠনতন্ত্র সংশোধন করে পদ বাড়ানো হলে বাদ পড়ার তালিকায় থাকা তিন-চারজন শেষ পর্যন্ত টিকে যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। গুঞ্জন রয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন এমন বেশ কয়েকজনকে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সভাপতিম-লীর সদস্য পদে আনা হতে পারে। একইসঙ্গে সংস্কার ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে বাদ পড়ে থাকা বেশ কয়েকজন নেতাও পুনরায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ফিরতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
×