ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গণগ্রন্থাগারে ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসবের সূচনা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১২ মার্চ ২০১৬

গণগ্রন্থাগারে ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসবের সূচনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংস্কৃতির শাণিত শক্তিতে ভর করে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন ওয়াহিদুল হক। আমৃত্যু কাজ করেছেন সম্প্রীতির স্বদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। আগামী ১৬ মার্চ এই সঙ্গীতজ্ঞ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও লেখকের জন্মদিন। এ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসব। ‘তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার’ প্রতিপাদ্যে কণ্ঠশীলন আয়োজিত উৎসবের প্রথম দিনে গান ও কবিতায় ওয়াহিদুল হককে জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিশিষ্টজনদের কথোপকথন ও স্মৃতিচারণে উঠে এলো তাঁর কীর্তিময় জীবনের কথা। বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। নানা আনুষ্ঠানিকতায় সাজানো প্রথম দিনের উৎসব ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। সকালে প্রথম পর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত ও উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। ঢাক-ঢোলের বাদ্যের তালে বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুল্লাহ সিরাজী, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ্্ ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন কণ্ঠশীলনের সভাপতি আহমাদুল হাসান হাসনু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব আহ্বায়ক মীর বরকত। ওয়াহিদুল হকের বর্ণময় জীবন ও আপোসহীন চরিত্রের কথা উল্লেখ করে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, তার দীক্ষা নিয়েই নতুন ধারার সংস্কৃতি প্রচার ও প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে কণ্ঠশীলন। ওয়াহিদুল হক সাংবাদিকতায় যেমন একটি বিশেষ দিকের উন্মোচন করেছেন তেমনি সংস্কৃতি জগতেও তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি কখনও নীতির প্রশ্নে আপোস করেননি। শারীরিক অবয়ব ছোট হলেও, নীতি-নৈতিকতা, আদর্শে অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের মানুষ ছিলেন। সারাজীবন সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন। তার ব্যক্তিত্বে যারা আকৃষ্ট হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয়েছেন আজীবন লড়াকু এ মানুষটির প্রতি। সব মিলিয়ে ওয়াহিদুল নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা এবং নারীর অধিকারের বিরোধী। তারা গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার শত্রু। আমরা যদি এসব শত্রুকে চিহ্নিত করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যেতে পারি তবেই বাস্তবায়িত ওয়াহিদুল হকের স্বপ্ন । গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বাংলাদেশে আজ আবৃত্তির যে বিস্তৃতি তার মূলেই কণ্ঠশীলন এবং ওয়াহিদুল হক। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল থেকে সংস্কৃতিকে তুলে আনতে হবে এবং রাষ্ট্রকে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে হবে। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে আয়োজক সংগঠনসহ দেশের প্রতিশ্রুতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এটি শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে পুনরায় শাহবাগে এসে শেষ হয়। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বের পরিবেশনায় আবর্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ পর্বে শিক্ষার্থীরা কণ্ঠশীলন নিয়ে তাদের ভাবনা বিনিময় করে। এরপর উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সমবেত সঙ্গীতের পরে ওয়াহিদুল হকের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। খেলাঘরের শিশুদের পরিবেশনা শেষে কণ্ঠশীলনের শিল্পীদের পরিবেশনা মঞ্চস্থ হয় সান্ধ্যকালীন আকর্ষণ শম্ভু মিত্র রচিত ও গোলাম সারোয়ার নির্দেশিত শ্রুতিনাটক ‘চাঁদ বণিকের পালা’। দলীয় আবৃত্তি পরিবেন স্বরশ্রুতি ও স্বরকল্পন। একক আবৃত্তির মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালা। একক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করেন অধ্যাপক কাজী মদিনা, কাজী আরিফ, হাসান আরিফ, লায়লা আফরোজ, বেলায়েত হোসেন, এনামুল হক বাবু, মাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি ও ফয়জুল আলম পাপ্্পু। আজ শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হবে উৎসবের সমাপনী দিনের আনুষ্ঠানিকতা। মুক্তিযুদ্ধের আবৃত্তি উৎসব শেকল ভাঙ্গার পদ্য ॥ চলছে স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত মাস মার্চ। তাই মাসটিতে বার বার ঘুরেফিরে আসছে একাত্তরের কথা। নানা পরিবেশনায় উপস্থাপিত হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালীর রাষ্ট্র বাংলাদেশের বীরত্বগাথা। সেই সুবাদে শুক্রবার ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে বিকেল থেকে রাত অবধি কবিতার দোলায়িত ছন্দে বলা হলো খরস্রোতা সময়ের কথা। এখানে বাকশিল্পাঙ্গনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো শেকল ভাঙ্গার পদ্য শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধের আবৃত্তি উৎসব। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একক ও দলীয় আবৃত্তির সঙ্গে এক বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধশিশুকে প্রদান করা হয় সম্মাননা। সম্মাননা জানানো হয় মাতৃভূমির জন্য সম্ভ্রম হারানো বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মা ঠাকুরগাঁ নিবাসী তেপারী বাওয়া এবং তার গর্ভে জন্ম নেয়া যুদ্ধশিশু সুধীরকে। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উৎসব উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ স¤পাদক হাসান আরিফ ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার। দেশের প্রথিতযশা আবৃত্তি সংগঠনগুলো পরিবেশন করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছয়টি আবৃত্তি প্রযোজনা। এ ছাড়াও আবৃত্তির একক পরিবেশনার আবৃত্তিপ্রেমীদের মাঝে ভাল লাগার অনুরণ ছড়িয়ে দেন খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পীরা। শফিউল গনির গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় শিশু শিল্পীদের পরিবেশিত আবৃত্তি প্রযোজনাটির শিরোনাম ছিল পুড়িয়ে দিব নীল কারুকাজ। হাসান আরিফের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় শ্রুতিঘর উপস্থাপন করে ধইরে দিবানে শীর্ষক প্রযোজনা। মাহিদুল ইসলামের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় আর কত রক্তের দরকার হবে শীর্ষক প্রযোজনাটি পরিবেশন করে স্বরচিত্র আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। ফয়জুল্লাহ্্ সাঈদের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ঢাকা স্বরকল্পন পরিবেশন করে রণাঙ্গনের কথা শীর্ষক প্রযোজনা। স্রোত আবৃত্তি সংসদ পরিবেশিত প্রযোজনাটির শিরোনাম ছিল যুদ্ধে যাওয়ার গল্প। এটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ছিলেন জিয়া উদ্দিন সাগর। আজহারুল হক আজাদের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় বাকশিল্পাঙ্গন উপস্থাপন করে আবার এসেছে বাংলাদেশের প্রাণ শীর্ষক প্রযোজনা। নন্দন মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব ্ বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংসদ ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব কালচারাল রিলেশন্সের যোৗথ উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে শুরু হলো ‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব । শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই দিনের আয়োজনের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের কণ্ঠে শোনা যায় রবীন্দ্রনাথে বিভিন্ন পর্যায়ের গান। সংসদের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন। শিল্পীরা এরপর গেয়ে শোনান ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ ও ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃঞ্চা হরিয়ে’ গান দুটি। এরপর ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সংসদের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ড. ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক জেসমিন জামান ও সংসদের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম হোসেন চৌধুরী। জাদুঘরে আইজিসিসির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (আইজিসিসি) ষষ্ঠতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। উদীচীর গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার ঢাকা জেলা পর্ব সম্পন্ন ॥ আগামী ১ ও ২ এপ্রিল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘সপ্তম সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা’। যার স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানুষ জাগাও, স্বদেশ জাগাও, বিশ্ব জাগাও সঙ্গীতে।’ শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতার ঢাকা জেলা পর্ব। এতে বিচারক ছিলেন গণসঙ্গীত শিল্পী ও সুরকার সেলিম রেজা, শাহীন সরদার এবং সোহানা আহমেদ। চুয়াডাঙ্গায় তিন দিনব্যাপী জাতীয় নজরুল সম্মেলন ॥ চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় শুক্রবার থেকে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী জাতীয় নজরুল সম্মেলন। জনকণ্ঠের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, নজরুল ইনস্টিটিউট ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন যৌথ আয়োজনে শুক্রবার বিকেলে কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দার।
×