ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজ-মালিঙ্গা গতির লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মুস্তাফিজ-মালিঙ্গা গতির লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুজনই ইনজুরি ফেরত। একজনের প্রত্যাবর্তন হয়েছে আগের মতোই ভয়াল রূপে, আরেকজন নিজেকে খুঁজে পাননি আগের মতো। তবে এখানে প্রতিপক্ষের বিষয়টাও অনেক বড় বিষয়। তবে সেটা যাই হোক প্রত্যাবর্তনটা ভাল হওয়াতে লাসিথ মালিঙ্গা আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উজ্জীবিত থেকেই বল হাতে নামতে পারবেন। অবশ্য বাংলাদেশের বোলিং বিভাগে ভরসার নাম মুস্তাফিজুর রহমান পরের ম্যাচেই আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে নিজের পুরনো আগুনে আবারও ঘি ঢালতে পেরেছেন। সেই মুস্তাফিজকে নিয়ে আজ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বোলিং সাফল্য পেতে মুখিয়ে থাকবে বাংলাদেশ দলও। এবার স্রোতের বিপরীতে উইকেট তৈরি করা হয়েছে। পেসারদের সহায়ক উইকেট সাধারণত এই উপমহাদেশে তেমন দেখা যায়নি কোন সময়ই। তবে এবার টি২০ এশিয়া কাপে ঘাসে মোড়ানো সবুজ রংয়ের উইকেট দেখে সবাই বিস্মিত হয়েছেন। এ ধরনের উইকেটে পেসাররাই সহায়তা পেয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দল পেস আক্রমণে দুরন্ত হয়ে উঠেছে। যে দলটি একসময় ছিল বাঁহাতি স্পিনারদের আঁতুর ঘর এবং দলের অন্যতম ভরসাও ছিলেন সেই দলটি এখন পেসারদের ওপর নির্ভর করে। সে জন্যই এবার উইকেটটাও সেভাবেই গড়া হয়েছে। ইতোমধ্যে হওয়া চার ম্যাচেই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন পেসাররা গতির ঝড় তুলে। বাংলাদেশ যেন এবার এশিয়া কাপে এমন উইকেট গড়ে উপমহাদেশের জন্য উদাহরণই সৃষ্টি করলো। তবে উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশের ভরসা মুস্তাফিজ ঝড় তুলতে পারেননি। বরং তার ওপর দিয়েই উল্টো ঝড় গেছে। ভারতীয় দল গত জুনে বাংলাদেশ সফরে উল্কাবেগে হঠাৎ ফুলকির মতো উদয় হওয়া এ তরুণের পেসেই তো নতি স্বীকার করেছিল। প্রথমবারের মতো হারিয়েছিল সিরিজ। সেই মুস্তাফিজকে নিয়ে কম গবেষণা করেনি তারা। এমনকি ম্যাচের আগেরদিনও মুস্তাফিজকে ম্যাচের অন্যতম ‘ফ্যাক্টর’ বলেছেন বিরাট কোহলি। সত্যিই তিনি বড় ফ্যাক্টর। মুস্তাফিজ এদিন ব্যর্থ হলেন বলেই বাংলাদেশ দলও পরাজিত হলো বাজেভাবে। এদিন যেন ‘কাটার’ এবং সুইং দুটোই ভুলে গিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। এক ওভারে এমনকি ২১ রানও দিয়েছেন, সবমিলিয়ে ৪০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। একেবারেই বেমানান লাগছিল মুস্তাফিজের নামের পাশে। ভীতিকে যতটা না জয় করেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, তারচেয়ে দীর্ঘ এক মাস বসে থাকার কারণে ছন্দহীন হয়ে পড়াটাই মূল কারণ মুস্তাফিজের এমন নখ-দন্তহীন বোলিংয়ের। গত মাসে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে চার ম্যাচের টি২০ সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ খেলেননি তিনি কাঁধে টান লাগার কারণে। সে জন্য এমনকি এবার পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) টি২০ আসরেও খেলা হয়নি। বসেই ছিলেন, প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে দূরে। আর সে জন্যই খেই হারিয়ে ফেলেন মুস্তাফিজ। কিন্তু আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে আবারও জ্বলে উঠেছেন। একের পর এক অফকাটার এবং দুর্দান্ত সুইংয়ে বিভ্রান্ত এবং বিপর্যস্ত করেছেন প্রতিপক্ষকে। টানা দুই বলে দুটি উইকেটও তুলে নিয়েছিলেন। এমনটা চিরাচরিত নিয়ম মুস্তাফিজের। যখনই একটি উইকেট তুলে নেন, সেটাকে হ্যাটট্রিকের সুযোগ হিসেবে পরিণত করা পর্যন্ত নিয়ে যান। ৪ ওভারে ১৩ রানে ২ উইকেট। ফিরেছেন ছন্দে মুস্তাফিজ। আজ শক্তিশালী লঙ্কানদের বিরুদ্ধে তাই তার বোলিংয়ের ওপরই ভরসা করবে বাংলাদেশ দল। গত বছর কলম্বোয় ১১ নবেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন মালিঙ্গা। শ্রীলঙ্কার পেসস্তম্ভ ফিরেছেন দুর্বলতর দল আমিরাতের বিরুদ্ধে। এদিনই জ্বলে উঠেছেন, স্বরূপেই আছেন সেটার প্রমাণও দিয়েছেন। ২৬ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন। প্রতিপক্ষ শিবিরে নিদারুণ আতঙ্ক ছড়িয়েছিলেন প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে। আস্থা ও ভরসার সুযোগ্য প্রতিদান দিয়েছেন। এশিয়া কাপ দিয়ে আবার ফিরেই ঝড় তুলেছেন গতির। বিশ্রামে থাকার সময় যেন নিজের সক্ষমতার ছুরিতে শাণ দিয়েই এসেছেন। চলতি আসরের আগে এশিয়া কাপে ১২ ম্যাচ খেলে ২৪ উইকেট শিকার করেছেন মালিঙ্গা মাত্র ৪.৬৮ ইকোনমি রেট ও ২১.১২ গড়ে। সেসব ছিল ওয়ানডে টুর্নামেন্ট। এবার টি২০ টুর্নামেন্ট। ক্ষুদ্রতম ফরমেটের ক্রিকেটে তিনি যে আরও দুরন্ত সেটা বুঝেছে আমিরাত। এবার তাকে মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের। আর টি২০ ক্রিকেটের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় বিশ্বের চার নম্বর বোলার এখন তিনি উইকেট শিকারের দিক থেকে। ৬২ টি২০ খেলে ৭৮ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। দুদলের এ দুই ভরসার মধ্যে আজ বেশ উপভোগ্য গতির লড়াই দেখতে মুখিয়ে থাকবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সাফল্য পাওয়ার দিক থেকে এগিয়ে থাকবেন যিনি তার দলই জয়ের পথে এগিয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
×