ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিশ্ব কিডনি দিবস

কিডনি রোগে দেশে বছরে মারা যায় ৪০ হাজার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১০ মার্চ ২০১৬

কিডনি রোগে দেশে বছরে মারা যায় ৪০ হাজার

নিখিল মানখিন ॥ মোঃ নাজমুল হকের (৩৫) দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। ডায়ালাইসিস দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সপ্তাহে তিনটি ডায়ালাইসিস দিতে প্রায় দশ হাজার টাকা লাগে। চিকিৎসকরা কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিলেও তা মেটানোর আর্থিক সামর্থ্য নেই নাজমুল হকের পিতা মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের। মোঃ আব্দুর রাজ্জাক একজন নিম্ন-মধ্যবিত্ত কৃষক। চিকিৎসার পেছনে ইতোমধ্যে সহায়-সম্বল ফুরিয়ে গেছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের হরিণগাছি গ্রামে তাদের বাড়ি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নাজমুল হক ছাত্রজীবনে সব সময় মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। টাকার অভাবে প্রত্যাশিত চিকিৎসা করাতে না পেরে এখন তিনি অকালে মৃত্যুর আশঙ্কায় ভুগছেন। দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে মোঃ মঞ্জুরুল হাসানের। ডায়ালাইসিস দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। দুটি ডায়ালাইসিস ও ওষুধের পেছনে প্রতি সপ্তাহে খরচ লাগে প্রায় ১০ হাজার টাকা। জরুরীভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীর পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা ভাল না। মঞ্জুরুলের পিতা মোঃ আব্দুল হাকিম হাওলাদার ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। মা, ছোট তিন ভাই-বোন, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মঞ্জুরুল হাসানের সংসার। চিকিৎসার খরচ মেটানোর পেছনে ইতোমধ্যে সহায়-সম্বল ফুরিয়ে গেছে। অসহায় হয়ে পড়েছে মোঃ মঞ্জুরুল হাসানের পরিবার। এভাবে ব্যয়বহুল চিকিৎসা, উন্নত চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের জটিলতার কারণে নাজমুল ও মঞ্জুরুলের মতো শত শত কিডনি বিকলরোগী অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। মৃত্যুর মুহূর্ত দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় থাকছে না রোগীর স্বজনদের। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। দেশে কিডনি রোগী ২ কোটি ॥ দেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। আক্রান্তের শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে এ মরণব্যাধির অস্তিত্ব ধরতে পারেন না। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, মাত্র শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ লোকের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। প্রতিবছর কিডনিজনিত রোগে প্রায় ৪০ হাজার লোক মারা যায়। দেশে এখন পর্যন্ত ‘নিকট’ আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও কিডনি নেয়া হয় না। ইচ্ছে করলেই একজন আরেকজনকে কিডনি দিতে পারেন না। তাই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। দেশে কিডনি রোগ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও খুব ব্যয়বহুল। প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালু থাকলেও সফলতার মাত্রা খুব বেশি সন্তোষজনক নয়। দেশের সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা ও প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা নেই। সীমিত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ডায়ালাইসিসি ও প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিডনি রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা সম্পর্কে অধ্যাপক ডাঃ শহিদুল ইসলাম সেলিম দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন কারণে কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে কারও কারও কিডনি হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। বাংলাদেশে ডায়রিয়া, অতিরিক্ত বমি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, বিভিন্ন রকম ইনফেকশন, ম্যালেরিয়া, প্রসবকালীন জটিলতা, সাংঘাতিক ধরনের নেফ্রাইটিস, বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কিডনির পাথরের কারণে হঠাৎ করেও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। এ ধরনের কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার ভাল দিক হচ্ছে- এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা যায়। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করলে অনেকের কিডনি পুনরায় স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। এদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে অকেজো হয়ে যায়।
×