ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১১ মার্চ ২০১৬

আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড

মিথুন আশরাফ, ধর্মশালা থেকে ॥ ‘ভারাত সারকার হামারি হেল্প কারো (ভারত সরকার আমাদের সহযোগিতা কর)।’-এ সেøাগানে হঠাৎ করেই মুখরিত হয়ে ওঠে ধর্মশালার সুধের এলাকা। কী হয়েছে, কী হয়েছে? দেখা গেল, হাজার পাঁচেকের মতো লোক মিছিল করছে। হেঁটে যাচ্ছে। পরে জানা গেল, তিব্বতের লোক এরা। যারা কি না তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য প্রায়ই এমন ঘোষণা দিয়ে মিছিল করে। সেই মিছিল দেখে বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদেরও চোখে যেন পানি ছলছল করল। বাংলাদেশও যে স্বাধীনতার জন্য এ রকম মিছিল করেছে। সেই সময়ের ইতিহাসের কথা মনে পড়ে অনেক সাংবাদিকই বলতে থাকলেন আমাদের মতো একদিন এরাও নিশ্চয়ই স্বাধীন হবে। বৃদ্ধ, কিশোর, এমনকি শৈশবে পা রাখা ছেলে-মেয়েরাও এ মিছিলে একাকিত্ব হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। যে স্বাধীনতা মিলেছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। সেই স্বাধীনতায় ভারতেরও সহযোগিতা ছিল। তা সবারই জানা। এবার তিব্বতের জনগণও চাচ্ছে ভারত সরকার তাদের সহযোগিতা করুক। সেই ভারতেই এখন আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যে দলটি ধর্মশালাতেই খেলছে টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। হল্যান্ডের সঙ্গে জিতে আজ আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে মাশরাফিরা। ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় ধর্মশালা স্টেডিয়ামে শুরু হবে। ধর্মশালার ম্যাকলয়েড গঞ্জে থাকে তিব্বতের একাংশ। সবাই তিব্বতের জনগণ। তিব্বত নেতা দালাইলামার অনুসারী এরা। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে দালাইলামার নেতৃত্বে এরা ভারত সরকারের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বসবাস আরম্ভ করে। এখান থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনও করে যায়। এমনও শোনা গেছে, স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বরূপ হিসেবে আত্মহুতিও দেয় অনেকে! নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়! তবে তিব্বতের এ লোকজনদের নিয়ে খুব বেশি ভাবার অবকাশ থাকল না। বাংলাদেশ দলেও যে ঘটে যাচ্ছে ঘটনা! কী সেই ঘটনা? তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির বোলিং এ্যাকশনে সমস্যা ধরেছে আইসিসি। এ নিয়েই সবার দৌড়ঝাঁপ শুরু। দুপুর ৩টা থেকেই বাংলাদেশের অনুশীলন শুরু হয় সেই অনুশীলন করে ধর্মশালা স্টেডিয়ামে। সেই অনুশীলনেও সাংবাদিকদের থাকতে হবে। তাই কিছুক্ষণ তাদের আন্দোলন দেখেই চলে যেতে হলো স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামে ঢুকতেই ইনডোরে নেটে দেখা মিলল মুশফিকুর রহীম, সাব্বির রহমান রুম্মন ও আবু হায়দার রনির। স্পিন কোচ রুয়ান কালপাগে বোলিং করছেন আর মুশফিক ব্যাটিং করছেন। ফর্মে ফেরার সে কী চেষ্টা। আরেকদিকে আবু হায়দার বোলিং করছেন সাব্বির ব্যাটিং করে চলেছেন। আরেকজনকে দেখা গেল। তিনি আল আমিন। বোলিং না করে মুশফিক, সাব্বির, আবু হায়দারকে দেখছেন। কিছুক্ষণ পরেই সাব্বিরকে সরিয়ে নুরুল হাসান সোহান ব্যাটিং করতে শুরু করেন। বোঝাই গেল, চার ম্যাচ খেলে ৩ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারানো বাংলাদেশ আজ নুরুলকে একাদশে রাখবে। কিন্তু কার স্থানে খেলানো হবে? তাসকিন না আরাফাত? যতদূর জানা গেল, আরাফাতের স্থানে নুরুলকে খেলানো হতে পারে। আয়ারল্যান্ডকে হারানোর জন্য ব্যাটিংটা আরও মজবুত করেই নামতে চায় বাংলাদেশ। তবে নুরুলকে নিয়ে নয়, সবার চিন্তা মুস্তাফিজুরকে নিয়ে। যে মুস্তাফিজ আজও হয়ত একাদশে থাকবেন না। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি যে সেরে উঠেননি। মুস্তাফিজ না থাকলেও যে বাংলাদেশ জেতার ক্ষমতা রাখে তা কোচ হাতুরাসিংহেই বলে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের বোলিংটা অনেক ভাল হচ্ছে। শুধু ব্যাটিং নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। যে সমস্যা আশা করি দূর হয়ে যাবে।’ ব্যাটিংয়ে যে সমস্যা মূলত সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে বেশি হচ্ছে। সেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে আবার মুশফিকই শুধু ব্যর্থ হচ্ছেন। কোচ সেদিকেও ইঙ্গিত করলেন, ‘আমি দেখছি সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হচ্ছে। তবে দ্রুতই তারা ফর্মে ফিরবে সেই বিশ্বাস আছে।’ তা ফিরলেই হয়। না হলে আয়ারল্যান্ড যে রকম দল, তাতে যে কোন মুহূর্তে হুমকি হয়ে উঠতে পারে। দলের উইকেটরক্ষক গ্যারি উইলসনতো হুমকি দিয়েই রেখেছেন। বলেছেন, ‘বাছাইপর্বে সব দলই সমান শক্তির।’ বাংলাদেশকে যে তাদের সমান শক্তির ধরে নিয়েছে আয়ারল্যান্ড, সেই আত্মবিশ্বাস কোথায় মিলল? ২০০৯ সালে যে বাংলাদেশকে হারিয়েছে তারা। তাই এত আত্মবিশ্বাস। তবে এরপর কিন্তু আর বাংলাদেশের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি আইরিশরা। সেটি যেন ভুলেই গেছে। আর তাই তো হাতুরাসিংহে বলেও দিয়েছেন, ‘আমরাই জিতব।’ সেই জয় মিললে সুপার টেনে খেলার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
×