ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সফিউল্লাহ আনসারী

শিশুর প্রতি সহিংসতা নয়

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শিশুর প্রতি সহিংসতা নয়

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। শিশুরাই আগামীর কর্ণধার। শিশুরা নি®পাপ। পরিবারে সকলের প্রিয় আদরের পাত্র শিশু। শিশু মাত্রই পরিবারের সবার আদর-ভালবাসা আর নয়নের মণি। অথচ কোমলমতি শিশুরাই আজ দুর্বৃত্তদের ঘৃণ্য টার্গেট। অবুঝ শিশুরাই শিকার হচ্ছে খুন, গুম, অপহরণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন সহিংসতার। শিশুহত্যা সমাজে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয়। বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির সম্মুখীন। সমাজ-রাষ্ট্রের অসহায়ত্ত কখনওসখনও প্রকাশ পায় এসব শিশু নির্যাতনের ঘটনায়। বর্তমান দেশজুড়ে কু-মতলবের কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের শিশুর ওপর নির্মম ও বর্বরোচিত আচরণ দংশন করছে মানবতাবোধকে। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই একাধিক শিশু খুন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে। প্রায়ই শিশু অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে, যা সভ্য সমাজের জন্য মোটেই সুখকর নয় বরং আতঙ্কের বিষয়। পারিবারিক শত্রুতার সূত্রপাত যেমন শিশুর মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি পরিচিত বা অপরিচিত দুর্বৃত্তরা শিশুর জীবন নাশ করছে। অনেক সময় পারিবারিক কলহে পড়ে মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজনরা শিশুর সর্বনাশ করছে। ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে প্রকাশ-‘২০১৫ সালে দেশে ১৩৩ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের হিসাবে, গত চার বছরে এক হাজার ৬৯ জন শিশুহত্যা, এক হাজার শিশু ধর্ষণ এবং প্রায় ৫০০ শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে’। এসব হত্যাকা-ের মধ্যে অনেক ঘটনা, মা-বাবা বা স্বজনদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আধুনিক সভ্য সমাজে শিশু হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ প্রবণতা কেন? কারণ হিসেবে প্রথমত শিশুর প্রতি দুর্বলতা অন্যতম। কারণ শিশুর প্রতি মানুষের আবেগ বেশি কাজ করে, তাই অপরাধীর টার্গেট কোমলমতি শিশু। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব, অপ্রতিরোধ্য শিশুশ্রম, পরকীয়া, সম্পদের লোভ, বেকারত্ব, ভিনদেশী কালচার-সংস্কৃতিতে বিদেশী প্রভাব, অনলাইন প্রযুক্তিতে পর্নোগ্রাফির প্রসার ও সহজলভ্যতা, বেপরোয়া জীবনযাপন, পাচার, কর্তৃত্বের বিরোধ-শত্রুতা, ব্যক্তি স্বার্থপরতা ইত্যাদি নেতিবাচক প্রভাবে সমাজের বিবেক বর্জিত কতিপয় নোংরা মস্তিষ্কের লোক শিশুদের প্রতি নৃশংস আচরণে সম্পৃক্ত হচ্ছে। ইদানীং গ্রাম্য মাতব্বরির শত্রুতাও শিশুর জীবন নাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা গত ক’দিন পূর্বে হবিগঞ্জে চার শিশু হত্যার ঘটনাতে প্রকাশ পেয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সর্বস্তরে ‘বিচারহীনতা’ আমাদের অমানবিকতার দিকে ধাবিত করছে। এসব চলতে থাকলে সামাজিক অবক্ষয় ধ্বংস করবে আমাদের সমাজব্যবস্থাকে। তাই বিকৃত মানসিকতার পরিবর্তনে এবং শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক সচেতনতা ও ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। তার সঙ্গে পারিবারিক বোঝাপড়া, শিশুর প্রতি সহমর্মিতার গুরুত্ব আরোপ করা জরুরী। সরকারী উদ্যোগ, আইনের সঠিক বাস্তবায়ন, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিরাপত্তা দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শিশুর জীবনের হুমকি মোকাবেলায় এবং তাদের সুরক্ষার জন্য পরিবারের ভূমিকার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরী। শিশু নির্যাতন ও হত্যার মতো অমানবিক ঘৃণ্য অপরাধ প্রতিরোধ করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ফুলের মতো জীবনের অধিকারী শিশুদের জীবনের নিরাপত্তায় শিশু নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ সময়ে দাবি। আমাদের চাওয়া- জাগ্রত হোক মানবিক মূল্যবোধ, বন্ধ হোক শিশুর প্রতি সহিংসতা । ময়মনসিংহ থেকে
×