ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রূপকল্প ২০২১ সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোতেও আসছে পরিবর্তন

একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী করতে ডাকঘর পরিণত হচ্ছে ই-সেন্টারে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩ এপ্রিল ২০১৬

একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী করতে ডাকঘর পরিণত হচ্ছে ই-সেন্টারে

সমুদ্র হক ॥ দেশের ডাকঘরের কার্যক্রমে পরিবর্তন আসছে। কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পোস্ট অফিস যখন হাঁফিয়ে উঠে লোকসান গুনছে তখন একবিংশ শতকের উপযোগী করতে ই-পোস্ট অফিসে (ডিজিটাল) রূপান্তরিত করা হচ্ছে। এজন্য পোস্ট অফিসের সার্বিক কার্যক্রম ই-সেবায় এনে নতুন কর্মসূচী চালু করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার পোস্ট অফিসকে ই-সেন্টারে রূপান্তরিত করা হবে। প্রাথমিকভাবে চলতি অবকাঠামোর ওপরই পোস্ট অফিসের সকল সেবাকে ডিজিটালের আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে রূপকল্প (ভিশন) ২০২১ কে সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর স্থাপনাতেও পরিবর্তন আনা হবে। একটা সময় পোস্ট অফিসের প্রধান কয়েকটি কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল, চিঠি আদান-প্রদানের জন্য খাম পোস্টকার্ড ডাকটিকেট বিক্রি, মানি অর্ডার প্রেরণ ও গ্রহণ, ডাকঘর সেভিংস ব্যাংক। ষাটের দশকে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ আওতাবহির্ভূত এলাকার পোস্ট অফিসে ছিল টেলিগ্রাম ব্যবস্থা। একটা সময় চিঠির আদান-প্রদান ও টাকা পাঠানোর মানি অর্ডার সার্ভিস এতটাই অপরিহার্য ছিল যে পোস্ট অফিস মানব জীবনের আনন্দ বেদনা আশা আকাক্সক্ষার বড় জায়গাটি নিয়ে থাকত। দিনে দিনে কম্পিউটার যুগ তথা ডিজিটাল যুগ আসায় মানুষের জীবনও যান্ত্রিক হতে শুরু করে। ব্যক্তিগত চিঠি প্রণয় ভালোবাসা স্নেহ মমত্ববোধ আত্মীয়তা আন্তরিকতা পারিবারিক চিঠি লিখা কমতে শুরু করে। ডিজিটাল যুগে চলে আসে সেল ফোনে কথা, টেক্সট মেসেজ, ই-মেইল, স্কাইপ, ভাইবার, ইমো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ কত কী-ই...। মানি অর্ডারের বদলে চলে আসে মোবাইল ফোনে মানি ট্রান্সফার। অফিসিয়াল চিঠি ডকুমেন্ট পাঠাতে চালু হয় কুরিয়ার সার্ভিস। এ অবস্থায় পোস্ট অফিসের মান্ধাতা আমলের কার্যক্রম প্রতি পদেই হোঁচট খেতে থাকে। নিত্য বছর চিঠি মানি অর্ডার পার্সেল ইত্যাদি কমে যাওয়ায় চরম লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় পোস্ট অফিস। সরকার ভর্তুকি দিয়ে চালাতে থাকে সরকারী এই কার্যক্রম। এই পোস্ট অফিসকেই চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ বছর। শহর গ্রামাঞ্চলে যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) চালু আছে তারই আদলে পোস্ট অফিসকেও ঢেলে সাজানো হবে। সব ধরনের চিঠি দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থার সঙ্গে দেশজুড়ে ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার সার্ভিস চালু করা হবে। যাতে প্রেরিত টাকা প্রাপক দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাতে পায়। ২ হাজার ১০ সালে এই সার্ভিস পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১০৪টি পোস্ট অফিসে চালু করা হয়। এর সফলতায় বর্তমানে দেশের সকল শহর গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ই-মানি অর্ডার চালু করা হবে। বর্তমানে চালু থাকা মানি অর্ডার ফর্মের মাধ্যমে টাকা পাঠানো ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ যুগে তা অচল। সূত্র জানায়, এ বছরের মধ্যেই প্রধান ডাকঘর সকল জেলা ও উপজেলার পোস্ট অফিসসহ ১ হাজার ১৫০টি পোস্ট অফিসে ই-মানি অর্ডার সেবা চালু হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল পোস্ট অফিসের আওতায় আসবে। নতুন করে এ কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস), সাধারণভাবে মোবাইল মানি অর্ডার। পোস্ট অফিস সেভিংস ব্যাংক নামে টাকা জমানোর যে খাত চালু আছে তারও পরিবর্তন হবে। শহর থেকে মাঠ পর্যায়ের সকল মানুষকে এ ব্যাংকিং সার্ভিসের আওতায় আনার লক্ষ্যে পোস্টাল ক্যাশ কার্ড সার্ভিস চালু হবে। যাতে দেশের সকল নাগরিক সহজে অপারেট করা পোস্ট অফিস ব্যাংকিংয়ের নতুন সেবা পায়। বর্তমানে পোস্টাল ক্যাশ কার্ড সার্ভিসটি ঢাকা ও কুমিল্লার ৩১টি পোস্ট অফিসে চালু আছে। পর্যায়ক্রমে তা কমার্শিয়াল মূল্য আছে দেশের এমন জায়গায় সম্প্রসারিত হয়ে ২০২১ সালের মধ্যে এ সেবা সারাদেশে পৌঁছানো হবে। পোস্টাল ক্যাশ কার্ড চালু হলে গ্রাহকদের নগদ অর্থের বহন অনেকটা কমে যাবে। এ ধরনের ক্যাশ কার্ড ভাঙ্গাতে পোস্ট অফিসও অটো টেলার মেশিন (এটিএম) স্থাপন করবে। এই ক্যাশকার্ড ডেবিট কার্ড ক্রেডিট কার্ডের মতোই হবে। ডাক বিভাগ চিঠিপত্র ও বাণিজ্যিকভাবে জিনিসপত্র পৌঁছাতে ই-কমার্স, এম-কমার্স ও অন্যান্য সেবা চালু করতে আগামী বছরের (২০১৭) জুন মাসের মধ্যে ১১৮টি উন্নত মানের ভারি যানবাহন কিনবে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ভগ্নপ্রায় ২১৭টি পোস্ট অফিসকে সংস্কার করে ডিজিটাল সেবার আওতায় আনা হবে। ডাক বিভাগ বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট (প্রসেস অটোমেশন অব পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট) নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান ডাকঘরসহ ১৩৪টি পোস্ট অফিসে সর্টিংসহ যাবতীয় কার্যক্রম কম্পিউটারের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই এ্যাপস ও সফটওয়্যার সারাদেশের পোস্ট অফিসে স্থাপিত হবে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে দেশের ১ হাজার পল্লী পোস্ট অফিসকে আইসিটি এবং ১ হাজার ৪৩৮টি পোস্ট অফিসকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। পোস্ট অফিসের সেবাকে আরও উন্নত করতে যশোরে সেন্ট্রাল পোস্টাল ডাটা রিকভারি সেন্টার স্থাপিত হবে।
×