ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষও সংক্রমিত হতে পারে

রাজশাহীতে কাকের মড়ক এ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জায়!

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাজশাহীতে কাকের মড়ক এ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জায়!

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে কাকের মড়ক লাগার কারণ মিলেছে। মরণঘাতী এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক কাকের মৃত্যু হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় জবাই করা মুরগির বর্জ্য থেকেই কাকের মধ্যে এ রোগ ছড়ায়। ফ্রান্স কেন্দ্রিক ‘ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন ফর এনিমেল হেলথ’ নামের একটি সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এরআগে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা নমুনা সংগ্রহ করে ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ফর এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। তাদের গবেষণাগারে পরীক্ষার পর বিষয়টি ধরা পড়ে। তাদের এই পরীক্ষার প্রতিবেদনেরই সার সংক্ষেপ প্রাণিস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ করেছে। এদিকে প্রাথমিকভাবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, রাজশাহী নগরীতে মুরগির জবাই করা উচ্ছিষ্ট খেয়েই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল কাকগুলো। তাই মুরগির উচ্ছিষ্ট খোলা জায়গায় না ফেলতে সতর্ক করে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। প্রাণীরোগ গবেষকরা বলছেন, মুরগি থেকে কাকের মধ্যে এ রোগ ছড়াচ্ছে। মুরগির মাধ্যমে মানুষও এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য এখনই কঠোরভাবে সতর্ক হওয়া দরকার। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইয়ামিন আলী জানান, এইচ ফাইভ এন ওয়ান (অতি ঝুঁকিপূর্ণ) মাত্রার এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জায় সংক্রমিত হয়েছিল রাজশাহীর কাকগুলো। তবে এই ভাইরাস কাকের মধ্যে কিভাবে সংক্রমিত হলো, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এরআগে আমাদের দেশে মুরগির মধ্যে বার্ড ফ্লুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিন্তু কাকের মধ্যে এত ব্যাপক হারে তা কখনও দেখা যায়নি। তবে কাক সাধারণ মুরগির নাড়িভুঁড়ি খেয়ে থাকে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, জবাই করা মুরগির উচ্ছিষ্ট থেকে কাকের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সমন্বয়ে গঠিত ১২ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল রাজশাহীতে এসেছে। বৃহস্পতিবার তারা আবারও সরেজমিন পরিদর্শন করে এই বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ডাঃ ইয়ামিন আলী জানান, কাক থেকে খামারে বা খামার থেকে যাতে কাকের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে না পারে সেজন্য রাজশাহীর মুরগির বাণিজ্যিক খামারিদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, রাজশাহীতে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু’র অস্তিত্ব পাওয়ার পর সিটি কর্পোরেশন ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে মেয়র (দায়িত্ব¡প্রাপ্ত) নিজাম উল আযীম প্রধান বলেন, সিটি কর্পোরেশন সতর্কতা অবলম্বন করছে। এরইমধ্যে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে বিপুলসংখ্যক কাকের মৃত্যু হয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে ঝাঁকে ঝাঁকে মড়ক দেখা দেয় কাকে। এ ঘটনায় ঢাকা থেকে ইনস্টিটিউট অব ইপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) বা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জয়পুরহাটে অবস্থিত আঞ্চলিক রোগ অনুসন্ধান কেন্দ্র এবং সেন্টার ফর কমিউনিকেবল ডিজিজির কর্মকর্তারা মৃত কাকের আলামত সংগ্রহ করেন।
×