ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অনুবাদ : এনামুল হক

মার্কিন সমাজে ভয়াবহ অসাম্য

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৪ মার্চ ২০১৬

মার্কিন সমাজে ভয়াবহ অসাম্য

আমেরিকার আশু সঙ্কট হয়ত কেটে গেছে। তবে ত্রিশের দশকের মহামন্দার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ২০০৮ সালে ছোবল হেনেছিল তা থেকে বেশিরভাগ আমেরিকান আজও উদ্ধার পায়নি। অন্যদিকে বিত্তশালী আমেরিকানরা আগের চেয়ে ভালই আছে। জাতীয় আয়ের অবিশ্বাস্য ৯১ ভাগ শীর্ষ ১ শতাংশ আমেরিকানের হাতে করায়ত্ত। বিশ্বব্যাপী আয়বণ্টনের ক্ষেত্রে এই যে অসাম্য এই ধারা অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক প্লুটোক্রেসি দেখা দেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে ফরাসী অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটির গ্রন্থে ‘ক্যাপিটেল ইন দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারায় মানব জাতির ভবিষ্যত বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এর পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব ও কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী। আর এই সবকিছুর ফলে অসাম্য নজিরবিহীন রূপ ধারণ করেছে এবং তা প্রকটভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে। সিনেটর হেনরী স্যান্ডার্স সম্পদের এই ভয়াবহ কেন্দ্রীভবনকে তার প্রচারের প্রধান ইস্যুতে পরিণত করেছেন। সম্পদের এই অসম বণ্টন যে এক ভয়াবহ সমস্যা তা হিলারি ক্লিনটনও স্বীকার করেছেন। অসাম্য যে গুরুতর রূপ নিয়েছে সে ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানরাও একমত। সঙ্কট লাঘবের জন্য ৭৫ শতাংশ আমেরিকান ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির পক্ষে। ৬৮ শতাংশ মানুষ বার্ষিক আয় যাদের ১০ লাখ ডলারের বেশি তাদের ওপর বাড়তি করারোপ সমর্থন করে। মার্কিন বিলিয়নিয়ারদের শতকরা ৭৬ জন মনে করে আয়ের ক্ষেত্রে অসাম্য সমাজের এক গুরুতর সমস্যা। দুর্ভাগ্যবশত এসব ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য কোন ফল পাওয়া যায়নি। কিছু কিছু রাজ্য ও এলাকায় ন্যূনতম মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেও সাধারণ আমেরিকানদের ওয়ালস্ট্রিটের লাগামহীন লোভ লালসা থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। অসাম্যের সার্বিক ধারাটি প্রকৃতপক্ষে বেড়েই চলেছে। বস্তুতপক্ষে অসাম্য হাইপারড্রাইভ সৃষ্টি করেছে। আমেরিকার সর্বাধিক ধনী ৪শ’ ব্যক্তির হাতে সম্পদের পরিমাণ জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে নিচের ৬১ শতাংশের হাতে সঞ্চিত সম্পদের চেয়েও বেশি। আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ২০ ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ গোটা জনগোষ্ঠীর নিচের অর্ধাংশের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি। পিকেটি দেখিয়েছেন যে এই অসাম্য আপনা থেকে যাবে না। বরং বংশানুক্রমিক সম্পদ প্রাধান্য বিস্তার করে চলবে। অসাম্য প্রকৃতপক্ষে আর্থসামাজিক ব্যবস্থার এক সুগভীর সমস্যা। ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভিক বছরগুলো পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অসাম্য ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। মার্কিন অর্থনীতির সূত্রগুলোই এমন যে মজুরির ক্ষেত্রে স্থবিরতা এবং সম্পদের উর্ধমুখী যাত্রা- দুটোই উৎসাহিত হয়েছে। তবে ২০০৮ সালের মন্দার সময় থেকে আরও বেশি করে আয় ও সম্পদ জনগোষ্ঠীর শীর্ষ এক-শতাংশের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এই সুবিশাল ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট ঐশ্বর্যের পাশাপাশি প্রকৃত গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। যতদিন ধনী ব্যক্তিরা ও বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো ভোট কিনতে ও নীতিনির্ধারণ করে দিতে পারবে ততদিন চরম অসাম্য কখনও পাল্টানো যাবে না। তাছাড়া আমেরিকার রাজনৈতিক সংস্কৃতিটাই এমন যে তা মানুষের মনের ভিতরে এই জিনিসটা ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যটা যৌক্তিক। সমাজের নিচের অংশের অনেকের বিশ্বাস এই যে কঠোর পরিশ্রম করলে তারাও ধনী হতে পারে। আবার অনেক আমেরিকানের ধারণা সমাজের ক্রমবর্ধমান অসাম্য পরিবর্তনের অসাধ্য। ওয়াল স্ট্রিটের রাশ টানতে হবে বৃহৎ ব্যাংকগুলোর রাশ টেনে ধরলে ঝুঁকি কমবে এবং প্রত্যেকেরই বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য তো বটেই। বলাবাহুল্য ফরবিসের তালিকাভুক্ত ৪শ’ বিলিয়নিয়ারের সম্পদের পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের গোটা আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠী এবং সেই সঙ্গে সেদেশের এক-তৃতীয়াংশ ল্যাটিনো জনগোষ্ঠীর মিলিত সম্পদের সমান। আমেরিকায় পরিচালিত বিভিন্ন আন্দোলনের পরিণতিতে মজুরি যদি বাড়ে এবং বিনিয়োগ সম্ভব হয় তারপরও আরেক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়লে সাধারণ আমেরিকানের কষ্টার্জিত সঞ্চয় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। ডড ফ্রাঙ্ক আর্থিক সংস্কার আইনে ওয়াল স্ট্রিটকে সংস্কার করার লক্ষ্যে লঘুমাত্রার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংক আছে সেগুলো এতই বিশাল যে, কোনদিনও সেগুলোর লালবাতি জ্বলবে না। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কটে ১৯ ট্রিলিয়ন ডলারের পারিবারিক সম্পদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও ঐ ব্যাংকগুলো সে সময়ের তুলনায় আরও বড় হয়েছে। এই মেগা ব্যাংকগুলো আগের মতই কার্যত অনিয়ন্ত্রিত ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ ফটকা কারবারে লিপ্ত রয়ে গেছে, যে কারবারের সঙ্গে বাস্তব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কোন সম্পর্ক নেই। অথচ এর ফলে মেইন স্ট্রিট আগের মতই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, প্রতিদিনের বিনিয়োগকারীদের আয় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এবং বাজারগুলোতে অস্থিতিশীলতা দেখা দিচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিটের এই জুয়াখেলার রাশ টেনে ধরার জন্য আরও কিছু করা না হলে আমেরিকানরা আবার ব্যাংকিং বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বিপুল লোকসানের শিকার হতে পারে। এ কারণেই আমেরিকার সবচেয়ে বড় ব্যাংগুলোর ওপর করারোপ করার একটা প্রস্তাব ওবামা প্রশাসনের রয়েছে। প্রস্তাবের মূল কথাটা হচ্ছে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ যত বেশি হবে তত বেশি কর তাদেরকে দিতে হবে। এই ব্যবস্থা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনিরাপদ পরিবারগুলোর সম্পদ সৃষ্টির একটা ব্যবস্থায় পরিণত হতে পারে। তেলা মাথায় তেল দেয়া মার্কিন অর্থনীতির চরিত্রটাই এমন যে তেলা মাথায় তেল দেয়। যার প্রয়োজন নেই তাকেই বাড়তি লাভ দেয়। সেখানে অবসরকালীন সুবিধাটা এমন যে তা ধনীদের পক্ষপাতিত্ব করে। সেদেশে অবসরের ক্ষেত্রে বিভাজনটা আয়ের ক্ষেত্রে বিভাজনের চেয়ে বেশি। এক তথ্যে দেখা গেছে যে একেকটি প্রধান কর্পোরেট সিইওর ব্যক্তিগত অবসরকালীন এ্যাকাউন্টের অর্থমূল্য ৪১ শতাংশ আমেরিকান পরিবারের পুরো অবসরকালীন সঞ্চয়ের সমান। এই সিইও বা স্বভাবতই বৃদ্ধ বয়সের যে কোন চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে সক্ষম যা হয়ত তাদের দরকার নাও হতে পারে। কিন্তু গড় আমেরিকান সিনিয়রের সেই ব্যয়ভার বহনের সাধ্য নেই। ৬৫ বছর বয়সের বেশি প্রায় ৭০ ভাগ আমেরিকানের কমপক্ষে ৩ বছর দীর্ঘকালীন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তাদের অনেকেরই সেই ব্যয় বহন করার সাধ্য নেই। এই যে বৈষম্যমূলক অবস্থা এটা উদ্ভুত হওয়ার একটা কারণ হলো অবসরকালীন সুবিধা সংক্রান্ত বিধিনিয়মগুলো শীর্ষ নির্বাহীদের অনুকূলেই করা হয়েছে। আমেরিকায় গড় কর্মচারীদের নিশ্চিতরূপে মাসিক অবসরভাতা প্রাপ্তির ব্যাপারটা অতীতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ফরচুনের বিচারে শীর্ষ ৫শ’ ফার্মের মধ্যে ৩৮৩টি ফার্মের দেয়া তথ্যে নির্বাহীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার যে ব্যবস্থার কথা জানা গেছে তাতে দেখা যায় যে, অর্ধেকেরও বেশি সিইও প্রথাগতভাবে জীবনের বাকি দিনগুলো কোম্পানির কাছ থেকে নিশ্চিতরূপে নিয়মিত অবসরভাতা পেয়ে থাকে। অথচ একই প্রতিষ্ঠান সাধারণ কর্মীদের হয় আদৌ কোন পেনশন দেয় না অথবা দিলেও তা সামান্য পরিমাণে দেয়। উপরন্তু তাদের বেতন থেকে সেই অবসরভাতার খরচও কেটে রেখে দেয়। ঋণমুক্ত কলেজ শিক্ষা যেভাবে সম্ভব উচ্চতর শিক্ষা আমেরিকার লাখ লাখ ছাত্রের জন্য মৃত্যুদ-ের মতো। এতে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে এবং সমাজে অর্থনৈতিক বিভাজন বাড়িয়ে দেয়। ছাত্রদের ঋণের পরিমাণ এখন ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং এই ঋণের বোঝা সবচেয়ে বেশি চেপে বসেছে কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ছাত্রদের ওপর। তরুণ, নিম্ন আয়ের আফ্রিকান-আমেরিকান পরিবারগুলোর ছাত্র ঋণের পরিমাণ শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আমেরিকায় সম্পদের কেন্দ্রীভবন যেমন বাড়ছে তেমনি আবার জনগণের ঋণের অঙ্কেরও স্ফীতি ঘটেছে। অতিধনিকরা আর্থিক সম্পদকে অসৎ কৌশলের আশ্রয় নিয়ে করের হাত থেকে রক্ষা করছে। এতে সরকার বিপুল আয় থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি শিক্ষা খাতে ব্যয় করার মতো অর্থ আগের মতো পাচ্ছে না। ৩টি বাদে বাকি সব অঙ্গরাজ্য ২০০৮ এর মন্দার আগে উচ্চতর শিক্ষার পিছনে যে অর্থ ব্যয় করত আজ তার চেয়ে কম করছে। এই আর্থিক ঘাটতির ফলে কলেজ ছাত্ররা ও তাদের পরিবারগুলো আরও গভীরভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে। অথচ কেন্দ্রীভূত সম্পদের ওপর কর বসালে সেই অর্থ দিয়ে টিউশন ফি মুক্ত সরকারী কলেজে উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায় এবং তাতে কলেজ ছাত্রদের ঋণগ্রস্ততার অবসান ঘটতে পারে। সরকারী কলেজগুলো টিউশন ফি মুক্ত করার জন্য প্রতি বছর ৭ হাজার ৬শ’ কোটি ডলার দরকার। এই অঙ্কটা নিহায়ত কম বড় নয়। কিন্তু মোটামুটি আকারের সম্পদ কর বসিয়ে এই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। আমেরিকার সর্বাধিক ধনী যে ১ শতাংশ মানুষ আছে তাদের সম্পদের ওপর মাত্র ১ শতাংশ কর বসালে বছরে ২৬ হাজার কোটি ডলার আদায় করা সম্ভব। এই অর্থ দিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী ছাত্রদের টিউশন ফি ফ্রি করে দেয়া এবং বর্তমানে ছাত্রদের কাঁধে যত ঋণের বোঝা চেপে বসে আছে ১০ বছর সময়ের মধ্যে সেই বোঝা মুক্ত করে দেয়া সম্ভব। উল্লেখ করা যেতে পারে যে কলেজ টিউশন ফি মুক্ত করার আন্দোলন গত বছর নাটকীয়ভাবে জোরদার হয়ে উঠেছে। অতি ধনীদের ট্যাক্স গ্রীন ইকোনমি সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানি বাদ দিয়ে বিশুদ্ধ জ্বালানি অর্থনীতিতে উত্তরণ এ সময়ের দাবি। এর ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যত বংশধরদের জীবন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবি হলো বিত্তবান শিল্পায়িত দেশগুলোকে কার্বন নির্গমন সবচেয়ে দ্রুত ও সবচেয়ে বেশিমাত্রায় হ্রাস করতে হবে। কারণ কার্বন ব্যবহারের মাধ্যমে ইতিহাসগতভাবে তারাই সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধি লাভ করেছে। কথাটা যুক্তরাষ্ট্রের বেলায়ও প্রযোজ্য। সেখানে দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ পরিবার দেশের ব্যবহৃত জ্বালানির যে অংশটুকুর জন্য তাদের ন্যায়সঙ্গতভাবে দায়ী হওয়ার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় তা ব্যবহার করেছে। আমেরিকার অতি-ধনিকরা বেশ বড় বড় গাড়ি চালায়, অনেক বড় বাড়িতে তাপ সঞ্চার করে, অনেক বেশি বিমানে চলাচল করে এবং অনেক সময় বিলাসবহুল প্রাইভেট জেটেও চলে। অথচ সর্বাধিক মাত্রায় কার্বন ব্যবহার করেও এই মানুষগুলো তাদের এসব কার্যকলাপের প্রকৃত সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাসুল পরিশোধ করে না। তাদের কোন সারচার্জ দিতে হয় না এবং আর্থিক পরিণতি ভোগ করতে হয় না। অন্যদিকে কেনটাকির কয়লা খনি থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার রিচমন্ডের মতো রিফাইনারি শহরগুলো পর্যন্ত গোটা আমেরিকার ‘নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে কয়েক দশক ধরে কয়লা, গ্যাস, তেল আহরণের স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের ধকল সামলাতে হয়েছে। কঠিন নির্গমন হ্রাস করে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি অর্থনীতিতে উত্তরণের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন সন্দেহ নেই। তবে তার জন্য শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের লোকদের কাছ থেকে অসঙ্গত হারে মাসুল আদায় করলে চলবে না। সেটা বাদ দিয়ে অতি-ধনীদের বিলাস সামগ্রীর ওপর কর বসালেই বিপুল অঙ্ক আদায় হতে পারে। যেমন প্রাইভেট জেট বিমান বিক্রি ও পরিচালনার ওপর সারচার্জ বসিয়ে এই খরচ বহন সম্ভব। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে লাক্সারী প্রাইভেট জেট ১২ হাজারের বেশি। আগামী দশকে এই শিল্প থেকে আরও ৯২০০টি বিমান তৈরি হবে। এসব জেটের প্রতিটি উড়ার সময় প্রতি ঘণ্টায় যে পরিমাণ জ্বালানি খরচ করে তা একটা গাড়ির সারা বছরের জ্বালানি ব্যয়ের সমান। এই লাক্সারী জেটের ওপর কর বসালেই বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আদায় হতে পারে এবং তা বিশুদ্ধ জ্বালানিতে উত্তরণের কাজে ব্যয় করা যেতে পারে। শুধু লাক্সারী জেটই বা কেন, লাক্সারী কার, প্রমোদতরী সবই করের আওতায় আনা যেতে পারে। এতে হয়ত কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারপরও নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভাবলে এমন পদক্ষেপই সঙ্গত। ২ মার্চ ৭১-এ উড়ল ঢা.বি. কলাভবনে স্বপ্নের সেই পতাকা
×