ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক প্রতিবেশীর প্রতিশোধ স্পৃহার নির্মম শিকার- এই চার শিশুকে গত শুক্রবার বাচ্চু মিয়ার সিএনজিতে তুলে নেয়ার পর তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানালেও তারা ছিল উদাসীন- এক শিশুর পিতার সুস্পষ্ট অভিযোগ ;###;পুলিশ বলছে- এটি পরিকল্পিত হত্যা, জড়িতদের ধরিয়ে দিলে এক লাখ টাকা পুরস্

সেই চার শিশুও লাশ! ॥ বাহুবলে অপহৃত হওয়ার ৫ দিন পর-

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সেই চার শিশুও লাশ! ॥ বাহুবলে অপহৃত হওয়ার ৫ দিন পর-

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, বাহুবল (হবিগঞ্জ) থেকে ফিরে ॥ পুলিশের প্রাণান্তকর চেষ্টা আর জনতার সহায়তায় হবিগঞ্জের বাহুবল থেকে সুন্দ্রাটিকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অপহৃত চার স্কুলছাত্রের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হলো। নিহতরা হলো, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মোঃ ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের ২য় শ্রেণীর ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ, তারই চাচাত ভাই জনৈক আব্দুল আজিজের ছেলে ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র তাজেল মিয়া, একই গ্রামের আব্দুল মিয়ার ছেলে ১ম শ্রেণীর ছাত্র মনির মিয়া ও জনৈক আব্দুল কাদেরের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র ইসমাইল হোসেন। বুধবার সকাল ১১টার দিকে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের নিকটবর্তী ইসাবিল এলাকার একটি বালির স্তূপে করা একাধিক গর্ত থেকে এই মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। এ সময় হাজার হাজার নারী-পুরুষের গগনবিদারী চিৎকার আর নিখোঁজ সন্তানদের পিতা-মাতার বুকচাপরানো আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র মিডিয়া কর্মীদের জানান, ৫ দিন আগে গ্রাম থেকে এই চার স্কুলছাত্র নিখোঁজের পর তাদের জীবিত উদ্ধারে পুলিশ মরিয়া হয়ে ওঠে। এই বিভাগের গোয়েন্দা সদস্যদেরও মাঠে নামানো হয়। এরই মধ্যে ওই গ্রামের নিকটবর্তী ইসাবিল নামক স্থান থেকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে গোপন সংবাদ আসে একাধিক শিশুর মৃতদেহ সন্ধ্যাদিঘীর পশ্চিম পাড়ের বালির স্তূপের গর্তে দেখা গেছে। এরই প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন ও সংশিষ্ট থানার ইউএনও, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরবর্তীতে বালু সরালে একের পর এক উঠে আসে নিখোঁজ ওই চার স্কুলছাত্রের ক্ষতবিক্ষত গলাকাটা মৃতদেহ। এসপি জয়দেব আরও জানান, প্রাথমিকভাবে এটি পরিকল্পিত হত্যা মনে হলেও তদন্ত সাপেক্ষে কারা, কেন এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে তা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। হত্যাকারীদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে আটকের চেষ্টা চলবে। ওসি মোশারফ জানান, এই সকল মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরের পর হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ মিজানুর রহমান এমন নির্মম ঘটনাটিকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত হত্যাকা- হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি নিষ্পাপ শিশু হত্যার মতো জঘন্য অপকর্মে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই হত্যাকারীদের ধরিয়ে দিতে পারলে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। এ সময় তার সাথে ছিলেন এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র, এএসপি হেডকোয়ার্টার মাসুদুর রহমান মনিরসহ পুলিশ ও শ্রীমঙ্গল র‌্যাব-৯ এর কর্মকর্তারা। এদিকে হত্যাকা-ের শিকার স্কুলছাত্র মনিরের বাবা আব্দাল মিয়া মিডিয়াকর্মীদের জানান, এই হত্যাকা-ের নেপথ্যে রয়েছে একই গ্রামের প্রতিবেশী আব্দুল হাই ও সাঙ্গোপাঙ্গদের হাত। প্রায় মাসখানেক আগে বড়ই গাছের ডালকাটা নিয়ে নাকি তার সাথে হাই গংয়ের সংঘর্ষ হয়। এরই প্রতিশোধ নিতে গত শুক্রবার বিকেলে জনৈক বাচ্চু মিয়ার সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় করে তার ছেলেসহ চার শিশুকে অন্যত্র তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই দিনই স্থানীয় পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানালেও তাতে উদাসীন ছিল তারা। আর এ জন্যই তাদের সন্তানদের হারাতে হয়েছে। তারা এই হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও সকলের ফাঁসি দাবি করেন। এদিকে নিখোঁজ চার ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধারের পর সংশিষ্ট এলাকা ও বাহুবল উপজেলার সর্বত্রসহ গোটা জেলায় অপহরণ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ভয় ও উৎকণ্ঠা। গত শুক্রবার বিকেলে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম থেকে ওই চার স্কুলছাত্র নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে আত্মীয়-স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান না পেয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় নিখোঁজ ছাত্র শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া জিডি করেন।
×