ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরত আনতে ইইউর প্রস্তাবে সাড়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৬ এপ্রিল ২০১৬

অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরত আনতে ইইউর প্রস্তাবে সাড়া

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইউরোপে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সেখানকার অবৈধ বাংলাদেশীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া অবৈধ অভিবাসনের বিপদ তুলে ধরে জনসচেতনতা বাড়াতে সহায়তা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিবাসন নিয়ে একটি বৃহত্তর আলোচনার কাঠামো তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক অভিবাসন সংলাপে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনারের পৃথক বৈঠক হয়েছে। অভিবাসন সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। আর ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থাটির ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান লেফলার। সংলাপে ১০ সদস্যের একটি ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সংলাপ শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের সকল বিষয় ও ভবিষ্যতে সহযোগিতা ?কিভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা জানি? ইউরোপের বিভিন্ন অংশে বাংলাদেশের লোকজন ?অবৈধ হয়ে পড়েছেন। কিভাবে তাদের নিরাপদে দেশে ফি?রিয়ে আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিবাসন নিয়ে একটি বৃহত্তর আলোচনার কাঠামো তৈরির বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের নেতা ক্রিশ্চিয়ান লেফলার সাংবাদিকদের বলেন, অভিবাসনকে একটি কাঠামোতে নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় বসতে আমরা রাজি হয়েছি। কারণ বিষয়টি বাংলাদেশ ও ইইউ দু’পক্ষের জন্য জরুরী। বৈধ অভিবাসন সমাজের জন্য যে কল্যাণ বয়ে আনে সেটা নিয়ে এবং অবৈধ অভিবাসনের ফলে তৈরি চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সবগুলো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিতভাবে নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসনের ব্যবস্থাপনা এবং অবৈধ অভিবাসনের প্রক্রিয়াকে সুশৃঙ্খলভাবে ও সম্মানজনক উপায়ে মোকাবেলা করা জরুরী, যাতে যেসব লোকজন দেশে ফিরবেন তারা সমাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে এগিয়ে নিতে পারেন। ইউরোপ থেকে ৮০ হাজার বাংলাদেশী নাগরিককে ফেরত পাঠানো হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে ক্রিশ্চিয়ান লেফলার বলেন, গণমাধ্যম এ সংখ্যা কোথা থেকে পেল তা আমি জানি না। তবে অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিক আছেন। ইউরোপজুড়ে লোকজন নিয়মিতভাবেই এ অবস্থায় পড়ছেন। কারণ কেউ অবৈধপথে গেছেন, কেউ এক দেশে গিয়ে অন্য কোথাও অবৈধ হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের লোকজন যাতে নিরাপদে ফিরে এসে সামাজিক প্রক্রিয়ায় ফলপ্রসূভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন সেজন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছি। সংলাপের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রথমবারের মতো অভিবাসন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংলাপে ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসনের বিভিন্ন বিপদ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহায়তা দেবে বলেও জানিয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের যেখানেই অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনা সরকারের নীতি। কোন অবৈধ বাংলাদেশী সেখানে থাকলে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে আনবে বলেও জানানো হয়েছে। সংলাপে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে উন্নয়নের সঙ্গে অভিবাসন, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া অভিবাসনের বিষয়ে বৃহত্তর সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ইউরোপে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে মুসলিম উদ্বাস্তু ও সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে গোটা ইউরোপে এখন অভিবাসন সমস্যা চলছে। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কিছু বাংলাদেশীও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। সে দেশগুলো এখন তাদের ফেরত পাঠাতে চাইছে। বাংলাদেশী প্রমাণিত হলে পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে বাংলাদেশ তাদের ফেরত আনবে এটিই সরকারের নীতি। ইতোমধ্যেই অনেক বাংলাদেশীকে বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরতও নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার বৈঠকে ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলকেও এই বার্তা দেয়া হয়েছে, ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেলে তাদেরও ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা হাইকমিশনারের বৈঠক ॥ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার সৌজন্য বৈঠক করেছেন। মালদ্বীপের হাইকমিশনার ড. মোহাম্মদ আসীম ও শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ইয়াসুজা গুনাসেকারা মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মালদ্বীপের হাইকমিশনারকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ উভয় দেশেরই কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তিনি সমুদ্র অর্থনীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গভীর আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন এবং গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের বিষয়ে মালদ্বীপের সহযোগিতার অনুরোধ জানান। জবাবে হাইকমিশনার জানান, এ বিষয়ে মালদ্বীপ সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। হাইকমিশনার ড. আসীম বাংলাদেশ হতে বালি আমদানির বিষয়ে মালদ্বীপের আগ্রহের কথা জানান। এছাড়াও মালদ্বীপের বহু ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজে পড়তে আগ্রহী বলেও তিনি জানান। এছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার ইয়াসুজা গুনাসেকারা। বৈঠককালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও হাইকমিশনার বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ব্যবসায় ও বাণিজ্য সহায়তা, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন। শাহরিয়ার আলম শ্রীলঙ্কার নতুন হাইকমিশনারকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সকল সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
×