ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘৃণ্য মানব পাচার

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৩ মার্চ ২০১৬

ঘৃণ্য মানব পাচার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী তৎপরতা সত্ত্বেও মানব পাচার কমছে না। র‌্যাব সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানব পাচারের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পেয়েছে। রাজধানীসহ যশোর ও গাজীপুরে এই কুখ্যাত চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয়েছে। উদ্ধার করেছে ৪ হতভাগ্য নারীকে, যাদের মধ্যে আছে কিশোরীও। একই সঙ্গে উদ্ধার করেছে কয়েকটি পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানের জাল টিকেট, বিদেশে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র, ভিডিও ক্যামেরা, মোবাইল সেট ইত্যাদি। এর জন্য প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতাও নিতে হয়েছে। উদ্ধারকৃত নারীদের কাছ থেকে জানা যায়, পাচারকারী চক্রের উদ্দেশ্য ছিল বিদেশে তাদের দিয়ে নীতি-নৈতিকতাহীন কাজকর্ম করানো, গৃহকর্মের নামে দাসী হিসেবে নিয়োগ অথবা কিডনি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় করে ব্যবসা। সেই আদিকাল থেকেই প্রচলিত মানব পচার বা দাস ব্যবসা। এমনকি এক দেশ থেকে জোরপূর্বক নর-নারী ও শিশু ধরে নিয়ে অন্য দেশে পাচার ও বেচাকেনার খবরও মেলে। দুঃখজনক হলো, আদপেই তা কমেনি। বরং নানা কায়দায়, নানারূপে বিভিন্ন প্রকরণ ও ছদ্মাবরণে মানব পাচার হয়েই চলেছে এবং তা আন্তর্জাতিক পরিম-লে পরিব্যাপ্ত। আরও যা দুঃখজনক তা হলো, মানব পাচারের অন্যতম লক্ষ্য থাকে নারী ও শিশু। গত কয়েক মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া-ইরাক-লিবিয়া-মিসর ও অন্যান্য দেশ থেকে অগণিত মানুষ নিছক জীবনরক্ষার তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা, কানাডা-অস্ট্রেলিয়া ও অন্যত্র। এর মাধ্যমেও ঘটে থাকে মানব পাচার। এক শ্রেণীর দালাল চক্র শরণার্থীর ছদ্মাবরণে পাচার করে থাকে নর-নারী ও শিশু। তাদের মধ্যে আছে বাংলাদেশীও। তবে বাংলাদেশীদের প্রধানত পাচার করা হয়ে থাকে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, লেবানন, জর্ডান ও সংলগ্ন দেশগুলোতে। পাকিস্তান ও ভারতে বাংলাদেশীদের পাচার করা হয়। এর মধ্যে পুরুষরা প্রধানত কৃষি শ্রমিক, কলকারখানা ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় উদয়াস্ত পরিশ্রম করে কায়ক্লেশে জীবনযাপন নির্বাহ করতে পারলেও নারী ও শিশুদের অবস্থা খুবই করুণ। অধিকাংশ নারীর ঠাঁই হয় গৃহকর্মে অথবা যৌনপল্লীতে। গৃহকর্মে নিযুক্ত নারীদেরও নানা অপকর্ম করতে বাধ্য করা হয়। শিশুদের অবস্থা হয় আরও শোচনীয়। মধ্যপ্রাচ্যে শিশুদের উটের জকি হিসেবে ব্যবহারের রেওয়াজ আছে। আরও যা করা হয় তা হলো কিডনি-লিভারসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবসা। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর দালাল প্রলোভনের ফাঁদ পাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। অভাব-অনটনে অথবা প্রলোভনে পড়েই হোক মানুষ তাতে পা দেয়। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দালালের হাতে তুলে দেয়াসহ পিতা-মাতা কর্তৃক শিশু বিক্রির খবরও দুর্লভ নয়। সময় সময় দালাল চক্রের কতিপয় সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও অধিকাংশই থেকে যায় অধরা। আর রাঘববোয়ালদের ধরার তো প্রশ্নই ওঠে না। মার্কিন মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে বার বার বাংলাদেশকে মানব পাচারে নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক হতে হবে। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি দেশেই গড়ে তুলতে হবে কর্মসংস্থান। নারী ও শিশুর জন্য সৃষ্টি করতে হবে অধিকতর সুযোগ। জীবন-জীবিকার জন্য কোন অবলম্বন ও আশ্রয় খুঁজে পেলে মানুষ আর সহজে প্রলোভনে পা দেবে না।
×