ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকদের বেহাল ব্যাটিংয়ে উত্তেজনা ভেস্তে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পাকদের বেহাল ব্যাটিংয়ে উত্তেজনা ভেস্তে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ উত্তেজনার রেশটা স্টেডিয়ামের বাইরেই পাওয়া গেল। দর্শকের স্রোত পুরো স্টেডিয়াম এলাকায়। ভারত-পাকিস্তান হাইভোল্টেজ ম্যাচ বলে কথা। উভয় দলের সমর্থকগোষ্ঠীও দেখা গেল ছোট ছোট দলে। সবাই অপেক্ষায় আছেন গ্রেট খোলার। এই উত্তেজনার উত্তাপটা সম্ভবত পাকিস্তান দলকেই ছুঁয়ে গেল বেশি। আগে ব্যাট করতে নেমে যেভাবে তারা উইকেটে ছটফট করছিলেন সেটার মাশুল দিতে হয়েছে সুস্থির ভারতের দারুণ বোলিংয়ের মুখে। শুরু থেকেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে বিপর্যয়ে পড়া পাকরা ১৭.৩ ওভারে মাত্র ৮৩ রানেই গুটিয়ে গেল। দুটি রানআউটসহ পাক ব্যাটসম্যানদের অস্থিরতার চেয়ে ভারতীয় বোলারদের কৃতিত্বটাকে তাই কমই মনে হয়েছে। এটি ছিল ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সর্বনি¤œ টি২০ সংগ্রহ, আর টি২০ ইতিহাসেই প্রথম ব্যাট করে নিজেদের সর্বনি¤œ। এমন একটি উত্তেজনার আগুনে জল ঢেলে উল্টো লজ্জাজনক ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখাল পাকরা। ৩৭৭ দিন! দীর্ঘ সময় পর আবার পাক-ভারত ক্রিকেট লড়াই। ২০১৩ সালে এজবাস্টনে ভারতের জয় ৮ উইকেটে, ২০১৪ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের জয় ১ উইকেটে এবং একই বছর একই ভেন্যুতে ভারত জয়ী ৭ উইকেটে এবং সর্বশেষ গত বিশ্বকাপে এ্যাডেলেইডে ভারত জয়ী ৭৬ রানেÑ দুই ফরমেটে সর্বশেষ লড়াইগুলোর ফলাফল এমনটাই ছিল। এবার জিতবে কে? টসের কয়েনটা কিন্তু পাক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদিই ছুঁড়লেন, কিন্তু জিতে গেলেন ভারতের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিং ধোনি। এটি ছিল টি২০ ফরমেটে ভারতের বিরুদ্ধে অধিনায়ক হিসেবে আফ্রিদির প্রথম ম্যাচ। ২০১১ বিশ্বকাপে মোহালির সেমিফাইনালে সর্বশেষ ভারতের বিরুদ্ধে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ধোনি আগে ব্যাটিংয়ে পাঠালেন পাকিস্তানকে। আগের তিন ম্যাচে ঘাসে ছাওয়া উইকেটে পেসাররা দারুণ সফল হলেও ভারত মাত্র দুজন পেসার নেয় একাদশে আর পাকরা নামে চার পেসার নিয়ে। ওপেনার শিখর ধাওয়ানের চোট, তাই আজিঙ্কা রাহানেকে নেয় ধোনিরা। আগে ব্যাটিংয়ে নামার পর যেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে নামার যে উত্তেজনা সেটা বেশি ছুঁয়ে গেল পাক ব্যাটসম্যানদের, উইকেটে নেমে ছটফট করার কারণে ছেয়ে ফেললো তাদের বিপর্যয়। ভারতীয় বোলাররা সুস্থির থেকেই বোলিং করছিলেন। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারেই ঘটে গেল অনেক ঘটনা। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই ধোনিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন নির্ভরযোগ্য ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজ (৪)। দ্বিতীয় বলে দারুণ চার হাঁকিয়ে শুরু করেছিলেন তিনি। চতুর্থ ওভারে সাজঘরে ফেরেন শারজিল খান (৭) স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে শোয়েব মালিকের ড্রাইভ অপর প্রান্তের উইকেট ভাঙ্গলেও দারুণ অস্থির খুররম মঞ্জুর এ যাত্রা বেঁচে যান সময় মতো ক্রিজে ফিরে। কিন্তু পরের বলেই অহেতুক রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে গেলেন নিজ দোষে। ১০ রান করতে পেরেছিলেন তিনি। ঘটনাবহুল পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৩২ রান তুলে বেশ চাপের মুখেই পাকরা। শুরুটা ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে বাজে হয়েছিল পাকিস্তানের। সেটা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। সপ্তম ওভারের শেষ বলে অভিজ্ঞ মালিকও উইকেটের পেছনে ধোনিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মাত্র ৪ রান করে। আশিষ নেহরা ও জাসপ্রিত বুমরাহকে অনুসরণ করে পেস অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডেও দারুণ বোলিং করে তুলে নিলেন তাকে। পরের ওভারের প্রথম বলেই পাক ব্যাটিংয়ের সর্বশেষ ভরসা উমর আকমলকে (৩) এলবিডব্লিউ করে ধ্বংসের শেষটাও এনে দিলেন যুবরাজ সিং। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি মেরুদ- ভেঙ্গে যাওয়া পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা যেখানে কিছুই করতে পারেননি, সেখানে লেট অর্ডারদের কিছুই করার ছিল না। উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদ একাই লড়ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ। এমনকি ‘বুম বুম’ আফ্রিদি মাঠে নামতেই দর্শকদের যে উল্লাস সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে মাত্র ২ বল। পাক ক্রিকেটভক্তদের হতাশ করে মাত্র ২ রান করতেই সাজঘরে ফিরেছেন রানআউট হয়ে। শেষ পর্যন্ত ১৭.৩ ওভারে মাত্র ৮৩ রানেই গুটিয়ে গেল পাকিদের ইনিংস। উত্তেজনার যবনিকাপাত ঘটল পাক ব্যাটসম্যানদের বেহাল ব্যাটিংয়ের কারণে। সরফরাজ ২৪ বলে ৩ চারে সর্বোচ্চ ২৫ রান করতে পেরেছেন। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে হার্দিক ৮ রানে ৩টি এবং জাদেজা ২টি উইকেট নেন।
×