ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;মোমিন গাজীর সাক্ষ্য

সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার চাচাকে গুলি করে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার চাচাকে গুলি করে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী মোমিন গাজী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, রাজাকার সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার চাচা চাঁদতুল্লা গাজীকে গুলি করে হত্যা করে। আমি জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে এ সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউটশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। আর আসামি পক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান ও আব্দুস শুকুর। প্রসিকিউশনের সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোমিন গাজী। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭০ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- চিংড়া, থানা-কেশবপুর, জেলা-যশোর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি চাষাবাদ করতাম। আমি চিংড়া প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। একাত্তর সালে আমার বয়স ছিল ১৮/১৯ বছর। ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি এক দিন বেলা আনুমানিক ১০টা সাড়ে ১০টার সময় আসামি রাজাকার সাখাওয়াত হোসেন ও তার বাহিনী রাজাকার ইব্রাহিম, বিল্লাল হোসেন, আজিজ, আজিজ (২) খালেক, লুৎফর, মুজিবর ও ওহেদুলসহ আরও ১৪/১৫ জন রাজাকার আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে ধরে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে আমার চাচা চাঁদতুল্লা গাজীর বাড়িতে নিয়ে যায় আমার ঐ চাচাকে ধরার জন্য। আমার চাচা চাঁদতুল্লা গাজী সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আমার চাচাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে রাজাকার ইব্রাহিম আমাকে মারপিট করে এবং জানতে চায় আমার চাচা কোথায়? আমাকে মারপিটের এক পর্যায়ে আমার হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেলে আমি প্রাণের ভয়ে চাচার বাড়ির পশ্চিম দিকে জঙ্গলে গিয়ে লুকাই। আমাকে চাচার বাড়িতে যখন মারপিট করছিল তখন আমার চাচাত ভাই ফজলুল রহমান চাচার বাড়ির ঘরের বারান্দায় শোয়া ছিল। এর পর জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে আমি দেখতে পাই যে, রাজাকাররা আমার চাচার বাড়ির মালামাল লুটপাট করে এবং চাচার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাজাকাররা এর পর চলে যায়। আমি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে চাচার বাড়িতে এসে আমার চাচি আয়েশা বেগমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রাজাকাররা বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে গেলে আমি সাখাওয়াত হোসেনের পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করি। কিন্তু সে তখন আমাকে লাথি মেরে অজু করার কাঠের খাটিয়ার উপর ফেলে দেয়। সাক্ষী আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ২৮ আশ্বিন বেলা আনুমানিক ১১টা সাড়ে ১১টার দিকে আসামি রাজাকার সাখাওয়াত হোসেন ও তার বাহিনীর সদস্যরা আমার চাচা চাঁদতুল্লা গাজীর বাড়িতে আসতে দেখে আমি পশ্চিম দিকে জঙ্গলে লুকাই। আমার চাচা চাঁদতুল্লা গাজী উত্তর দিকে জঙ্গলে লুকায়। আমি জঙ্গল থেকে দেখতে পাই, আসামি সাখাওয়াত হোসেন ও তার সহযোগীরা আমার চাচাকে খুঁজে যে জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন সেখান থেকে বের করে আনে এবং পিঠমোাড়া করে বেঁধে তাকে চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমি আগে থেকেই এই রাজাকারদের চিনতাম। আমার চাচা চাঁদতুল্লা গাজীকে চারদিন ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন করে। এর পর সাখাওয়াতের নির্দেশে রাজাকার ক্যাম্প থেকে বের করে টানতে টানতে ক্যাম্পের পাশেই কপোতাক্ষ নদের পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার চাচা চাঁদতুল্লা গাজীকে গুলি করে হত্যা করে।
×