ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন ॥ ১৪ মার্চ ফের সাক্ষ্যগ্রহণ

বিজয় কুমার পালকে পূর্ণ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই জেরা সম্পন্নের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ মার্চ ২০১৬

বিজয় কুমার পালকে পূর্ণ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই জেরা সম্পন্নের ঘোষণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ, ৭ মার্চ ॥ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পালের মামলায় বাদীর জেরা সম্পন্নের ঘোষণা দিয়েছে আদালত। আদালত আগামী ১৪ মার্চ এই মামলায় অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছে। এই নিয়ে গত দুই দফায় এই মামলায় ৩৫ আসামির মধ্যে ৩৩ আসামির আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেছেন। তবে নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদের আইনজীবীর জেরা ছাড়াই বিজয় কুমার পালের জেরা শেষ হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামিকে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা ১১টায় প্রথমে এমএম রানার পক্ষ্যে এ্যাডভোকেট ফরহাদ আব্বাস তাকে জেরা করেন। পরে আরিফ হোসেনের পক্ষে এ্যাডভোকেট রঞ্জিত রায় তাকে জেরা করেন। দু’জনেই সংক্ষিপ্ত আকারে জেরা করেন। দুই আইনজীবীরই প্রশ্ন ছিল বাদী তাদের ক্লাইন্টকে আগে থেকে চিনত কিনা। বাদী নিজে মামলার এজাহারে তাদের নাম দিয়েছেন কিনা? জবাবে বিজয় কুমার পাল না সূচক জবাব দেন এবং বলেন, পুলিশের তদন্তে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। এ দু’জনের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণের পর নূর হোসেন এবং তারেক সাইদ মোহাম্মদের পক্ষে আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া ও সুলতানুজ্জমান আদালতকে জানান, তারা এই মামলায় উচ্চ আদালতে একটি কোয়াশম্যান্ট পিটিশন করেছেন। সোমবার ওই পিটিশনের নিষ্পত্তি হবে। তাই বিকেল পর্যন্ত তারা সময় চান। তখন আদালত বিকেল ৩টা পর্যন্ত তাদের সময় দেন। কিন্তু বিকেলে পুনরায় আদালত বসলে তারা হাইকোর্টের কোন আদেশ বা নির্দেশনা দেখাতে ব্যর্থ হন এবং তারা আদালতকে বলেন, হাইকোর্টের বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করতে বিব্রত হয়েছে। তাই বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। এ কথা বলে তারা আবারও সময় চান আদালতের কাছে। কিন্তু আদালত তাদের সময় মঞ্জুর না করে বিজয় কুমার পালের জেরা সম্পন্নের ঘোষণা দেন। আগামী ১৪ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন। প্রসঙ্গত, এর আগে ২৯ ফেব্রুয়ারি ৭ খুনের ঘটনায় নিহত আইনজীবী চন্দন ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যা মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ সময় র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেনসহ উপস্থিত ১০ আসামি এবং র‌্যাবের ৮ সদস্যসহ পলাতক ১২ আসামিসহ মোট ২২ আসামির পক্ষের আইনজীবীরা বাদী বিজয় কুমার পালকে জেরা করেন। মামলার অপর আসামি নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও এমএম রানার পক্ষে বাদীকে জেরা করতে সময়ের আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করে ৭ মার্চ ধার্য করেছিল। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, এই নিয়ে গত দুই দফায় এই মামলায় ৩৫ আসামির মধ্যে র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাসহ ৩৩ আসামির পক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেছেন। নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদের পক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদনের বিষয়টি জানিয়ে সময় প্রার্থনা করলে বিকেল তিনটা পর্যন্ত আদালত মুলতবি রাখে। বিকেলে পুনরায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতের কোন আদেশ বা নির্দেশনা দেখাতে ব্যর্থ হন। আদালত আসামি পক্ষের আইনজীবীকে বাদীকে জেরার নির্দেশ দিলে তারা অস্বীকৃতি জানান। পরে আদালত জেরা সম্পন্নের নির্দেশ দিয়ে মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৪ মার্চ তারিখ ধার্য করে। ৭ খুন দুটি মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন জানান, শুরু থেকেই মামলার আসামিরা বিচারকার্যকে বিলম্বিত করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। মোট ৩৫ আসামির মধ্যে ৩৩ আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মামলার বাদীকে বিজয় কুমার পালকে জেরা করেছেন। নূর হোসেন ও তারেক সাঈদের পক্ষে আইনজীবীরা সময় প্রার্থনা করে আদালতকে জানান, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালত রিট পিটিশন করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন আদেশের কপি আদালতে দেখাতে পারেনি। তাই আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে বাদীকে জেরা করার জন্য নির্দেশ দেয়। নূর হোসেন ও তারেক সাঈদ মোহাম্মদের আইনজীবীদের আদালত বাদীকে জেরার নির্দেশ দিলে তারা রাজি না হওয়ায় আদালত মামলার অন্য আসামিদের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য জেরা সম্পন্নের ঘোষণা দেন। মামলার বাদী বিজয় কুমার পাল সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য এ নিয়ে আমি তিন দিন আদালতে হাজির হলাম। প্রথম দিন একজন আসামি হাজির না হওয়ায় আমার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। দ্বিতীয় দিন আমার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আসামিপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত তোলায় আদালত প্রথম দফা সাক্ষ্য গ্রহণ হলেও মুলতবির পর আসামি পক্ষ আমাকে আর জেরা করেনি। বাদী হিসেবে আমি হত্যাকা-ের ন্যায় বিচার চাই। এদিকে গত ৩ মার্চ নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির দায়ের করা অপর মামলায় বিউটির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ওই মামলায় বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটিকে মেজর আরিফ হোসেনসহ ৩২ আসামির পক্ষে আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। অপর ৩ আসামি নূর হোসেন ও তারেক সাঈদ মোহাম্মদ এবং এম এম রানার পক্ষে বাদীকে জেরার জন্য আগামী ১০ মার্চ তারিখ ধার্য করেন।
×