ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছর আগের আক্ষেপ ঘোচালেন

মাহমুদুল্লাহর স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ মার্চ ২০১৬

মাহমুদুল্লাহর স্বস্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আক্ষেপটা হয়ত আজীবন থেকে যেত। শুধু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নয়, কঠিন আক্ষেপের তীরে বিদ্ধ বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের হৃদয় যেভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল তা সারেনি। ২০১২ এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দারুণ সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছিল মাত্র ২ রানে হেরে। সেদিন শেষ ওভারে ৯ রানের প্রয়োজন থাকলেও মাহমুদুল্লাহ তা পারেননি। অঝোরে কেঁদেছিলেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমসহ দলের সব ক্রিকেটার। সেই কান্নার স্রোত দেশের গ-ি পেরিয়ে আছড়ে পড়েছিল বহির্বিশ্বে, নাড়া দিয়েছিল সবাইকে। আর মাহমুদুল্লাহ তো ভুলতেই পারেননি। কিন্তু সুযোগ পেয়ে গেলেন এবার এশিয়া কাপেই! আবার পাকিস্তান, শেষ ওভারে এবার ৩ রানের প্রয়োজন এবং জিততে পারলে ফাইনাল নিশ্চিত। প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে দলের জয়ই শুধু নিশ্চিত করলেন না মাহমুদুল্লাহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিয়ে নিলেন প্রতিশোধ। এবার তিনিই উল্টো কাঁদিয়ে ছাড়লেন শহীদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ হাফিজদের। আক্ষেপ ঘুচিয়ে ভারমুক্ত হলেন মাহমুদুল্লাহ। এরপর তিনি নিজেই জানিয়েছেন চার বছর আগে এশিয়া কাপে যা ঘটেছিল সেটা তার মনের কোণে লুকিয়ে ছিল। প্রকৃতি সবকিছুই ফিরিয়ে দেয়। একটি বৃত্তাকার পথে ফিরে আসে আগের স্মৃতিই। ২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনাল ভুলতে পারবে না কোনদিন দেশবাসী। কারণ সেটাই প্রথম কোন বড় টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের মোক্ষম সুযোগ এসেছিল আয়োজক বাংলাদেশের। সেবার এ আসরে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ দল ভারত-শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল। যদিও পাকিস্তানের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেই গিয়েছিল। সেই পাকদের বিরুদ্ধে চরম শোধ তোলার সুযোগ এসেছিল ফাইনালে। এবার আরও বড় আফসোস সঙ্গী হয়। মাত্র ২ রানের ঘাটতি পুরো দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। মাহমুদুল্লাহর ব্যাটের দিকে দৃষ্টি ছিল সবার। কারণ একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে তখন তিনিই ছিলেন ক্রিজে। তবে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। কিছুটা যেন দোষও কাঁধে চেপেছিল মাহমুদুল্লাহর। নিজেও সেটা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেননি। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনালের কথা আমার সবসময়ই মনে ছিল। এ জয় সেটা ভুলিয়ে দেবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবসময়ই একটা বড় চাপ থাকে। কিন্তু শান্ত থেকে বুঝেশুনে খেললে বড় শটও খেলা যায়। আমি শেষ পর্যন্তই সুযোগ নিতে চাই। আগেরবার পারিনি, কিন্তু এবার সুযোগটা ছাড়তে চাইনি।’ শেষ পর্যন্ত শোধটা নিয়েই নিলেন মাহমুদুল্লাহ। এবার তার বিরুদ্ধে বোলিং করতে এসে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হজম করলেন পেসার আনোয়ার আলী। ৪ বছর আগে ২২ মার্চ এশিয়া কাপ ফাইনালের সেই ঐতিহাসিক শেষ ওভারটি করেছিলেন আইজাজ চিমা। তার বিরুদ্ধে না পারলেও আনোয়ার আলীর বিরুদ্ধে পেরেছিলেন। তবে শেষ ওভারে স্ট্রাইক পাওয়ার পরই উইকেটে তার সঙ্গী অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নিজের ¯œায়ুচাপ এবং অতীত স্মৃতির কথাটা জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে মাশরাফি নিজেই পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ও আমাকে বলছিল আমার তো পুরনো সেই কথাটা মনে পড়ছে, আমি কী করব? তখন আমি তাকে বলেছি বল পেয়ে গেলে মেরে দিবি! এত চাপ নেয়ার কিছু নেই। আমি নিজেও চাইছিলাম যে ম্যাচজয়ী শটটা মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকেই আসুক। এবার সেটা করতে পেরেছে। অনেক বড় ভারমুক্তি এটা তার জন্য।’
×