ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কম গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন হবে

চার লেন হচ্ছে ॥ এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল রংপুর মহাসড়ক

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চার লেন হচ্ছে ॥ এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল রংপুর মহাসড়ক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চার লেন হচ্ছে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক। আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও দুর্ঘটনা রোধে ১৫ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ও সাসেক সংযোগ প্রকল্প-২ নামের ওই দুই প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ দুটি প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা হতে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত ও সারাদেশে মাঝারি আকারের ১৭টি সেতু নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে নির্মিত হবে কালভার্ট ও সংযোগ সড়ক। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা আসবে বিদেশী সহায়তা থেকে। এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রংপুর থেকে এ মহাসড়কের একটি অংশ লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা হয়ে পাশের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ রুটের মাধ্যমে ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশে সরাসরি ব্যবসা প্রসার ঘটানো সম্ভব। এটি এশিয়ান হাইওয়ে, বিবিআইএন ও সাসেকের একটি অংশ। প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে দেশের কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের দূরত্বও কমে আসবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডরে (বিসিআইএম) নতুন করে বাংলাদেশের আটটি মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এ সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। উত্তরবঙ্গে শিল্পের প্রসারসহ বুড়িমারী-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত ও নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় এ মহাসড়ক ভূমিকা রাখবে। সড়ক ও জনপদ অধিদফতর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। জানুয়ারি মাসে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দেয়া হয় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ শীর্ষক প্রকল্পটি। এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১০ হাজার ১৩৩ কোটি ৬৪ লাখ ব্যয় করা হবে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় সড়ক বিভাগ জানায়, উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় প্রতিদিন ১২ হাজার থেকে ২৯ হাজার যান চলাচল করে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়াবে। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সড়কের দুই পাশে কমগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ করা হবে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হবে ফ্লাইওভার। তিন ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে আড়াই কিলোমিটারের বেশি। অন্যদিকে ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (বাংলাদেশ) শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সড়ক বিভাগের প্রস্তাবনায় প্রকল্পটিতে এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা সহায়তা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (আরএডিপি) ১০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি একটি তালিকা পাঠিয়েছে সড়ক বিভাগ। তালিকায় থাকা ১০ প্রকল্পের মধ্যে এ দুটি অন্যতম। প্রকল্প দুটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। ক্রসবর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে যশোর জেলার শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলা, নড়াইল জেলার সদর ও লোহাগড়া উপজেলা, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার মীরেরসরাই, ফটিকছড়ি, পটিয়া, চন্দনাইশ ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায়। এ প্রকল্পের আওতায়, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ১৭টি সেতু নির্মাণ, সাতটি কালভার্ট নির্মাণ, দুটি টোলপ্লাজা নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করা হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থার প্রায় ৭০ শতাংশ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ের অন্তর্ভুক্ত। অথচ অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত এলাকার জরাজীর্ণ রাস্তা ও সেতুর দুরাবস্থার কারণে এসব সড়কে পর্যাপ্ত যান চলাচল করতে পারে না। আন্তর্জাতিক ট্রানজিট যা চলাচলের লক্ষ্যে এসব এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে আর্থিক ও কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে আন্তর্জাতিক সড়কপথে সঙ্কটের সমাধান হচ্ছে না। এতে আরও বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক জোন তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের ১৭০ কোটি মানুষের ভোগ চাহিদা বাড়ছে। এরপরও দুই দেশের আন্তঃবাণিজ্য আটকে আছে মাত্র ৩ শতাংশে। আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিবেচনায় আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×