ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াহিদ নবি

ওরা কি জানে না পরিণাম কি?

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৬ মার্চ ২০১৬

ওরা কি জানে না পরিণাম কি?

কিছু করলে তার ফল ভোগ করতে হয়। এ কথা বুঝে না বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা। আর বুঝে না শিশুরা। আর বুঝতে চায় না মতলববাজরা। মনে হচ্ছে ইদানীং বাংলাদেশে পরিণাম কি তা বুঝে না কিছু মানুষ। যাদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বলা যায় না। ভাবতে ইচ্ছে হয় এরা তবে কি? কেন এরা এমন কাজ করে? ভাবতে ইচ্ছা করে এরা নিজেদের কি মনে করে! এরা এদের শিকারদের কি মনে করে! এরা দেশের সরকার সম্বন্ধে কি ভাবে? সরকারের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কি ভাবে? বিচার বিভাগ সম্বন্ধে কি ভাবে? সবচেয়ে বড় কথা দেশের মানুষ সম্বন্ধে এদের ধারণা কি? অবশ্যই এদের সবার ভাবনা এক রকমের নয়। কাদের কথা বলছি? যে ধরনের আচরণের কথা বলছি ওই ধরনের আচরণ অনেকেই করছে। সংবাদ মাধ্যমে এ রকম আচরণের কথা প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। মনে করুন চারটি বাচ্চার মৃতদেহ পাওয়ার খবরটি। স্থানীয়ভাবে ক্ষমতা শক্তিশালী করবার জন্য এই হত্যা করা হয়েছে। ভাবতে আশ্চর্য লাগে। মানুষের জীবন কি এত সস্তা হয়ে গেছে? ক্ষমতা পোক্ত করবার সঙ্গে চারটি বাচ্চা হত্যার কি সম্পর্ক বুঝলাম না। কিসের ক্ষমতা? সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে পঞ্চায়েতের। পঞ্চায়েতের ক্ষমতা এত যে সেজন্য চারটি বাচ্চাকে হত্যা করতে হবে! খুনীরা নিজেদের কি ভাবে? ওরা এত চালাক যে ওদের কেউ ধরতে পারবে না । ওরা এত ক্ষমতাধর যে ওদের কেউ ধরবার সাহস পাবে না। কোন ক্ষমতাশালী লোকের কথায় ওরা হত্যা করেছে। ওই ব্যক্তি এত ক্ষমতাধর যে ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাকি তারা মনে করে, তারা একটি রাজনৈতিক দলের সভ্য। কাজেই সেই দল তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাহলেই তারা পার পেয়ে যাবে। তারা এমনটা ভাবে যে, বিচারিক প্রক্রিয়া এত দীর্ঘ যে বিচার হওয়ার আগে তারা রেহাই পেয়ে যাবে। তারা কি ভাবে না কোন রাজনৈতিক দল যদি বলে যে খুনী এদের দলের সদস্য তবে জনসাধারণ সেই দলের থেকে সমর্থন তুলে নেবে। খুনীরা কি ভাবে না তাদের ফাঁসি হতে পারে এবং হলে পরিবারের কি হবে? নাকি তারা নিজেদের কর্তব্যে এতই নিবেদিত যে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে কিছুই ভাবে না! ঢাকার কাছের একটি বড় শহরে সাতজন খুন হয়েছে। খুনী বলে যাদের সন্দেহ করা হয়েছে আর যারা খুন হয়েছে তারা একই রাজনৈতিক ঘরানার বলে বলা হয়েছে। খুনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জড়িত রয়েছে বলে বলা হয়েছে। খুনে বিরাট অঙ্কের টাকা জড়িত বলে বলা হয়েছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সঙ্গে অর্থের বিষয়টি হয়ত জড়িত রয়েছে। এত বিশাল অঙ্কের টাকা একটা শহরের রাজনৈতিক কা-ের সঙ্গে জড়িত তা আমাদের জানা ছিল না। যদি থাকে তবে এই অর্থ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারকে ভাবতে হবে। নইলে এমন ঘটনা আবার ঘটতে পারে। একটি বড় শহরের বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত এই হত্যাকাণ্ডে। কাজেই এরা যে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সে কথা বলা যাবে না। এরা শিশু তো নয়ই। খুন করলে পরিণতি কি হবে তা এদের জানবার কথা। এদের পরিবারের কি ঘটবে সেটাও এদের নিশ্চয়ই জানা। তবে এ কাজ তারা করতে গেল কেন? তারা কি মনে করেছিল যে তাদের কেউ ধরতে পারবে না। নাকি বিশাল ক্ষমতাধর তাদের এ কাজ করতে বলেছিল যাকে ধরবার সাধ্য কারও নেই। নাকি তারা মনে করেছিল যে রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তাদের কিছু হবে না। এমনটা হলে দলের বিশাল ক্ষতি হবে। এ কথা কি এরা বুঝে না? বিচার ব্যবস্থা আর অর্থের ছড়াছড়ি কতটা সাহায্য করতে পারে? সরকার নির্বাচন পদ্ধতি স্থির করলে বিরোধীদলের সেটা পছন্দ হলো না। তারা অন্য পদ্ধতি দাবি করল সরকার দাবি মেনে না নেয়ায় রাস্তায় নামল বিরোধীদল। ভাল কথা। রাস্তায় নামার গণতান্ত্রিক অধিকার তাদের রয়েছে। কিন্তু তারা ভাংচুর, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি শুরু করে দিল। বাস পোড়াল, ঘর পোড়াল, রেলগাড়ি পোড়াল। রেললাইন উপড়ানো হলো। হাজার হাজার গাছ কাটা হলো। পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা হলো। এই ধ্বংসযজ্ঞের কি কোন পরিণাম নেই? জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠা মানুষদের নিরস্ত করবার চেষ্টা করলে কেউ কেউ অভিযোগ করল, সরকার অগণতান্ত্রিক। স্বাভাবিক পরিণামকে অস্বীকার করবার চেষ্টা। দ্বিতীয়বারের আন্দোলনেও বিরোধীদল একই পন্থা অবলম্বন করল। একাত্তরের দিকে ফিরে তাকানো যাক। ’৭০-এর নির্বাচনে যে দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল পাক সেনাবাহিনী তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করল। পরিণাম যা হবার তাই হলো। জনগণ ফুঁসে উঠল। দুই অংশের মধ্যে বিশাল বৈষম্যের কারণে পূর্বাংশের জনগণ অসন্তুষ্ট ছিল। এবার তারা স্বাভাবিক পরিণাম হিসেবেই স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসল। পাকসেনারা চরম নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করেও বাংলার স্বাধীনতা ঠেকাতে পারল না। ত্রিশ লাখ বাঙালী প্রাণ হারাল। আহত হলো লাখ লাখ। পাঁচ লাখ নারী ইজ্জত হারাল। কিন্তু বাংলাদেশের জন্ম হলো। পঁচিশ বছর যেভাবে পাকিস্তান চালানো হয়েছিল তার স্বাভাবিক পরিণাম যা হওয়ার তাই হলো। একদল কুলাঙ্গার বাঙালী পাক সেনাদের সাহায্য করেছিল। তাদের স্বাভাবিক পরিণাম হওয়া উচিত ছিল দেশদ্রোহীর পরিণাম ভোগ করা। কিন্তু বহু বছর তা হয়নি। বরং তারা গাড়িতে দেশের পতাকা উড়িয়েছে। কিন্তু অবশেষে যা স্বাভাবিক তাই হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে, ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করবার সময় পরিণাম সম্বন্ধে কিছু চিন্তা করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যক্তি, পরিবার, দল ও জাতির সর্বস্তরে দুর্ভোগ নেমে আসছে। কিছু করলে তার পরিণাম আমরা এড়িয়ে যেতে পারব না এ কথাটি আমাদের সবার সব সময়ই মনে রাখা উচিত। লেখক : রয়াল কলেজ অফ সাইকিয়াস্ট্রিস এর একজন ফেলো
×