ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাইলজ বিশেষজ্ঞ!

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ মার্চ ২০১৬

বাইলজ বিশেষজ্ঞ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশেষভাবে যিনি অজ্ঞ, তিনিই হলেন বিশেষজ্ঞ! এমনই এক বিশেষজ্ঞের সন্ধান মিলেছে। বাইলজ বিশেষজ্ঞ। তার নাম ফরিদ আহমেদ। স্থানের নাম কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম। তারিখ : ১০ মার্চ, ২০১৬, বৃহস্পতিবার। ‘কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর ফাইনাল খেলা। খেলছে ময়মনসিংহ জেলা বনাম বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। খেলার প্রথমার্ধ শেষ। বিজেএমসি ১-০ গোলে এগিয়ে। বিরতির পর খেলোয়াড়রা মাঠে ঢুকেছে আবার খেলা শুরুর জন্য। কিন্তু খেলা বন্ধ হয়ে গেল। কি ব্যাপার? ব্যাপার আর কিছুই নয়, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় বরাবরের মতোই এসেছেন দেরি করে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন, পরিচিত হওয়া ও গ্রুপ ফটো তোলার যে কাজটা তার করার কথা ছিল খেলা শুরুর আগে, সেটা করলেন বিরতির পর! আশ্চর্য ও ব্যতিক্রম ঘটনাই বটে! শুধু তাই নয়, এরপরেই তিনি স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে গেলেন, আর অপেক্ষা করলেন না। ফলে তার পরিবর্তে খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ী ও বিজিত খেলোয়াড়দের মাঝে পুরস্কার তুলে দেয়ার কাজটা করতে হল বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারপার্সন মাহফুজা আক্তার কিরণকে। তবে এরচেয়ে আশ্চর্যের ঘটনা ঘটল, জয় মাঠ ছেড়ে যাবার পর। ময়মনসিংহ দল বেঁকে বসলো খেলতে। তাদের খেলোয়াড়রা দলের কর্মকর্তাদের চাপে পড়ে মাঠের বাইরে গিয়ে অবস্থান নেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিজেএমসির মৌসুমীকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে ময়মনসিংহ দলের এক কর্মকর্তা, তার নাম ফরিদ আহমেদ। তিনি নাকি বাইলজ ঘেঁটে জানতে পেরেছেন, মৌসুমী ফাইনাল ম্যাচ খেলছে অবৈধভাবে। কেননা গ্রুপ পর্বে এবং সেমিফাইনালে সে দুটো হলুদ কার্ড পেয়েছে। বাফুফে কর্মকর্তারা বোঝাতে চেষ্টা করলেন, গ্রুপ পর্বের কার্ড নকআউট পর্বে কাউন্ট হবে না। তাই মৌসুমীর খেলতে বাধা নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ফরিদের গোঁ ধরা দাবি, মৌসুমীকে উঠিয়ে নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ফরিদের দাবি যদি ঠিক হয়, তাহলে তিনি ম্যাচ শুরুর আগে কেন প্রতিবাদ জানাননি? যাহোক, বাফুফে এবার হার্ডলাইনে চলে গেল। জানানো হলÑ ১৫ মিনিটের মধ্যে যদি ময়মনসিংহ খেলার জন্য মাঠে না নামে, তাহলে তাদের বহিষ্কার করা হবে এবং আরও শাস্তিও দেয়া হবে। আলটিমেটামে কাজ হল, ময়মনসিংহ খেলতে নামল। ততক্ষণে নষ্ট হয়ে গেছে ১৫ মিনিট! বিজেএমসির কোচ বিতর্ক এড়াতেই হোক বা কৌশলগত কারণেই হোকÑ যাকে নিয়ে এত বিতর্ক, সেই মৌসুমীকে উঠিয়ে নিলেন। নামালেন স্বপ্নাকে, যে জলবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মাত্র দুইদিন আগে এসেছেন! শরীর দুর্বল বলে তার খেলার কথাই ছিল না। কিন্তু দলের প্রয়োজনে ঠিকই মাঠে নামতে হল তাকে। মাঠে নামার ৫ মিনিটের মধ্যেই গোল করে ফেলল সে! শুধু তাই নয়, খেলা শেষ হবার আগে হ্যাটট্রিকই করে ফেলার পাশাপাশি সাবিনাকে দিয়ে তিনটি গোলও করায় সে! বিজেএমসি ম্যাচ জিতল ৭-১ গোলে! স্বপ্নার এমন পারফর্মেন্স দেখে ‘বাইলজ বিশেষজ্ঞ’ ফরিদ সাহেবের মনের অবস্থা তখন কি হয়েছিল, কে জানে! অনেক দর্শকই তখন ফোড়ন কেটেছে, ‘ব্যাটা বেশি বোঝে। এ জন্যই দলের সর্বনাশ হয়েছে!’
×