ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দুদক দুর্নীতিবাজদের জন্য হবে আতঙ্কের নাম ॥ নয়া চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৫ মার্চ ২০১৬

দুদক দুর্নীতিবাজদের জন্য হবে আতঙ্কের নাম ॥ নয়া চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হবে দুর্নীতিবাজদের জন্য আতঙ্কের নাম। আর যারা দুর্নীতি করেন না তাদের জন্য দুদক হবে বটবৃক্ষ বা আশ্রয়স্থল। দুদক কর্মকর্তারা দুর্নীতি করলেও কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নতুন যোগ দেয়া চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দুদককে জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হবে। দেশের জনগণ যেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা রাখতে পারে, সে অনুযায়ী কাজ করা হবে। দুদকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে চেয়ারম্যান বলেন, ‘পদোন্নতি হবে কাজের ওপর মূল্যায়ন করে। এ সময় দুদকের কর্মকর্তারা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানালে নতুন এ চেয়ারম্যান বলেন, হাততালি দেবেন না প্লিজ আমি হাততালি পছন্দ করি না, ফুল নেয়া পছন্দ করি না। কোনভাবে অয়েলিং আমার পদন্দ না। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের মধ্যে কেউ যদি তার কাজের সমালোচনা করেন তারা যেন সামনে এসে করেন তার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া দুদকের কোন কর্মকর্তা যদি দুর্নীতি করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। সবার অংশগ্রহণে দুদকের কাজ হবে পরিচ্ছন্ন। মতবিনিময় সভায় দুদকের নতুন কমিশনার সাবেক জেলা জজ এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি দুদকের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় দুদকের কমিশনার ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, সচিব আবু মোঃ মোস্তফা কামাল, বিভিন্ন বিভাগের মহাপরিচালক, পরিচালকসহ দুদকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নতুন এ কমিশনার সর্বশেষ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এসআইইউ) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি চেষ্টা করব, আমার নিজের ঘর ঠিক করতে। দুদকের মধ্যে যদি কোন দুর্নীতি থাকে সেটা মুক্ত করব। আমি শুনেছি দুদককে অনেকে বিশ্বাস করেন না। আমি দেখব যে তারা কেন করেন না। দুদকের বিরুদ্ধে যাদের অবিশ্বাস তাদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনাই হবে আমার মূল চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এটা সত্য যে, এ প্রতিষ্ঠানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে। সেটা যেন না থাকে সে চেষ্টা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮শ’ কোটি টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুদক একটি স্বাধীন কমিশন। যেখানে দুর্নীতি হবে সেখানেই যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং র‌্যাব বিষয়টির তদন্ত করছে। আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি। কোন রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত আবেগের বশবর্তী না হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন দুদকের চেয়ারম্যান। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সাবেক সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পাশাপাশি সাবেক জেলা জজ এএফএম আমিনুল ইসলামকে দুদক কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইনানুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইকবাল মাহমুদকে প্রথমে দুদক কমিশনার পদে নিয়োগ দিয়ে পরে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেন। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত রবিবার সাবেক চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান ও সাবেক কমিশনার মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ দুদক চেয়ারম্যান পদে মোঃ বদিউজ্জমানের এবং নতুন কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। এ দুই পদে নিয়োগের জন্য ২ ফেব্রুয়ারি আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজকে সচিব করে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ এবং বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ। কমিটি বাছাই শেষে চারজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেন। সেখান থেকে এ দু’জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
×