ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালের পথে আলোর রেখা ...

পাকিদের হারালেই স্বপ্ন পূরণ!

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১ মার্চ ২০১৬

পাকিদের হারালেই স্বপ্ন পূরণ!

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, ওয়ানডের মতো টি২০তেও ‘পারফেক্ট’ দল হয়ে উঠতে বাংলাদেশের সময় প্রয়োজন। প্রয়োজন দুই-তিনজন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। আবেগ যুক্তি মানে নাÑ ক্রিকেট আজ আবেগের জায়গা ছুঁয়েছে বলেই প্রথমবারের মতো টি২০ ফরমেটে আয়োজিত এশিয়া কাপে ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে এই বাংলাদেশ! ‘পারফেক্ট’ না হয়েও সাব্বির-মুস্তাফিজে সওয়ার যে টাইগারবাহিনী। উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের কাছে ৪৫ রানের বড় হারের পর আবেগী দর্শকের বক্তব্য, ‘বাংলাদেশ এর চেয়ে ভাল খেলার ক্ষমতা রাখে।’ ৫১ রানের বিশাল জয়ে পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ানো, প্রতিপক্ষ আরব আমিরাত বলেই হয়ত মন ভরছিল না! আশা বাঁচিয়ে রাখতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততেই হবে, এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে ইতিহাস গড়ল মাশরাফিবাহিনী। ২৩ রানের দারুণ জয়ে এশিয়ার সব পরাশক্তির সঙ্গে বাংলাদেশও আজ ফাইনালের রেসে। পয়েন্ট টেবিলের সেরা দুটি দল খেলবে ফাইনালে। ২ খেলায় দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে ভারত। ৩ খেলায় ১ হার ও দুই জয়ে সমান পয়েন্টে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ (সোমবার পাকিস্তান-আমিরাত ম্যাচের আগ পর্যন্ত)। বুধবার নিজেদের শেষ ম্যাচে টাইগারদে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ওই ম্যাচ জিতলে ফাইনালের পথে এগিয়ে থাকবে মাশরাফির দল। হারলেও সম্ভাবনা থাকবে। যেহেতু প্রতিটি দল চারটি করে ম্যাচ খেলছে, সেক্ষেত্রে সমান দুই জয়ে ফাইনালের টিকেটের লড়াই শেষ পর্যন্ত ‘হেড টু হেড’, এমন কি নেট রান রেটেও গড়াতে পারে। আবার শীর্ষ তিন দল তিনটি করে ম্যাচ জিতলেও একই পরিস্থিতির তৈরি হবে! অবশ্য প্রতিটি দলের তিনটি করে ম্যাচ শেষ হলে হিসেবটা কাছাকাছি চলে আসবে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বিশ্ববাসীকে চমকে দেয় বাংলাদেশ। সেই থেকে চমক অব্যাহত। বড় দলগুলোর বিপক্ষেও রঙিন পোশাকে টাইগারদের পারফর্মেন্স এতটাই ধারাবাহিক, যে ‘চমক’ শব্দটা এখন বেমানান। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে বধ করে (সিরিজ জয়), বস্তুত বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত বাংলাদেশ। ভারত-শ্রীলঙ্কাকে টেক্কা দিয়ে ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে প্রথম কোন বৈষয়িক টুর্নামেন্টের শিরোপার দোড়গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল টাইগাররা। ২ রানে হারের আফসোস ক্রিকেটপ্রেমীদের আজও কাঁদায়। সেটি হতে পারত অনুপ্রেরণা। কিন্তু হুট করেই এবার এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আয়োজন টি২০ ফরমেটে রূপান্তরিত হয়, যে ফরমেটে দলটি এখনও ধাতস্থ হতে পারেনি। বোলিংয়ে যে কোন দলকে টেক্কা দিলেও সমস্যা ব্যাটিংয়ে। প্রথম ম্যাচে ভারতের ১৬৬ রানের জবাবে ৭ উইকেটে ১২১Ñএ থামে মাশরাফির দল। সর্বোচ্চ ৪৪ রান আসে সাব্বির রহমানের ব্যাট থেকে। মোহাম্মদ মিথুনের ৪৭ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৩৬* রানের সৌজন্যে ৮ উইকেটে ১৩৩ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। দুর্বল দলের বিপক্ষে ব্যাটিং এবারও মন ভরাতে পারেনি। প্রতিপক্ষকে ৮২ রানে গুড়িয়ে দিয়ে বোলারদের সৌজন্যে জয়টা ৫১ রানের। তবে টিকে থাকার তৃতীয় ম্যাচে প্রতি বিভাগে জ্বলে ওঠে মাশরাফিবাহিনী। টাইগার থাবায় ছিন্ন ভিন্ন লঙ্কান সিংহরা। ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ান সেই সাব্বির। প্রতিপক্ষ বোলিং নিয়ে ছেলেখেলায় মাতেন ২৪ বছরের ডানহাতি উইলোবাজ। ৫৪ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন ৮০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। সঙ্গে সাকিব আল হাসনের ৩২ ও মাহমুদুল্লাহর অপরাজিত ২৩Ñ বাংলাদেশকে এনে দেয় ১৪৭ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। এরপর আল আমিন (৩/৩৪), সাকিব (২/২১) ও মুস্তাফিজুর রহমানের (১/১৯) দুরন্ত বোলিংয়ে লঙ্কানদের ১২৪Ñএ থামিয়ে দিয়ে ২৩ রানের ঐতিহাসিক জয়। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গুড়িয়ে দিয়ে আরও একটি ফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা। সেই স্বপ্ন এখন খুব কাছে। হয়ত ‘এক সিঁড়ি’ দূরত্বে! প্রথমে আরেকটি হুঙ্কারে উড়িয়ে দিতে হবে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তানকে। সাব্বির-মুস্তাফিজের মতো রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের পক্ষে সেটি মোটেই অসম্ভব নয়। প্রথমবারে মতো মুস্তাফিজকে মোকাবেলার অভিজ্ঞতা থেকে লঙ্কান অধিনাযক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ যেমন বলেন, ‘মুস্তাফিজ বাংলাদেশে সেরা আবিষ্কার। ওর বলে বৈচিত্র্য অনেক। বিশেষ করে এখানকটা উইকেটে, বল যেখানে গ্রিপ করে, সেখানে তাকে মোকাবেলা করাটা ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও কঠিন। এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট।’ পাকিস্তানের বিপক্ষে মুস্তাফিজের এই ব্রিলিয়ান্ট রূপটা ভক্তরা আরেকবার দেখতে চায়। আছেন টাইগার ক্রিকেটের প্রাণ সাকিব আল হাসান, ক্রমশ টি২০ ব্যাটিংয়ের ‘আইকন’ হয়ে ওঠা সাব্বির। যার মানসিকতাটাই হতে পারে সতীর্থদের অনুপ্রেরণা, ‘আমি কখন হাফসেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরির চিন্তা করি না। সবসময় দলের জন্য খেলি। যদি ৪৯ রানে ক্রিজে থাকি, আর আমাকে ছক্কা মরতে বলা হয়, আমি সেটাই করব!’
×