ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমের ব্যাটে হাসল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১০ মার্চ ২০১৬

তামিমের ব্যাটে হাসল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ, ধর্মশালা থেকে ॥ ম্যাচ যখন শুরু হলো, ধর্মশালাতে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, রব উঠল। পুরো স্টেডিয়ামে যে বাংলাদেশী দর্শকদেরই আধিক্য ছিল। বাংলাদেশ থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শকদেরই দেখা গেল। কিন্তু সেই রব হঠাৎ করেই মিলিয়ে যেতে শুরু করল। দ্বিতীয় উইকেট ৬০ রানে পরার পর যে ১২৭ রানেই নেই ৬ উইকেট! তবে একজন ছিলেন। যিনি শুরু থেকে শেষপর্যন্ত একাই খেলে গেলেন। এবং ধর্মশালা মাতিয়ে গেলেন। তিনি বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। যার ব্যাট থেকে ৫৮ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস এলো। পুরো দল যেখানে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৩ রান করল, এক তামিমই এর মধ্যে ৮৩ রান করলেন। পুরো দল মিলে তারচেয়েও কম ৭০ রান করল। তামিমের এ ইনিংস আবার ইতিহাসের পাতাতেও ঠাঁই করে নিল। ধর্মশালায় অপরাজিত থাকা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করলেন তামিম। আর রানের দিক দিয়ে ভারতের রোহিত শর্মার (১০৬ রান) পরই তামিমের এ ইনিংসের অবস্থান হলো। এশিয়া কাপে প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। ফাইনালে খেলেছে। এমন দল যখন টি২০ বিশ্বকাপে খেলতে নামে স্বাভাবিকভাবেই আশাটা অনেক বেড়ে যায়। বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করবে দল। সেই স্বপ্নও তাই সবাইকে ঘিরে ধরে। কিন্তু তামিম বেশিদূর নিয়ে ভাবতে রাজি নন। বলেছিলেন, ‘আমি অত দূর নিয়ে এখনও ভাবছি না। আমি মনে করি আমাদের মূল ভাবনা হওয়া উচিত প্রথম যে তিন ম্যাচ আছে, সেগুলো নিয়ে। খুব কঠিন হবে। ওরা এমন টিম আর ফরমেটটা এমন, যে কোন সময় যে কোনে কিছু ঘটে যেতে পারে।’ সেই অঘটন ঘটতে পারত, যদি তামিম ব্যাট হাতে দলের হাল না ধরতেন। তবে তামিমের এ ইনিংসে বাংলাদেশ যে স্কোরবোর্ডে এত বেশি রান যোগ করে নিল, তাতে শুধু জয়ের আশাই নয়; বিশ্বকাপে চমক জাগাবে বাংলাদেশ; সেই স্বপ্নই দেখা শুরু হয়ে গেছে। তামিম সঠিক সময়ে এসেই জ্বলে উঠেছেন। যেখানে দলের বাকি সব ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে তামিম উইকেটে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। সঙ্গে মেরেছেন ছক্কাও। তামিমই কেবল ধর্মশালা মাতিয়ে রেখেছেন। না হলে ওতা একের পর এক উইকেট যেভাবে যেতে শুরু করে, তাতে দলের বেহাল দশারই ছবি ফুটে উঠে। তামিম শুরু থেকে শেষপর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকেন। টি২০তে বাংলাদেশের টপ স্কোরার। তামিম এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১২ সালে যে বাংলাদেশের হয়ে টি২০তে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮৮ রানের স্কোর খেলেছিলেন, এবারও অপরাজিতই থাকলেন। একেকটি ছক্কা এমনভাবে মারলেন, যেন স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে বরফ ঘেরা পাহাড়ে পাঠাতে চাইলেন। বিপিএল ও পিএসএলে ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা তামিম এবার হল্যান্ডের সঙ্গে বাজিমাত করলেন। শুরুতে ১১ বলে কোন বাউন্ডারিই মারেননি তামিম। খুব ভেবে চিন্তে এগিয়ে গেছেন। ১২তম বলে এসে ভ্যান মিকেরেনের বলে বাউন্ডারি হাঁকালেন। শুরু হয়ে গেল তামিমের ধুমধারাক্কা ব্যাটিং। এক ওভার একটু ঠেকিয়ে খেলেন তো, পরের ওভারেই হয় ছক্কা মেরেছেন নয়ত বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। এভাবে করতে করতে একটা সময় তামিম ৩৬ বলে অর্ধশতকও করে ফেলেন। একদিকে তামিম রান নিতে থাকেন। আরেকদিকে উইকেটও পড়তে থাকে। তবুও তামিমকে কোন চাপই ঘিরে ধরতে পারেনি। শেষে ৭ উইকেটের পতন ঘটে। কিন্তু তামিম অবিচলই থাকেন। শেষপর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকেন। দলকেও বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়ে তোলেন। তামিম আগে যা করতেন শুরু থেকেই মেরে খেলতেন। শুধু যেন রান নেয়ার তাড়া তার। এখন তা থেকে তামিম নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়েছেন। আগে উইকেটে ভালভাবে সেট হন। এরপর বুঝে শুনে বাউন্ডারি মারেন। তামিমই যেমন বলেছিলেন, ‘শুরুর দিকে দেখেছেন নিশ্চয়ই যে টি২০তে প্রতি বলই বাউন্ডারিতে পাঠাতে চাইতাম। হয়তো দুটা ভাল শট খেলতাম কিন্তু আউট হয়ে যেতাম দ্রুত। কিন্তু শেষ দুটা টুর্নামেন্টে আমি শুরুতে কিছুটা সময় নিয়েছি। তারপর ক্রিকেটীয় শট খেলেই রান করেছি। টি২০ বিশ্বকাপে আমি সফল নাও হতে পারি, তবু নিজের খেলার স্টাইল আর বদলাব না।’ সেই ধারণা তামিমকে সফল করে তুলল। সাফল্যও পেলেন। অপরাজিত ৮৩ রানও করলেন।
×