ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভিসা পেতে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২ মার্চ ২০১৬

ভিসা পেতে ভোগান্তি

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের কয়েকটি দেশে ভিসা পেতে সমস্যা ও জটিলতা বাড়ছে দিন দিন। দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও থাইল্যান্ড অন্যতম। সময় সময় অবশ্য সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়ার ভিসা পেতেও সমস্যা হয়ে থাকে। তবে প্রথমোক্ত চারটি দেশে বাংলাদেশীদের ভিসা পেতে জট ও জটিলতা বাড়ছে ক্রমশ। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে বাংলাদেশীদের রীতিমতো নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে ও হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। যুক্তরাজ্যে অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিকরা এমনকি একাধিক এমপি পদ অলঙ্কৃত করাসহ বিভিন্ন পদ-পদবী ধারণ করে আছেন। আন্তর্জাতিক পরিসরে লন্ডনের সুপরিচিত ব্রিক লেন ও ব্রিটিশ কারি হাউসগুলো তো মূলত বাংলাদেশীদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে আসছে সুনামের সঙ্গে। অতঃপর সেই লন্ডনেই কিনা বর্তমানে বাংলাদেশীদের ভিসা পেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। পোহাতে হচ্ছে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তি। উচ্চহারের ফিসহ যাবতীয় কাগজপত্র-পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর মাসের পর মাস অপেক্ষা করার পরও মিলছে না ভিসাÑ তথা সে দেশে প্রবেশের অনুমতিপত্র। ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর ইউকে ভিসা প্রসেসিং সেন্টার ঢাকা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরের পর এই ভোগান্তি উঠে চরমে। এখন ভিজিট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, স্পাউজ ভিসা প্রায় কোনটাই পাওয়া যায় না বললেই চলে। এক পরিসংখ্যানে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। আগের ৭০ ভাগের তুলনায় বর্তমানে ১০ ভাগও মিলছে না ভিসা। আগে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তির বাংলাদেশ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে যেতে সময় লাগত মোটামুটি ছয় মাস। বর্তমানে আইনী প্রক্রিয়া এতই জটিল হয়েছে যে, বছরের পর বছর গড়িয়ে গেলেও মিলছে না ভিসা। ইমিগ্রেশন নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন ও কড়াকড়ি আরোপের কারণে অনেক বাঙালীর কাছে স্বপ্নের দেশ লন্ডন থেকে যাচ্ছে অধরাই। অনুরূপ অবস্থা হয়েছে ভারত ও থাইল্যান্ডের ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। অথচ এ দুটো দেশে প্রতিদিনই অগণিত বাংলাদেশী ভ্রমণ ও চিকিৎসা পেতে আগ্রহী। ভারতীয় ভিসার ই-টোকেন পাওয়া তো রীতিমতো একটা সমস্যা। থাইল্যান্ডে ভিসা পেতে আগে মোটেও সমস্যা হতো না। সহজেই মিলত টুরিস্ট ভিসা। তবে গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি পাল্টেছে, বিশেষ করে সে দেশের একাধিক মন্দিরে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে। বর্তমানে কয়েক মাস লেগে যাচ্ছে সে দেশের ভিসা পেতে। যেসব দেশে ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের সমস্যা ও দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে ভিসা পদ্ধতি সহজতর করার উদ্যোগ নিতে হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বেশ জোরের সঙ্গে বারবার বলা হচ্ছে যে, এ দেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই এবং জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসীদের কোন ঠাঁই হবে না। যাবতীয় জঙ্গী কার্যক্রম দমনের ব্যাপারেও সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সে অবস্থায় বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনকে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশ যেমন ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে ভিসা জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলসহ অর্থনীতি সচ্ছল ও স্বনির্ভর হলে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে ভিসা পদ্ধতি সহজতর করে তোলা অসম্ভব নয়।
×