ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত-বিএনপি কর্মীরা আলীগে ঢুকে নির্বাচনের মাঠ অশান্ত করছে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৬ মার্চ ২০১৬

জামায়াত-বিএনপি কর্মীরা আলীগে ঢুকে নির্বাচনের মাঠ অশান্ত করছে

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ জামায়াত ও বিএনপি থেকে আ’লীগে যোগ দেয়া নয়া নেতাকর্মীদের একের পর এক সহিংস ঘটনায় শান্ত বরিশাল অশান্ত হয়ে উঠেছে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী যখনই সুষ্ঠু ভোটের ঘোষণা দিয়েছেন ঠিক তখনই জেলার এক সময়ে রক্তাক্ত উত্তর জনপদ মুলাদির কাজীরচর, গৌরনদীর সরিকল ও নলচিড়া, উজিরপুরের জল্লা, আগৈলঝাড়ার বাকাল ও রতœপুর, বাকেরগঞ্জসহ অন্যান্য ইউনিয়নে আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা ক্যাডারদের। সূত্রমতে, সর্বহারাদের আনাগোনার পর বিএনপি ও জামায়াত থেকে আ’লীগে যোগ দেয়া কর্মীদের একের পর এক সহিংস ঘটনায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা, মামলা ও হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্রায় প্রতিদিনই আহত হচ্ছে অসংখ্য নেতাকর্মী। শুধু সহিংসতা করে ক্ষান্ত নয়, ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত কতিপয় প্রার্থীর আশ্রিত বিতর্কিত জামায়াত-বিএনপি ও নিষিদ্ধ সর্বহারা পার্টির সদস্যরা সরকারের ভারমুর্তি ক্ষুণœ করতে ২২ মার্চের নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে রাখারও হুমকি অব্যাহত রেখেছে। নৌকা মার্কার প্রার্থী ব্যতীত অন্যদলের মনোনীত কিংবা স্বতন্ত্র অধিকাংশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতিসহ ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকির পাশাপাশি ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারই ধারাবাহিকতায় কয়েকটি ইউনিয়নের ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিকাংশ ইউনিয়নের প্রার্থী ও ভোটার জানান, নৌকা মার্কার প্রার্থীর দায়ের করা মিথ্যা মামলা ও পুলিশ দিয়ে হয়রানি শুরু করায় ইতোমধ্যে অনেক প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের এলাকা ছাড়তে হয়েছে। ফলে শঙ্কায় রয়েছেন অন্যসব ইউনিয়নের বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ওইসব প্রার্থী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন সুফল পাননি। সাধারণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার কেড়ে না নেয়ার জন্য ভুক্তভোগী প্রার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাতক্ষীরায় সংঘর্ষ স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে জানান, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে দশজন আহত হয়েছে। এ সময় ১০-১২টি মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ব্রিজ এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে মেম্বার মোশারফ হোসেন, সোহেল গাজী, আক্তারুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, শরীফ হোসেন, মিঠু, আরিফ বিল্লাহ ও ওমর ফারুক মুকুলের নাম জানা গেছে। তাদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কুলিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুল হক জানান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমাদুলের লোকজন সদলবলে পুষ্পকাটির দিকে যাওয়ার পথে তার ছেলে শরীফসহ কর্মীদের ওপর হামলা করলে পাঁচজন আহত হয়। এরপর আসাদুলের লোকজন ইমাদুলের লোকজনকে ধাওয়া করে পিটিয়ে জখম করে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমাদুল ইসলাম জানান, তার নেতাকর্মীরা কুলিয়া বাজারে গণসংযোগ করছিল। এ সময় আসাদুল হকের ছেলে শরীফের নেতৃত্বে তার কর্মীদের ওপর হকিস্টিক, রড ও রাম দা নিয়ে হামলা করে। রাঙ্গাবালীতে আহত ১০ স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা থেকে জানান, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে চরআন্ডার সাগরপার বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সাগরপার বাজারে চরআন্ডা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল কালাম সিকদার ও মনিরুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে প্রচার নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খালিয়াজুরিতে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা থেকে জানান, খালিয়াজুরি উপজেলার সদর ইউনিয়নের গছিখাই গ্রামে সোমবার রাতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে গছিখাই গ্রামের শাহজাহানের বাড়িতে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) ছানোয়ারুজ্জামান জোশেফের উপস্থিতিতে তার নির্বাচনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের কথাবার্তা নিয়ে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গোলাম আবু ইছহাকের সমর্থকদের কথা কাটাকাটির সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। পাথরঘাটায় শিক্ষকদের নির্বাচন বর্জনের হুমকি সংবাদদাতা, পাথরঘাটা, বরগুনা থেকে জানান, বরগুনার পাথরঘাটায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল আহম্মেদকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩নং চরদুয়ানী ইউনিয়ানের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের সহকারী প্রিসাইডিং ও পুলিং এজেন্টের দায়িত্ব বর্জন করার হুমকি দিয়ে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সোমবার নির্বাচন কমিশন তাকে প্রত্যাহার করলে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় পাথরঘাটা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছগির হোসেনের নেতৃত্বে দুই শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষিকা সংবাদ সম্মেলন করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাথরঘাটা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্বাচনে দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়া না হলে শিক্ষকরা তাদের নির্বাচনের দায়িত্ব বর্জন করবে বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, আক্তারুজ্জামান বাদল, শাহিন, মতিউর রহমান। লক্ষ্মীপুরে তিন নেতাকে অব্যাহতি নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার পাটোয়ারিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম রাশেদ বিল্লাহ ও তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ, একই উপজেলার চরফলকন ইউপি চেয়াম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারেফ হোসেন বাঘাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজুর যৌথ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দল থেকে তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সিরাজদিখানে মাইক ভাংচুর স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, সিরাজদিখানে বিএনপি প্রার্থীর মাইক ভাংচুর হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় মানবদিয়া গাবতলী মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির মধ্যপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিম আল রাজি জানান, তার কর্মীরা রিক্সাযোগে মাইকে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিল। এ সময় রিক্সাটি মধ্যপাড়া ইউনিয়রে মানবদিয়া গাবতলী মসজিদের সামনে গেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাজী করিম শেখের লোকজন আমার নির্বাচনী মাইক ভেঙে ফেলে ও কর্মীদের মারধর করে। অপরদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর গাড়ি বহরে হামলা এবং ভাংচুর হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বালুরচর ইউনিয়নের রাজনগর এলাকায় এঘটনা ঘটেছে। বিএনপি প্রার্থী আমিন উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিকেলে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার পথে বালুচরের রাজনগর এলাকায় গেলে যুবদল নেতা মোক্তার হোসেন এবং তার লোকজন আমার ওপর হামলা এবং তিনটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করে। সিরাজগঞ্জে চেয়ারম্যান নির্বাচিত স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের নির্বাচনে ১নং রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম মোস্তফা খোকন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগ মনোনীত একক প্রার্থী হিসেবে খোকন বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কেরানীগঞ্জে দুই নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ থেকে জানান, তেঘরিয়া ও কো-া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আ’লীগ মনোনীত দুই প্রার্থী জজ মিয়া ও ফারুক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন ওই দুই ইউনিয়নের রিটার্নি অফিসার ও উপজেলা কৃষি অফিসার ফখরুল আলম। জানা যায়, তেঘরিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন দুজন। বিএনপি প্রার্থী শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় একক প্রার্থী হিসেবে জজ মিয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে কো-া ইউনিয়নে পাঁচ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু চার প্রার্থী নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ায় একক প্রার্থী হিসেবে ফারুক চৌধুরী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
×