ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচন

দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আমতলীতে যুবক নিহত ॥ ভোলায় আহত ৩০

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আমতলীতে যুবক নিহত ॥ ভোলায় আহত ৩০

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ৩ দিন ধরে ভোলায় চরম উত্তেজনা, হামলা, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেই চলছে। মঙ্গলবার রাতে উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভাংচুর করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ১৫ এবং বিএনপির ৪টি নির্বাচনী অফিস। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তা-ব। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মী কামাল (৩৫) গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন মনছুরের অবস্থা গুরুতর। তাদের মুমূর্ষু অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে বরগুনার আমতলীতে হলদিয়া ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত একজন মঙ্গলবার মারা গেছেন। খবর নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো। চেয়ারম্যান মনছুরের ওপর হামলার ঘটনায় বুধবার সকাল ৭টা থেকে ভোলার ঘুইংঘার হাট-বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল করে ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ৪ ঘণ্টা যানবাহন বন্ধ থাকে। বর্তমানে ওই ইউনিয়নে থমথম অবস্থা বিরাজ করছে। অন্যদিকে বাপ্তা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেনকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হলে কয়েক হাজার মানুষ ভোলা থানার সামনে বিক্ষোভ করে। এছাড়া সোমবার রাতে ধনিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদ হোসেন কবিরকে মারধরের ঘটনায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এ্যাডভোকেট সোয়েব আল মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আহত চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন মনছুরের কর্মী ইকবাল জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিএনপির প্রার্থীর কর্মীরা আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থীর রাঢ়ির হাটবাজারের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করে। এই সংবাদ পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তার লোকজন ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে কমর উদ্দিন বাজার এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বিএনপির প্রার্থী রাইসুল গ্রুপের হামলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী লিয়াকত হোসেন মনসুরসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে মনসুর চেয়ারম্যানসহ ৩ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কামাল নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বেধড়ক মারধরে মনসুরের দাঁত পড়ে গেছে। এ ঘটনার পর বিএনপির কর্মীরা উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের ১৫টি অফিস ভাংচুর করে। বুধবার সকালে উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কমরউদ্দিন, ব্রিকফিল্ড, মাঝ কান্দি, গজারিয়া হাট, বেড়ির হাট এলাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা এবং আসবাবপত্র পড়ে রয়েছে। এছাড়া কমরউদ্দিন ও নতুন মসজিদ এলাকায়ও বিএনপির অফিস দুটি ভাংচুর করা। অপর দিকে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী রাইসুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা গজারিয়াহাট, বালিয়ারহাট, রাস্তার মাথা, কমরউদ্দিন এলাকায় তার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করেছে। এ খবর পেয়ে কমরউদ্দিন এলাকায় তিনি গেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তাদের ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। এ ব্যাপারে তারাও একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভোলা থানার ওসি খায়রুল কবির জানান, উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় লিয়াকত হোসেন মনছুর বাদী হয়ে ২৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে বাপ্তা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি কামাল হোসেনকে মঙ্গলবার রাতে ভোলা নতুন বাজার থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বাপ্তা ইউনিয়ন থেকে কয়েক হাজার মানুষ নতুন বাজার, ভোলা থানার সামনে রাত ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হলে জজকোর্টের সামনে গাজিপুর রোড সড়কে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ করে। পরে তার জামিন হওয়ার সংবাদ পেয়ে তারা আনন্দ মিছিল করে এলাকায় ফিরে যায়। আমতলীতে যুবক নিহত ॥ বরগুনার আমতলীর হলদিয়া ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে সোমবার সন্ধ্যায় ১২ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ঢাকায় চিকিৎসাধীন বশির শিকদার (২৮) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। জানা গেছে, তালুকদার বাজার ব্রিজের ওপর সোমবার সন্ধ্যায় হলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম মৃধা ও জাকির হোসেন বিশ্বাসের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়। এ সময় দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে আহত সাতজনকে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত বশিরের অবস্থা সংকটজনক হলে রাতেই মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ তেংমং উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। বশিরকে তার পরিবার পটুয়াখালীতে না নিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবর রাতে আমতলীতে ছড়িয়ে পরলে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়।
×