ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উচ্ছৃঙ্খল বিএনপি নেতা কর্মীদের মারামারি

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উচ্ছৃঙ্খল বিএনপি নেতা কর্মীদের মারামারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারকে কলুষিত করেছে বিএনপি। জুতা পায়ে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি ও মারামারিতে লিপ্ত হন। এ ঘটনায় রোভার স্কাউটের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী আহত হন। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাক্কায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মাটিতে পড়ে যান। একপর্যায়ে উচ্ছৃঙ্খল বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এদিকে রবিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, শহীদ মিনারে হাতাহাতি ও মারামারির জন্য পুলিশ দায়ী। রাত ১টা ২৮ মিনিটে খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে পৌঁছলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ কয়েকজন শিক্ষক তাকে এগিয়ে আনতে যান। কিন্তু এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপেক্ষা করেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা জুতা পায়ে শহীদ মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা শুরু করেন। এ সময় তাদের পায়ের তলায় পিষ্ট হয় শহীদ মিনারের বেদিতে সাজানো ফুল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা কিছুতেই তাদের নিভৃত করতে পারছিলেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুরোধেও তারা তাদের উচ্ছৃঙ্খলতা অব্যাহত রাখে। তাদের এ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখে খোদ বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতাও ত্যক্ত-বিরক্ত হন বলে জানা যায়। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার কাছে দাঁড়িয়ে বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি করে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে দ্রুত তিনি তার গাড়িতে ওঠেন। তাকে বহনকারী গাড়িটি দ্রুত শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার সময় দলীয় কয়েকজন কর্মী তার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পবিত্র শহীদ মিনারে গিয়ে হাতাহাতি ও মারামারিতে লিপ্ত হওয়ায় সারাদেশে যখন আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে তখন সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে দলীয় বক্তব্য তুলে ধরেন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতেই সরকারী এজেন্টরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুতা নিয়ে উঠেছে এবং হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রবিবার বিকেলে পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, শহীদ মিনারে হাতাহাতি ও মারামারির জন্য পুলিশ দায়ী। রিজভী বলেন, একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কেউ জুতা পায়ে উঠেনি বরং সবাই খালি পায়ে উঠেছিল। তাই বিএনপি নেতাকর্মীরা জুতা পায়ে শহীদ বেদিতে উঠেছিল বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা বানোয়াট ও অসত্য। তবে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাই ক্ষমতার দাপটে জুতা নিয়ে শহীদ বেদিতে উঠেছে। তিনি অভিযোগ করেন, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বারবার পুলিশের বাধার মুখে পড়েছিলেন। এ সময় পুলিশের হামলায় দলের ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসতে পুলিশের বাধা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। রিজভী অভিযোগ করেন, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যাওয়ার পথে বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেনকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে। তিনি এ হত্যাকা-ের নিন্দা ও বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা, বি.বাড়িয়া ও বাগেরহাটের বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হচ্ছে এবং তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। রুহুল কবির রিজভী বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপি চেয়ারপার্সনের শ্রদ্ধা নিবেদনের বিষয়ে ও তার সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করতে পুলিশ ও র‌্যাব প্রধানদের কাছে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন তার গুলশানের বাসভবন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়া পর্যন্ত পুলিশ বারবার বাধা প্রদান করে। গুলশানে তার বাসভবনের সামনেই পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। সব বাধা অতিক্রম করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গাড়িবহর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছাকাছি গেলে পুলিশ দুই জায়গায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে অপেক্ষমাণ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ ঘটনায় ৫০ জনের বেশি বিএনপির নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হন। রিজভী বলেন, হিংসাকে আওয়ামী লীগ পরম ধর্ম বলে মনে করে। এরা হত্যা আর রক্তের উৎসরণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও মানুষের স্বাধীনতাকে সমাধিস্থ করে ফেলছে। দেশে এখন কোথাও কারও নিরাপত্তা নেই। হয় ধরা পড়বে, নয়ত মরে যাবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় শাসক দলের অনুগ্রহের ছায়াতলেই এ দেশের মানুষকে বাঁচতে হবে। রিজভী বলেন, শহীদ মিনারের ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের প্রেসক্রাইব বক্তব্যের বাইরে কোন কথা বলতে পারবেন না; কারণ উনারা সরকারের চাকরি করেন। অথচ এটি নিশ্চিত যে, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। মিডিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, মিডিয়া এ বিষয়ে একটি বানোয়াট ফুটেজ দেখিয়েছে। কারণ অনেক মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন সরকারী দলের অত্যন্ত অনুগ্রহভাজন। সরকার যেমন নানা বিষয়ে নানা কথা বলছেন, ঠিক তেমনই মিডিয়াও বিএনপির ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার জন্য প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা করছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব প্রমুখ। বিএনপি থেকে এ্যাডভোকেট হাসানকে বহিষ্কার ॥ বিএনপির সদস্য এ্যাডভোকেট হোসেন আলী খান হাসানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে রবিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান। বিবৃতিতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ্যাডভোকেট হোসেন আলী খান হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে- দলের যেকোন পর্যায়ের নেতাকর্মী তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×